চিলিং হ্যাম দুর্গে আতঙ্ক

লেখক: অরুণ কুমার বিশ্বাস

বিষয়: বিবিধ

৩০০.০০ টাকা ২০% ছাড় ৩৭৫.০০ টাকা

বইয়ের বিবরণ

আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

এই লেখকের আরও বই
এই বিষয়ে আরও বই
আলোচনা ও রেটিং
৫(১)
  • (১)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
আলোচনা/মন্তব্য লিখুন :

আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন

Shekhar Bala

২৭ Feb, ২০২৩ - ২:১৭ AM

"সত্যি, বড় আজব শহর লন্ডন। এই শহরে এসেছে সুমন এখনও মাস পেরোয়নি। এরই মধ্যে বাড়িওয়ালার নোটিশ- মিসেস ম্যালথাম কোনোরকম রাখঢাক না করে সোজা জানিয়ে দিয়েছে, বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে তোমাকে রুম ছাড়তে হবে। কোথায় যাবে জানি না।" উপন্যাসের শুরুটা চমকপ্রদ। বিখ্যাত লেখকদের লেখায়ও এ গুণটি দেখা যায়। পাঠক কিছু বুঝে ওঠার আগেই বইয়ের কাহিনীতে মগ্ন হতে বাধ্য। যেভাবে চড়াই উৎড়াইয়ের মাধ্যমে গল্পের প্লট এগিয়ে গেছে তা শিহরণ জাগানিয়া। পাঠকের মনোযোগ অন্যদিকে কনভার্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এরপরে সুমন কী করেছে, তার কী বাড়িটা সত্যি ছেড়ে দিতে হয়েছে নাকি ম্যালথাম তার ভুল বুঝতে পেরে সরি সুমন বলে থেকে যেতে বলেছে! এরকম এক রহস্যের মধ্যে শুরুতেই পাঠক আটকে যাবে। এরপর পড়তে পড়তে সামনে এগিয়ে যাবে আর জড়িয়ে যাবে ক্রমশ নতুন নতুন রহস্যে। এভাবে পাঠকের সামনে এসে হাজির হবে রহস্যময় পঞ্চাশোর্ধ চরিত্র ডেভিড মারটন। এরপর আসবে নেপালি ছাত্র সায়ান, কিডন্যাপ হতে বেঁচে যাওয়া এমেল এবং এমেলের বন্ধু মাইক। এই চার তরুণ তুর্কীকে নিয়ে উপন্যাসের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে আর রচিত হয়েছে রহস্যের জাল। এইসব রহস্য থেকে বের হবার কোনো ফুরসত নেই যেনো পাঠকের। না, মিসেস ম্যালথামের মনে বাঙালি মায়েদের মত অত দয়ামায়া ছিলো না। সত্যি সত্যি সুমনকে বাসা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। বাসার খোঁজে পিকাডেলি লাইনে উঠে টিউবে বসে সাত পাঁচ কত কিছু ভাবছে। তার পাশেই একজন গভীর মনোযোগে বিনে পয়সার পত্রিকা পড়ছে। আর সুমন আড়চোখে দেখছে ঘর ভাড়ার বিজ্ঞাপনটি। এতেই হয়তো বিষয়টি ধরে ফেলেছেন ভদ্রলোক। সুমনকে জিজ্ঞেস করছে, তোমার কী রুম দরকার। ও ইয়েস বলে সুমনও ভদ্রলোকের সাথে নেমে পড়লেন। পাঠক, ইনি সেই ডেভিড মারটন। আশ্চর্য রহস্যময় এক চরিত্র। সুমন মারটনকে ফলো করছে কিন্তু সুমন কিছুই বুঝতে পারছে না। তাই জিজ্ঞেস করছে- "ডেভিড, আমার সত্যি একটা রুম দরকার। আজকের পরে আমার থাকার কোনো জায়গা নেই। বড় করুণ শোনাল সুমনের কন্ঠ।" ডেভিড মারটন তখন তাকে বললেন, "ডোন্ট ওয়রি। তোমার ঘর চাই আমার তোমাকে চাই।" অনেক ঘুরে তারা একটা রেস্টুরেন্টে খাবারের সমারোহ নিয়ে বসল। কিন্তু সুমন অনেক চিন্তিত। ঠিকমত খেতে পারছে না। বিষয়টা ডেভিড ধরতে পেরে বলল, "তুমি বুদ্ধিমান কিন্তু কৌতূহলটা মাত্রা ছাড়া। জানো তো ভাবুকদের দিয়ে কিচ্ছু হয়না। ডোন্ট বি সো কিউরিয়াস। বিপদ হতে পারে।" বিপদ হতে পারে! কেন কিসের বিপদ! পাঠক বারবার মুখোমুখি হবে এরকম অদ্ভুত রহস্যের। আর উপন্যাসের কাহিনিও এগিয়ে যাবে তড়তড় করে। রহস্যের বেড়াজাল থেকে সুমনের যেমন নিস্তার নেই পাঠকের দশাও হবে তেমনি। যাই হোক একসময় সুমন বাসার ভাড়া জানতে চাইলে ডেভিড বলে নো রেন্ট! আড়াই তলার বাসায় আধা তলায় তুমি থাকবে। কিচেনে চাল ডাল মজুত আছে ছয় মাস কেটে যাবে। দিনের আলোয় সেখানে যাওয়া বারণ। আগামীকাল সন্ধ্যা ৭ টায় যাওয়ার কথা বলে চোখের পলকে হাওয়ায় মিলিয়ে যায় ডেভিড। পরদিন যথাসময়ে সুমন এসে পৌঁছায়। তার আগে ম্যালথাসের সংগে এক ভয়ানক কান্ড করে আসে। ডেভিডও আসে। গাড়িতে করে নিয়ে আসে বাড়িতে। সুমনকে রেখে তার ফোন নাম্বার নিয়ে এবং চাবি না দিয়ে চলে যায় আর সাবধান করে পুলিশকে(৯৯৯) ফোন না করতে তাহলে বিপদ হতে পারে। রহস্য! রহস্য!! রহস্যের শিরোমনি। ভাড়া লাগবে না, খাবার মজুদ আছে, শুধু হাফ তলা, দিনে নয় রাতে প্রবেশ! পুলিশকে ফোন নয়। বাসার চাবি নয়। সুমন কী কোন কুল কিনারা করতে পারবে এই সব রহস্যের। রাতে নানা রকমের ভুত পেত্নীর কথা তার মাথায় আসে আর ভয়ে কু্ঁচকে যায়। নানা রকম ভুতুড়ে শব্দ কানে আসে। সিধান্ত নেয় ফ্রী বাসায় আর নয় অমনি ডেভিডের ফোন আসে। অবশেষে চাবির হদিশ পাওয়া যায় কিন্তু সে আরেক রহস্য। অনেক কষ্টে সে রহস্যের জট খুললে ডেভিড খুশি হয়। পরেরদিন সে সংগী করে নিয়ে আসে তার মতই অসহায় বিপদাপন্ন নেপালি ছাত্র সায়ানকে। কিন্ত ডেভিড কীভাবে যেনো তা জেনে যায়। রাতের বেলা এই বাড়িতে ঘটতে থাকে অলৌকিক সব শিহরণ জাগানিয়া ঘটনা। একদিন রাতে তারা উদ্ধার করে মাফিয়াদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া স্প্যানিশ কন্যা এমেলকে। যথারীতি এ খবরও ডেভিড জেনে যায়। সময় যত গড়ায় বইয়ের রহস্য যেনো তত বাড়তে থাকে। এ রহস্যের যেনো শেষ নেই। শেষ হইয়াও হইলো না শেষ! এরই মধ্যে সুমন ও সায়ানের সাথে বেশ বন্ধুত্ব হয় এমেলের। তারা বদলা নিতে চায় এমেলের এনিমিদের বিরুদ্ধে। তার আগে অবশ্য বদলে যায় এমেল। ঘটতে থাকে নাটকীয় সব ঘটনা। একদিন রেলস্টেশনে আক্রান্ত হয় এমেল। সুমন সে যাত্রায় তাকে বাঁচায়। প্রতিবেশি বুড়ির ভেপসা গাড়িতে চড়ে রাতের বেলা রেকি করতে বের হয় মাফিয়াদের আস্তানা। সুমন মারাত্মকভাবে জখম হয়। অল্পের জন্য তার জীবন হাতে নিয়ে ফিরে আসে সে যাত্রায়। কিছুদিন পরে ডেভিডের ফোন আসে। চটজলদি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার নির্দেশ। আজ রাতটুকু বাড়িতে নয়। ওরা হতবাক। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে দ্রুতই বেরিয়ে যায়। কিন্তু সুমন তার ব্যাগে ডেবিট কার্ড খুঁজে পায়না। এখন উপায়? সুমনের বুদ্ধিতে কানা খোঁড়ার অভিনয় করে বিনা পয়সায় না হয় বাসে চড়া গেলো কিন্তু রাতের থাকা আর খাবার? এবার বুদ্ধিটা এলো সায়ানের পেট থেকে। সে এক আশ্চর্য ঘটনা। রহস্যটা গচ্ছিত থাক পাঠকের জন্য!! পরদিন তারা ডেভিডের টেক্সট পেয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়িটায় ফিরে আসে। হয়তো সেই সাথে ফিরে আসে বিপদের হাতছানি। ভোররাতে গোঁ গোঁ শব্দ করে আসে এক গাড়ি। জানালার শার্শিতে ছুড়ে মারে এক ধাতব বাক্স। যার ভিতরে থাকে একটা আংটি আর ভয়ংকর কিছু একটা। যা দেখে সায়ান লুটিয়ে পড়ে দরজায়। পরদিন সায়ানের বাজারের ব্যাগের সাথে ফ্রী হিসেবে পায় এক ভয়ানক হুমকি। "মরতে চাও! সবুর করো আমরা আসছি। সিএইচ কাসলে দেখা হবে।" ওদের দুশ্চিন্তায় সময় কাটে। এরই ফাঁকে আরো টেনশন বাড়াতে আসে ডেভিডের টেক্সট। তিনি মাফিয়াদের হাতে বন্দী। নিশ্চয়ই তাকে অনেক টর্চার করছে। বসে থেকে সময় নষ্ট করতে চায় না সুমন। তিনি তাদের বিপদের বন্ধু, তাকে উদ্ধার করতে হবে কিন্তু কীভাবে?? এমেলের এক সাহসী বন্ধু মাইককে এ যাত্রায় সুমনদের সংগে অংশ নেয়। চার বন্ধু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে লন্ডনের উপকণ্ঠে কেন্ট সীমান্তে চিলিংহ্যাম দুর্গের ভূগর্ভস্থ কক্ষে সর্তকতার সহিত ঢুকে পড়ে। কুখ্যাত ড্রাগ মাফিয়া কেভিন ও'নেইল জরুরি সভায় ব্যস্ত মিস এলিটা ও ম্যাক্সমুলারের সাথে। ডেভিডকে তারা কী করবে? শ্যুট নাকি ক্ষুধার্ত কুকুরের খাবার ! নিকষ কালো অন্ধকার। বেজমেন্টে ভগ্নপ্রায়। কাঠের সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় সায়ান আর এমেল। ম্যাজিক নাইফ কিংবা ক্লোরােফর্ম টিউব কোনাে কিছুই কাজে আসছে না ঠিকমত। কেভিনের লােক ওদের ধরে নির্যাতন করছে। সুমন আর মাইকও বসে নেই। ডেভিডকে বাঁচাতে হবে এই ভাবনা থেকে প্রায় মেরেই ফেলতে চেয়েছিল এলিটাকে। শেষ পর্যন্ত তারা কী উদ্ধার করতে পেরেছিল ডেভিডকে? রুদ্ধশ্বাস, শ্বাসরুদ্ধকর টানটান উত্তেজনায় ঠাসা এক রহস্য উপন্যাস। বইটির ভাষা সহজ সরল সাবলীল। কিছু রহস্য শেষ পর্যন্ত অমীমাংসিত থেকে গেলো। পাঠক হিসেবে এজন্য আমার আফসোস থেকে গেলো। যেমন- রাতের অলৌকিক ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া গেলো না। সুমনদের যখনই ডেভিড মারটনকে প্রয়োজন তখনই তার ফোন হাজির। উপন্যাসের শেষটা খুব তড়িঘড়ি হল। এত সহজে সুমনদের ধরা পড়ার ঘটনা না দেখিয়ে আরো অ্যাডভেনঞ্চার দেখানো যেতে পারত। হতে পারত সুমনরা মাফিয়াদের কয়েকটাকে চিৎপটাং করে বেঁধে রেখেছে! সেক্ষেত্রে লন্ডন পুলিশের আগমন আরো বিলম্বে হতে পারত। ভাষা ভিন্ন, দেশ ভিন্ন, কৃষ্টি-কালচার-সংস্কৃতি ভিন্ন, ধর্ম ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও মানুষে মানুষে যে বন্ধুত্ব হওয়া সম্ভব এ কথাটি লেখক জোর গলায় বলতে পেরেছেন। শেষ পর্যন্ত বন্ধুত্বের জয় হয়েছে, ভালোবাসার জয় হয়েছে, দেশপ্রেমের জয় হয়েছে। #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা