‘ওই দুর্ভিক্ষের কালে নেমন্তন্ন কি গমের গরম রুটি খাওয়ার ভাগ্য রোজ হয়? ঈদগা মাঠে লঙ্গরখানার ভোজে একবার সে কলার পাত পেতে বসেছিল। ভাপ ওড়ানো হলুদ ঢলঢলে খিচুড়ি। পরিবেশনকারী ছিলেন মজিবরদা। তার পাতে খিচুড়ি দিতে গিয়েই চট করে হাতা তুলে নেন তিনি, সিদ্দিক ডাক্তারের ব্যাটা বলে তাকে চিনতে পারেন, ধমক দিয়ে ওঠেন, ওঠ! ভুখা মানুষের লঙ্গর! তুই ক্যানে হেথায়? বাড়ি যা!’
—সৈয়দ শামসুল হক
বইয়ের বিবরণ
সৈয়দ শামসুল হকের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিকথা। কী বিচিত্র সেই স্মৃতির রং। তেতাল্লিশের মন্বন্তরের সময় থেকে শুরু করে শেষ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি এবং পরাধীন ভারত যে স্বাধীন হবে সেই আবহের সূচনালগ্নের ভেতর দিয়ে। কুড়িগ্রামের মতো মফস্বল শহর, তার জনজীবন, ধরলা নদী, তার উৎসব পার্বণ, জনজীবনের সঙ্গে বাদশার—সৈয়দ হকের ডাকনাম—গভীর সখ্য, পাঠককে থেকে থেকেই নিয়ে যাবে সেই কালপর্বটিতে, যা ভুলবার নয়, চিরকাল মনে রাখবার।
- শিরোনাম হে বৃদ্ধ সময়
- লেখক সৈয়দ শামসুল হক
- প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন
- আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৯২৪০২৬৬
- দেশ বাংলাদেশ
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
সৈয়দ শামসুল হক
জন্ম ২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫, কুড়িগ্রাম। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, কাব্যনাট্য ও প্রবন্ধ মিলে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ প্রায় দুই শ। আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক, জেবুন্নেসা-মাহবুবউল্লাহ্ স্বর্ণপদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন। মৃত্যু ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
Shotabdi Bhattacharjee
০৪ Feb, ২০২৩ - ১১:২৬ AM
Time you old gipsy man, Will you not stay, Put up your caravan Just for one day? -Ralph Hodgson লেখকের মতো আমিও এই চারটা ছত্র দিয়েই শুরু করছি আমার লেখাটি। সৈয়দ হকের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিকথা 'হে বৃদ্ধ সময়।' ছোট্ট বইটায় একটা মধুমাখা ঘ্রাণ আছে, যে ঘ্রাণটা অতীতের কথা সকলকেই মনে করিয়ে দিতে পারে। কুড়িগ্রামে শৈশব কাটানো সৈয়দ হকের বাবা ছিলেন হোমিও চিকিৎসক। বাবার স্বভাবই তিনি পেয়েছিলেন, সেই স্বভাবটাই, বাউণ্ডুলে বলা যায় কী? নিজ বাড়িতেও নিজেকে অতিথি ভাবতেন সৈয়দ হক। ভাবতেন কদিনের জন্য এসেছেন, কদিন পরেই চলে যাবেন দূরদেশে, কোন অচেনা নগরে একাকী ঘুরে বেড়াবেন, দেখবেন পৃথিবীর সবচাইতে আশ্চর্য সুন্দর কবিতা- মানুষ। গোয়েন্দা গল্প পড়ে পড়ে অ্যাডভেঞ্চার এর শখ কার না আসে ছেলেবেলায়? একবার রৌহাতে নানাবাড়ি বেড়ানোর সময় জাফরগঞ্জ থেকে রৌহা পর্যন্ত রাস্তার নিশান রাখার জন্য ছোটভাই আর তিনি মিলে খবরের কাগজ ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলে গিয়েছিলেন চিহ্ন, যে চিহ্ন ধরে পরদিন ফিরে এসেছিলেন জাফরগঞ্জে, এক পাগলাটে নানার সাথে দেখা করতে, যে নানার ছিল নিজস্ব একটা উপাসনাঘর, যেখানে কোরআন শরীফ, যিশু খ্রিস্ট আর মা দূর্গা থাকতেন পাশাপাশি আর নানা নিজে ঘুমাতেন মাথার নিচে হাত ভাঁজ করে বালিশ ছাড়া, যেভাবে ঘুমাতেন ভগবান বুদ্ধ। লেখকের এক মেথর বন্ধু ছিল যুধিষ্ঠির, যে তাঁকে লাশকাটা ঘরের নির্জনতা আর রহস্যময়তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল আর ছিল বিপিন নামের এক বন্ধু যার মা ছিলেন রূপোপজীবিনী। অথচ অন্তরে চিরন্তন একটা মাতৃমূর্তি খোদাই করা ছিল যার। যুদ্ধের মরসুমে রেশনের গন্ধ চাল এর ফাঁকে হঠাৎ যেদিন পাশের বাসার দারোগা বৌ সুগন্ধী চালের ভাত খাবার দাওয়াত দেন, সেই সন্ধ্যাটা স্মরণীয় হয়ে থাকে তাই। সময় এক জিপসী বৃদ্ধের মতো বয়েই চলেছে, যার কাঁধে রয়েছে এক ছিদ্রযুক্ত থলে। যে থলেতে ধরা থাকে স্মৃতিসম্ভার আর ফুটো দিয়ে যা পড়ে যাই তা-ই বিস্মৃতি। #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা