মুজিব হাঁক দিলেন, ‘কামাল, আসো, আমাদের সেতার বাজায়ে শোনাও তো দেখি বাবা।’ এগিয়ে এল একজন ক্ষীণকায় বালক। গায়ে হাফ শার্ট, পরনে ঢোলা ট্রাউজার। বয়স ১২ কি ১৩। সে সেতার কোলে তুলে নিল। চাবি ঘুরিয়ে তার ঠিক করতে করতে আঙুল বোলাল তারে। দরজার কাছে এসে দাঁড়াল শেখ সাহেবের বড় মেয়ে হাসিনা। পরনে একটা হালকা বাদামি রঙের শাড়ি।
বইয়ের বিবরণ
বেগম মুজিব দাওয়াত করেছেন কয়েকজনকে। কিশোর কামাল সেতার বাজিয়ে শোনাল। শেখ মুজিব গান ধরলেন, ভাটিয়ালি গান। ধানমন্ডির বাসায় বসে কামরুদ্দীন আহমদ সে-স্মৃতি চারণ করছেন যখন, তখন শেখ মুজিব কারাগারে। ছয় দফা দেওয়ার পর আইয়ুব খান তাঁকে একটার পর একটা মামলা দিয়ে বন্দী করে রেখেছে। কিন্তু দেশের মানুষ রক্তের দামে ছয় দফা দাবিকে অপরিহার্য করে তুলছে। তাজউদ্দীন আহমদসহ নেতারা কারাগারে। মওলানা ভাসানী অসুস্থ, তাঁর জন্য খাবার রেঁধে নিয়ে যাচ্ছেন রেনু। ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে আক্দ হলো শেখ হাসিনার। ছোট্ট রাসেল কারাগারে আব্বার গলা ধরে বলতে লাগল, ‘আব্বা, বালি চলো।’
এক মধ্যরাতে সৈন্যরা মুজিবকে কারাগার থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে অজানার দিকে। মুজিব কারাগারের সামনের রাস্তা থেকে একমুঠো ধুলো নিয়ে বললেন, আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি। দেওয়া হলো আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। প্রতিবাদে জেগে উঠল সারা দেশ। মওলানা ভাসানী বললেন, খামোশ! ছাত্ররা দিল এগারো দফা। সমগ্র দেশ ফুঁসে উঠল অগ্নিগিরির মতো। মুজিব প্যারোলে মুক্ত হচ্ছেন—এ খবর শুনে সন্তানদের নিয়ে মুজিবের কাছে ছুটে গেলেন রেনু, ‘খবরদার, তুমি প্যারোলে মুক্তি নিবা না, জামিন নিবা না!’
- শিরোনাম এই পথে আলো জ্বেলে
- লেখক আনিসুল হক
- প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

আনিসুল হক
জন্ম ৪ মার্চ ১৯৬৫, নীলফামারী। শৈশব ও বাল্যকাল কেটেছে রংপুরে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনি, শিশুসাহিত্য—সাহিত্যের নানা শাখায় সক্রিয়। প্রথমা থেকে প্রকাশিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সে সময়ের মানুষদের নিয়ে তাঁর লেখা উপন্যাসের ছয়টি পর্ব—‘যারা ভোর এনেছিল’, ‘উষার দুয়ারে’, ‘আলো-আঁধারের যাত্রী’, ‘এই পথে আলো জ্বেলে’, ‘এখানে থেমো না’ ও ‘রক্তে আঁকা ভোর’। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার। তাঁর বই বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে দেশ-বিদেশে।