পৃথিবীর দিকে তিনি তাকিয়েছেন বিপন্ন বিস্ময়ে। জানিয়ে দিয়েছেন জ্যোৎস্নায় ঘাইহরিণীর ডাকে ছুটে আসা, শিকারির গুলিতে নিহত হরিণের মতো আমরা সবাই। হাজার হাজার পৃষ্ঠা লিখেছেন, প্রকাশ করেছেন সামান্য অংশ, বাকিটা তালাবন্দী করে রেখেছেন ট্রাঙ্কে। এই হলো জীবনানন্দ দাশ, এ উপন্যাসে তাঁর সঙ্গে নিবিড় বোঝাপড়ায় লিপ্ত হয়েছেন কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান।
বইয়ের বিবরণ
বরিশালের নদী, জোনাকি ছেড়ে তাঁকে পা রাখতে হয়েছে আদিম সাপের মতো ছড়িয়ে থাকা কলকাতার ট্রামলাইনের ওপর। পৃথিবীর দিকে তিনি তাকিয়েছেন বিপন্ন বিস্ময়ে। বলেছেন সন্ধ্যায় সব নদী ঘরে ফিরলে থাকে অন্ধকার এবং মুখোমুখি বসবার নাটোরের এক নারী। জানিয়ে দিয়েছেন জ্যোৎস্নায় ঘাই হরিণীর ডাকে ছুটে আসা, শিকারির গুলিতে নিহত হরিণের মতো আমরা সবাই। সস্তা বোর্ডিংয়ে উপার্জনহীনভাবে দিনের পর দিন কুঁচো চিংড়ি খেয়ে থেকেছেন। তবু পশ্চিমের মেঘে দেখেছেন সোনার সিংহ। পিঁপড়ার মতো গুটি গুটি অক্ষরে হাজার হাজার পৃষ্ঠা ভরেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ডায়েরি লিখে। সেগুলোর সামান্য শুধু জনসমক্ষে এনেছেন জাদুকরের রুমালের মতো, বাকিটা গোপনে তালাবন্দী করে রেখেছেন কালো ট্রাঙ্কে। বাংলা সাহিত্যের প্রহেলিকাময় এই মানুষ জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে এক নিবিড় বোঝাপড়ায় লিপ্ত হয়েছেন এ সময়ের শক্তিমান কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান তাঁর একজন কমলালেবু উপন্যাসে।
- শিরোনাম একজন কমলালেবু
- লেখক শাহাদুজ্জামান
- প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন
- আইএসবিএন 9789849140372
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

শাহাদুজ্জামান
শাহাদুজ্জামানের জন্ম ১৯৬০ সালে ঢাকায়। পড়াশোনা মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। নেদারল্যান্ডসের আমস্টার্ডাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানে। পেশাগতভাবে তিনি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের গ্রামীণ স্বাস্থ্য প্রকল্পে, পরে অধ্যাপনা করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও অধ্যাপনায় যুক্ত আছেন। গল্প, উপন্যাস ছাড়াও প্রবন্ধ, অনুবাদ, ভ্রমণ ও গবেষণার ক্ষেত্রে রয়েছে তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। মাওলা ব্রাদার্স আয়োজিত কথাসাহিত্যের পাণ্ডুলিপি প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়ে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ কয়েকটি বিহ্বল গল্প (১৯৯৬)। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। Email : zshahaduz@gmail.com
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন

Edward Rony
০৪ Feb, ২০২৩ - ৩:০৭ PM
'একজন কমলালেবু' শাহাদুজ্জামানের উপন্যাস। আসলে এটা ঠিক উপন্যাস কি না, সেটা নিয়ে লেখন নিজেও দ্বিধান্বিত। কারন, গতানুগতিক উপন্যাসের আঙ্গিকে লেখা হয়নি এটি। লেখক প্রচলিত উপন্যাসের আঙ্গিককে ভেঙ্গে রচনা করেছেন অসামান্য এই আখ্যান। লেখকের মতে, গঠনগত দিক থেকে ‘একজন কমলালেবু’ সবচে যে সাহিত্যের শাখার কাছাকাছি যায়, তা উপন্যাস। তাই উপন্যাস নামেই ডাকা হয়। তবে, ‘একজন কমলালেবু’ কে ডকু-ফিকশন, সাহিত্য আলোচনা বা নন-ফিকশন কোন রচনা বললেও লেখকের কোন আপত্তি নেয়। শুদ্ধতম কবি 'জীবনানন্দ দাশ' এর জীবনী নির্ভর হলেও, লেখক শাহাদুজ্জামান তার ব্যক্তিগত ধ্যান ধারনাকে সুকৌশলে আর সুনিপুণ ভাবে সংযুক্ত করেছেন এই উপন্যাসে। দিয়েছেন কিছু কবিতার ব্যাখ্যা। সংযুক্ত করেছেন তৎকালীন অন্যদের আলোচনা, সমালোচনাও। জীবনানন্দ দাশের ব্যক্তি জীবনের সাথে দেখিয়েছেন কবিতার সংযোগ। কোথাও কোথাও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে লেখক সরাসরি 'জীবনানন্দ দাশ' এর উপন্যাস, প্রবন্ধ বা ছোটগল্পের কিছু কিছু অংশ সংযুক্ত করেছেন আর সেটাকে জীবনানন্দ দাশের ব্যক্তিগত জীবনের সাথে সংযুক্ত করেছেন। দেখিয়েছেন জীবনানন্দের সকল গদ্য রচনাই আসলে তাঁর আত্মজীবনীর রূপক অর্থ বহন করে। উপরিউক্ত বিষয়টাকে আলাদা করে, শুধু মাত্র 'জীবনানন্দ দাশ' এর জীবনী টুকু নিয়ে বলতে গেলে প্রথমে যে কথা আসে, সেটা হলো 'অবহেলিত কবি'-র আখ্যান। প্রতি পদে পদে অবহেলা, হেয়, ঠাট্টা উপহাসের শিকার হয়েছেন জীবনানন্দ। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, নজরুলও আছেন সেই দলে। তবুও সবটুকু নিরবে সহ্য করে গেছেন কবি। কখনো প্রতিবাদ করেন নি। তার ভেতরেই তিনি রচনা করেছেন তাঁর অমর 'সৃষ্টি'। জীবনানন্দের ব্যক্তিজীবনের অবহেলা, অর্থকষ্ট, ব্যর্থতার গল্প সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে 'একজন কমলালেবু' উপন্যাসে। ফুটে উঠেছে পারিবারিক জীবনের অস্বচ্ছলতার প্রভাব আর অশান্তির কথা। অন্যদৃষ্টিতে বলতে গেলে, জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন একজন ব্যর্থ কবি (যদিও কিছু কবিতা অনেকে পছন্দ করেছেন, জীবনের শেষের দিকে মিলেছে খানিকটা প্রশংসা। তবুও প্রচলিত সময়ের বিচারে তিনি ব্যর্থ বলে মনে হয়) ব্যর্থ প্রেমিক, ব্যর্থ স্বামী, ব্যর্থ পিতা। যে পিতার তাঁর সন্তানদের জন্য শুধু একটি কাজই করতো সেটা হচ্ছে পেন্সিল গুলো সূক্ষ্মভাবে কেটে দেওয়া। এসকল কিছু ফুটে উঠেছে উপন্যাসে। জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা আছে। আত্মহত্যা নাকি দুর্ঘটনা? এই নিয়ে সবাই দ্বিধান্বিত। তবে, উপন্যাসের লেখক তৃতীয় মাত্রা যুক্ত করেছেন! সেটা হচ্ছে 'হত্যা'! জীবনানন্দ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর দেখা গেল হাত-পায়ের নখ, জিহ্বা নীল হয়ে গেছে। এটা কিসের লক্ষণ ছিল? আমরা জানি না! জীবদ্দশায় জীবনানন্দ কখনো একদণ্ড সুখের মুখ দেখেন নি। বঞ্চিত হয়েছেন ভালোবাসা, বন্ধুত্ব থেকেও। তিনি অমর হয়েছেন মৃত্যুর পর। পেয়েছেন "রূপসী বাংলার কবি"-র তকমা। সৃষ্টির শেষ সময় পর্যন্ত তিনি থাকবেন বাংলার আকাশে বাতাসে। শঙ্খচিল, শালিক বা ঘাসের বেশে ফিরে আসবেন তিনি। শিশিরের মত ঝড়ে পরবেন কোনো শীতের সকালে। অথবা কোন রোগীর কেবিনে টসটসে একটি কমলালেবু হয়ে রয়ে যাবেন তিনি! কিন্তু কি লাভ এসবের? জীবদ্দশায় পেয়েছেন কি কবি? অবহেলা, বঞ্চনা, উপহাস আর দিনের পর দিন কুঁচো চিংড়ির ঘন্ট! #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা