পৃথিবীর দিকে তিনি তাকিয়েছেন বিপন্ন বিস্ময়ে। জানিয়ে দিয়েছেন জ্যোৎস্নায় ঘাইহরিণীর ডাকে ছুটে আসা, শিকারির গুলিতে নিহত হরিণের মতো আমরা সবাই। হাজার হাজার পৃষ্ঠা লিখেছেন, প্রকাশ করেছেন সামান্য অংশ, বাকিটা তালাবন্দী করে রেখেছেন ট্রাঙ্কে। এই হলো জীবনানন্দ দাশ, এ উপন্যাসে তাঁর সঙ্গে নিবিড় বোঝাপড়ায় লিপ্ত হয়েছেন কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান।
বইয়ের বিবরণ
বরিশালের নদী, জোনাকি ছেড়ে তাঁকে পা রাখতে হয়েছে আদিম সাপের মতো ছড়িয়ে থাকা কলকাতার ট্রামলাইনের ওপর। পৃথিবীর দিকে তিনি তাকিয়েছেন বিপন্ন বিস্ময়ে। বলেছেন সন্ধ্যায় সব নদী ঘরে ফিরলে থাকে অন্ধকার এবং মুখোমুখি বসবার নাটোরের এক নারী। জানিয়ে দিয়েছেন জ্যোৎস্নায় ঘাই হরিণীর ডাকে ছুটে আসা, শিকারির গুলিতে নিহত হরিণের মতো আমরা সবাই। সস্তা বোর্ডিংয়ে উপার্জনহীনভাবে দিনের পর দিন কুঁচো চিংড়ি খেয়ে থেকেছেন। তবু পশ্চিমের মেঘে দেখেছেন সোনার সিংহ। পিঁপড়ার মতো গুটি গুটি অক্ষরে হাজার হাজার পৃষ্ঠা ভরেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ডায়েরি লিখে। সেগুলোর সামান্য শুধু জনসমক্ষে এনেছেন জাদুকরের রুমালের মতো, বাকিটা গোপনে তালাবন্দী করে রেখেছেন কালো ট্রাঙ্কে। বাংলা সাহিত্যের প্রহেলিকাময় এই মানুষ জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে এক নিবিড় বোঝাপড়ায় লিপ্ত হয়েছেন এ সময়ের শক্তিমান কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান তাঁর একজন কমলালেবু উপন্যাসে।
- শিরোনাম একজন কমলালেবু
- লেখক শাহাদুজ্জামান
- প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন
- আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৯১৪০৩৭২
- মুদ্রণ 2nd Edition, 2022
- বাঁধাই হার্ডকভার
- পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৪০
- দেশ বাংলাদেশ
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
শাহাদুজ্জামান
শাহাদুজ্জামানের জন্ম ১৯৬০ সালে ঢাকায়। পড়াশোনা মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। নেদারল্যান্ডসের আমস্টার্ডাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানে। পেশাগতভাবে তিনি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের গ্রামীণ স্বাস্থ্য প্রকল্পে, পরে অধ্যাপনা করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও অধ্যাপনায় যুক্ত আছেন। গল্প, উপন্যাস ছাড়াও প্রবন্ধ, অনুবাদ, ভ্রমণ ও গবেষণার ক্ষেত্রে রয়েছে তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। মাওলা ব্রাদার্স আয়োজিত কথাসাহিত্যের পাণ্ডুলিপি প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়ে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ কয়েকটি বিহ্বল গল্প (১৯৯৬)। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। Email : zshahaduz@gmail.com
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
Sk Sakib Hasan
১৫ Mar, ২০২৩ - ১০:১১ PM
বইয়ের নাম: একজন কমলালেবু। লেখকের নাম: শাহাদুজ্জামান। ধরন: উপন্যাস। প্রকাশনীর নাম: প্রথমা প্রকাশনী। প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা। মুদ্রিত মূল্য: চারশত পঞ্চাশ টাকা মাত্র। পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৪০। বরিশালের বিখ্যাত কবি 'কুসুমকুমারী দাশের' পুত্র কবি জীবনানন্দ দাশ। লেখক শাহাদুজ্জামানের তার লেখা 'একজন কমলালেবু' বইয়ের মাধ্যমে জীবনানন্দ দাশ ও তার রয়ে যাওয়া কথাগুলো প্রকাশ করেছেন। কবি জীবনানন্দ দাশ (১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯ - ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। কবি হয়ে ওঠার পেছনে তার মায়েরই অনুপ্রেরণাই বেশি। পেশা হিসেবে লেখালেখির পাশাপাশিও শিক্ষকতায় মনোনিবেশ করেছেন তিনি। তার মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন। তার প্রকাশিত গল্প উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি জীবনের নানা ধাপ, ঘাত-প্রতিঘাত কিংবা জীবনের প্রতিচছবি তুলে ধরেছেন। বেশিরভাগ সময় তার কাব্যে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ফুটে উঠেছে। তাই তার কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাকে রুপসী বাংলার কবি হিসেবে আখ্যায়িত করাও হয়েছে। 'আবার আসিব ফিরে' এই কবিতায় তিনি তার জন্মভূমি, জন্মস্থানের স্মৃতি এবং সেখানে ফিরে যাওয়ার ব্যাকুলতা প্রকাশ করেছেন। 'বুদ্ধদেব বসু' তাঁকে 'নির্জনতম কবি' বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে, অন্নদাশঙ্কর রায় তাকে ‘শুদ্ধতম কবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। জীবনানন্দ দাশ তার 'বনলতা সেন' কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয় এবং ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাডেমি পুরস্কার লাভ করে। জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- রুপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা ইত্যাদি রয়েছে। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্বে তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন যার একটিও তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে তাকে জীবনযাপন করতে হয়েছে। ----- জীবনানন্দের জন্ম আর মৃত্যুর মাঝখানের জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি রয়েছে এই ’কমলালেবুতে'। কবি জীবনানন্দ নিজেই মৃত্যুশয্যায় শুয়ে কমলালেবুর মাঝে জীবনের বিস্তারের কথা বলেছিলেন। আর জীবনের সাথে কমলালেবুর যোগ-স্থাপন কেবল তাঁর পক্ষেই সম্ভব ছিল। এই মানুষটি এক পর্যায়ে গিয়ে বুঝেছিলেন হয়তো সমকালীন প্রজন্ম তাঁর সাহিত্যকর্মকে কখনও বুঝবে না। সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথের মতো জীবন্ত কিংবদন্তির মনোযোগ আর্কষণ করতে পারেননি জীবনানন্দের কর্ম দিয়ে, বরং নানাভাবে তিনি সমালোচিত হয়েছেন। তবুও তিনি থেমে যান নি, লিখে গেছেন তার সৃষ্টকর্ম। কিন্তু তার সৃষ্টি প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেই, এই নির্মম পৃথিবী থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে, কেবল রয়ে গেছে তার সেই পান্ডুলিপিগুলো। যা আজকের প্রজন্মের কাছে প্রকাশিত। 'একজন কমলালেবু' বইয়ের শেষটা যেনো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মনে হয় হয়তো শেষটা যদি জানতে পারতাম তাহলে একটা কূল খুঁজে পেতাম হয়তো। একটা চাপা কষ্ট আর কৌতূহলের স্বাদ পাওয়া যায় শেষের দিকে। ধীরগতিসম্পন্ন যান ট্রামের ক্যাচারে আটকে মৃত্যু মোটেও স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া দুরুহের ব্যাপার। অনেকে ধারণা করেন, তাহলে জীবনানন্দ হয়তো আত্নহত্যা করেছিলেন। কিন্তু কেনো তিনি এই সিদ্ধান্ত নিবেন? তবে কি কোনো নির্মমতা, চেপে রাখা কষ্ট তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল? এই জায়গায় এসে প্রশ্ন থেকেই যায়, স্বয়ং জীবনানন্দ ছাড়া হয়তো কেউই এই উত্তর দিতে পারবেন না। পাঠপ্রতিক্রিয়া: বিংশ শতাব্দীর সময়েরই দুইজন কবি হলেন 'কাজী নজরুল ইসলাম' একাধারে, অন্যদিকে 'জীবনানন্দ দাশ'। একজন ছিলেন 'বিদ্রোহী কবি' আরেকজন ছিলেন 'রুপসী বাংলার কবি' হিসেবে বেশ আলোচিতও ছিলেন। সেই সময়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখনী যতটা সাড়া ফেলেছিল ততটা হয়তো জীবনানন্দ দাশের লেখার সর্ম্পকে মানুষ জানতোই নাহ। তার বেশিরভাগ লেখা প্রকাশিত হয় তার মৃত্যুর পরেই। লেখক 'একজন কমলালেবু' বইয়ে জীবনানন্দের জীবনকাহিনী, সেই সময়ে তার দারিদ্র্যের মধ্যে দিনাতিপাত ও তার জীবনসঙ্গী 'লাবণ্য গুপ্তের' সাথে সাংসারিক জীবনকথা তুলে ধরেছেন। 'একজন কমলালেবু' শুধু উপন্যাসই নয়, এটি কবির আত্নজীবনী, তার জীবনের বয়ে যাওয়া গল্প ও গবেষণা গ্রন্থ। যেখানে ফুটে উঠেছে তার কবি জীবন, ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সাংসারিক জীবন। কবি জীবনানন্দ দাশের সময়ে কবির প্রেম-ভালোবাসা, সামাজিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক, হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা, দুর্ভিক্ষ, দেশভাগ এবং জীবনসঙ্গীর সাথে সর্ম্পকের টানাপোড়নের সংমিশ্রণে লেখা বই 'একজন কমলালেবু', যা শাহাদুজ্জামানের এক অসাধারণ সৃষ্টি #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা
সৈয়দ রেজওয়ান সিদ্দিক
১৭ Feb, ২০২৩ - ১:০৮ PM
• বইয়ের নাম : একজন কমলালেবু • লেখক : শাহাদুজ্জামান • প্রকাশক : প্রথমা প্রকাশন • আইএসবিএন : 9789849140372 "আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে? কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে;" জীবনানন্দের শৈশব কেটেছে মায়ের লেখা কবিতা শুনতে শুনতে। শৈশব থেকেই দেখে এসেছে মা একাগ্রতার সাথে, সবচেয়ে ধ্যানমগ্নতায় যে কাজ করতেন সেটা হচ্ছে লেখা। তাই জেনে হোক বা না জেনে হোক, চেয়ে হোক বা না চেয়ে হোক অবচেতন মনে শৈশব থেকেই জীবনানন্দের মনে গেঁথে গেছে কাজ বলতে লেখাটায় মুখ্য। যখন মৃত্যুবরণ করলেন জীবনানন্দ দাশ, তার ঘর থেকে হঠাৎ তুতেনখামের পিরামিডের গুপ্তধনের মতো উদ্ধার হলো ট্রাঙ্ক ভর্তি অপ্রকাশিত গল্প, উপন্যাসের রাশি রাশি পাণ্ডুলিপি। বরিশালের নদী, জোনাকি ছেড়ে তাঁকে পা রাখতে হয়েছে আদিম সাপের মতো ছড়িয়ে থাকা কলকাতার ট্রামলাইনের ওপর। পৃথিবীর দিকে তিনি তাকিয়েছেন বিপন্ন বিস্ময়ে । বলেছেন সন্ধ্যায় সব নদী ঘরে ফিরলে থাকে অন্ধকার এবং মুখোমুখি বসবার নাটোরের এক নারী । জানিয়ে দিয়েছেন জ্যোৎস্নায় ঘাই হরিণীর ডাকে ছুটে আসা, শিকারির গুলিতে নিহত হরিণের মতো আমরা সবাই । সস্তা বোর্ডিংয়ে উপার্জনহীনভাবে দিনের পর দিন কুঁচো চিংড়ি খেয়ে থেকেছেন। তবু পশ্চিমের মেঘে দেখেছেন সোনার সিংহ। পিঁপড়ার মতো গুটি গুটি অক্ষরে হাজার হাজার পৃষ্ঠা ভরেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ডায়েরি লিখে। সেগুলোর সামান্য শুধু জনসমক্ষে এনেছেন জাদুকরের রুমালের মতো, বাকিটা গোপনে তালাবন্দী করে রেখেছেন কালো ট্রাঙ্কে । কিন্তু শৈশব থেকেই তুলে নিয়ে এসেছিলে শঙ্খমালার গল্প, শিশিরভেজা ধানখেতের পাশে এবং তার বিছানায় ছড়িয়ে থাকত কাঁচা লবঙ্গ, এলাচি, দারুচিনি। বাংলা সাহিত্যের প্রহেলিকাময় এই মানুষ জীবনানন্দ দাশের শৈশবে নাম ছিলো মিলু। মা হয়তো জানতো না, মিলুর অসমবয়সী বন্ধু আলী মামুদও হয়তো জানতো না -- শৈশবের এই মিলু হবে বাংলা ভাষার সবচেয়ে শক্তিশালী কবি। কাব্য, প্রজ্ঞা, রূপকথা, ঘাস, ফুল, পাখি মিলিয়ে মূর্ত-বিমূর্ত পৃথিবীর এক সাহাবী ও নিসঃঙ্গ কবি জীবনানন্দ। কুসুমকুমারী জীবনানন্দকে বললেন, ‘মিলু, এ বছর ব্রহ্মবাদীর নববর্ষের কবিতাটা তুই লিখবি ।' মায়ের অনুপ্রেরণায় জীবনানন্দের প্রথম কবিতা, তাঁর বিশ বছর বয়সে প্রকাশিত হলো। কবির সন্তান কবি হবে এমন কোনো গণিত নেই। রবীন্দ্রনাথের সন্তানেরা কেউ কবি নন। তারপর কবি নীরব রইলেন। দীর্ঘ সময় কবিতা লিখলেন না। এম.এ পাশ করে শিক্ষাকতা শুরু করলেন। বেতন পেয়ে মানি অর্ডারে টাকা পাঠান। যে জীবনে কবিতা নেই। দীর্ঘসময় পর দ্বিতীয় কবিতা লিখলেন রাজনীতি নিয়ে। তারপর লিখলেন "নীলিমা" নামের একটি কবিতা। কল্লোল নামের একটি নতুন কবিতায় পাঠালেন। প্রচুর প্রশংসা পেলেন। আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেল। তাঁর প্রথম কবিতা থেকে দ্বিতীয় কবিতার দূরত্ব পাঁচ বছর হলেও 'নীলিমা' প্রকাশের পর তাঁর কবিতা লেখায় জোয়ার সৃষ্টি হলো। তিনি একের পর এক কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করলেন। আপনাকে স্বাগত জানাই একজন কমলালেবুতে। পড়ুন এবং জানুন জীবনানন্দকে। শাহাদুজ্জামানের ভাষা, ভঙ্গি, বিষয়বস্তুর অভিনবত্ব সব দিক দিয়েই তার রচনায় এক দারুণ মিশেল। শাহাদুজ্জামানের ভাষা আগ্নেয়গিরির দুরন্ত তীব্র উত্তাপের মত। রৌদ্রোজ্জ্বল বিচিত্র রঙের কুণ্ঠাহীন প্রাচুর্য নিয়ে তিনি একজন জীবনানন্দকে আবিষ্কার করেছেন যেন লেখার মধ্যে। একজন জীবনানন্দকে যেহেতু লিখতে হবে অতএব তিনি জীবনানন্দের ভাষায় যেন উপস্থাপন করলেন। এই অংশটি অত্যন্ত চমৎকার। বইয়ের প্রচ্ছদ একদম পার্ফেক্ট মনে হয়েছে। জীবনানন্দের চোখ দুটো যেন বলছে, এই বই তাকে নিয়েই লেখা। 'একজন কমলালেবু' আমাদের প্রিয় কবি। আজ ১৭ ফেব্রয়ারি - কবির জন্মদিনে এ আমার ছোট নিবেদন। #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা
Edward Rony
০৪ Feb, ২০২৩ - ৩:০৭ PM
'একজন কমলালেবু' শাহাদুজ্জামানের উপন্যাস। আসলে এটা ঠিক উপন্যাস কি না, সেটা নিয়ে লেখন নিজেও দ্বিধান্বিত। কারন, গতানুগতিক উপন্যাসের আঙ্গিকে লেখা হয়নি এটি। লেখক প্রচলিত উপন্যাসের আঙ্গিককে ভেঙ্গে রচনা করেছেন অসামান্য এই আখ্যান। লেখকের মতে, গঠনগত দিক থেকে ‘একজন কমলালেবু’ সবচে যে সাহিত্যের শাখার কাছাকাছি যায়, তা উপন্যাস। তাই উপন্যাস নামেই ডাকা হয়। তবে, ‘একজন কমলালেবু’ কে ডকু-ফিকশন, সাহিত্য আলোচনা বা নন-ফিকশন কোন রচনা বললেও লেখকের কোন আপত্তি নেয়। শুদ্ধতম কবি 'জীবনানন্দ দাশ' এর জীবনী নির্ভর হলেও, লেখক শাহাদুজ্জামান তার ব্যক্তিগত ধ্যান ধারনাকে সুকৌশলে আর সুনিপুণ ভাবে সংযুক্ত করেছেন এই উপন্যাসে। দিয়েছেন কিছু কবিতার ব্যাখ্যা। সংযুক্ত করেছেন তৎকালীন অন্যদের আলোচনা, সমালোচনাও। জীবনানন্দ দাশের ব্যক্তি জীবনের সাথে দেখিয়েছেন কবিতার সংযোগ। কোথাও কোথাও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে লেখক সরাসরি 'জীবনানন্দ দাশ' এর উপন্যাস, প্রবন্ধ বা ছোটগল্পের কিছু কিছু অংশ সংযুক্ত করেছেন আর সেটাকে জীবনানন্দ দাশের ব্যক্তিগত জীবনের সাথে সংযুক্ত করেছেন। দেখিয়েছেন জীবনানন্দের সকল গদ্য রচনাই আসলে তাঁর আত্মজীবনীর রূপক অর্থ বহন করে। উপরিউক্ত বিষয়টাকে আলাদা করে, শুধু মাত্র 'জীবনানন্দ দাশ' এর জীবনী টুকু নিয়ে বলতে গেলে প্রথমে যে কথা আসে, সেটা হলো 'অবহেলিত কবি'-র আখ্যান। প্রতি পদে পদে অবহেলা, হেয়, ঠাট্টা উপহাসের শিকার হয়েছেন জীবনানন্দ। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, নজরুলও আছেন সেই দলে। তবুও সবটুকু নিরবে সহ্য করে গেছেন কবি। কখনো প্রতিবাদ করেন নি। তার ভেতরেই তিনি রচনা করেছেন তাঁর অমর 'সৃষ্টি'। জীবনানন্দের ব্যক্তিজীবনের অবহেলা, অর্থকষ্ট, ব্যর্থতার গল্প সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে 'একজন কমলালেবু' উপন্যাসে। ফুটে উঠেছে পারিবারিক জীবনের অস্বচ্ছলতার প্রভাব আর অশান্তির কথা। অন্যদৃষ্টিতে বলতে গেলে, জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন একজন ব্যর্থ কবি (যদিও কিছু কবিতা অনেকে পছন্দ করেছেন, জীবনের শেষের দিকে মিলেছে খানিকটা প্রশংসা। তবুও প্রচলিত সময়ের বিচারে তিনি ব্যর্থ বলে মনে হয়) ব্যর্থ প্রেমিক, ব্যর্থ স্বামী, ব্যর্থ পিতা। যে পিতার তাঁর সন্তানদের জন্য শুধু একটি কাজই করতো সেটা হচ্ছে পেন্সিল গুলো সূক্ষ্মভাবে কেটে দেওয়া। এসকল কিছু ফুটে উঠেছে উপন্যাসে। জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা আছে। আত্মহত্যা নাকি দুর্ঘটনা? এই নিয়ে সবাই দ্বিধান্বিত। তবে, উপন্যাসের লেখক তৃতীয় মাত্রা যুক্ত করেছেন! সেটা হচ্ছে 'হত্যা'! জীবনানন্দ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর দেখা গেল হাত-পায়ের নখ, জিহ্বা নীল হয়ে গেছে। এটা কিসের লক্ষণ ছিল? আমরা জানি না! জীবদ্দশায় জীবনানন্দ কখনো একদণ্ড সুখের মুখ দেখেন নি। বঞ্চিত হয়েছেন ভালোবাসা, বন্ধুত্ব থেকেও। তিনি অমর হয়েছেন মৃত্যুর পর। পেয়েছেন "রূপসী বাংলার কবি"-র তকমা। সৃষ্টির শেষ সময় পর্যন্ত তিনি থাকবেন বাংলার আকাশে বাতাসে। শঙ্খচিল, শালিক বা ঘাসের বেশে ফিরে আসবেন তিনি। শিশিরের মত ঝড়ে পরবেন কোনো শীতের সকালে। অথবা কোন রোগীর কেবিনে টসটসে একটি কমলালেবু হয়ে রয়ে যাবেন তিনি! কিন্তু কি লাভ এসবের? জীবদ্দশায় পেয়েছেন কি কবি? অবহেলা, বঞ্চনা, উপহাস আর দিনের পর দিন কুঁচো চিংড়ির ঘন্ট! #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা