আয়না প্রকাশের এতকাল পরও মনে হয়,
এ রকম একটি গ্রন্েথর প্রয়োজন আজও
সমাজে রয়ে গেছে।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
বইয়ের বিবরণ
আবুল মনসুর আহমদ এ বইয়ের গল্পগুলোর মধ্য দিয়ে আমাদের ধর্মীয় কুসংস্কার, রাজনৈতিক ভণ্ডামি ও সামাজিক জীবনের নানাবিধ মূঢ়তা নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন। গল্পগুলোর সব কটিতেই আপাত-কৌতুকের সঙ্গে সমাজের জন্য লেখকের দরদ ও দুঃখবোধ জড়িত। গল্পগুলো সম্পর্কে তিনি নিজেই লিখেছেন—এই হাসির পেছনে কান্না লুকানো আছে।
আবুল মনসুর আহমদ সমাজের সংস্কার চেয়েছেন। সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো দেখিয়েও দিয়েছেন তাঁর গল্পে। তাঁর রচনার একটা বড় গুণ হলো এই উদ্দেশ্যমূলকতা কখনো শিল্পকে ছাড়িয়ে যায়নি। অধিকাংশ গল্পে তিনি বাঙালি মুসলমান সমাজের ভেতরের কথা বলেছেন। এখানে তাঁর অভিজ্ঞতা ও শিল্পদৃষ্টির একটা চমৎকার মেলবন্ধন ঘটেছে। এ বইয়ের গল্পগুলোর পাঠ আজকের দিনেও পাঠকের জন্য স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।
- শিরোনাম আয়না
- লেখক আবুল মনসুর আহমদ
- প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন
- আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৯২৪০২২৮
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
আবুল মনসুর আহমদ
সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও রাজনীতি—তিন ক্ষেত্রেই আবুল মনসুর আহমদ (১৮৯৮-১৯৭৯) কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। দেশ বিভাগের আগেই সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় তাঁর সাফল্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ব্যঙ্গরচনায় তাঁর কুশলতাকে এ দেশে আজও কেউ অতিক্রম করতে পারেননি। রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও ছিলেন সক্রিয়। পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক রাজনীতির সূচনা থেকে প্রায় এক দশককাল সামনের সারিতে থেকে তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রথমে প্রাদেশিক এবং পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যঙ্গধর্মী রচনায় যেভাবে তিনি সামাজিক কুসংস্কার ও গোঁড়ামি, রাজনৈতিক ভণ্ডামি ইত্যাদিকে কশাঘাত করেছেন, তা আজও আমাদের মুগ্ধ করে। তাঁর অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে—ছোটগল্প: আয়না, ফুড কনফারেন্স, আসমানী পর্দা ; উপন্যাস: সত্যমিথ্যা, আবে হায়াত ; প্রবন্ধ-স্মৃতিকথা: আত্মকথা, শেরেবাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু, বেশী দামে কেনা কম দামে বেচা আমাদের স্বাধীনতা।
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
তানভীর কাফি
১৪ Mar, ২০২৩ - ১১:৩২ PM
আবুল মনসুর আহমদের একটি গুরুত্বপূর্ণ গল্পগ্রন্থ হচ্ছে 'আয়না'। প্রকাশের পর থেকে প্রায় নয় দশক ধরে যে বই সমাজের ভেতরকার মুখচ্ছবি দেখার দারুণ দর্পণ রূপে কাজ করে আসছে। আবুল মনসুর তাঁর প্রথম গল্পসংকলনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন সাতটি গল্প যেগুলো ১৯২৬ হতেই পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হতে শুরু করে। এই গল্পগুলোতে তিনি আমাদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের নানাবিধ মূঢ়তা নিয়ে রঙ্গ-ব্যঙ্গ করেছেন। আমাদের নানাবিধ সংকীর্ণতা, হীনমন্যতা, শঠতা ও অজ্ঞতা নিয়ে করা এই ব্যঙ্গের সাথে লেখকের গভীর দুঃখবোধ জড়িত। গল্পগুলো সম্পর্কে তিনি নিজেই জানিয়েছেন যে— 'এই হাসির পেছনে কান্না লুকানো আছে।' এই বইয়ের গল্পগুলোতে আমাদের ধর্মীয় কুসংস্কার, রাজনৈতিক শঠতা, সামাজিক জীবনের নানাবিধ অসঙ্গতিকে তিনি তাঁর সরস ঢঙে ও তাঁর স্বভাবসুলভ সাহসিকতার সাথে অকপটে লিখে গেছেন। তাঁর এই রসিকতা কিংবা ব্যঙ্গাত্মক বর্ণনার অন্তরালে সমাজের জন্য লেখকের পরম মমতা ও গভীর দুঃখবোধ সদা সক্রিয় ছিল। 'আয়না'-এর অধিকাংশ গল্পে তিনি বাঙালি মুসলমানের অন্দরের কথা শুনিয়েছেন। তবে একটি গল্পে তিনি প্রতিবেশী হিন্দু সমাজ নিয়েও বলেছেন। বাঙালি মুসলমানদের নিয়ে তাঁর গল্প রচনায় তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা ও শিল্পদৃষ্টির একটি চমৎকার সেতুবন্ধন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। লেখক হিসেবে তাঁর এই কৃতিত্ব প্রশংসনীয়। 'আয়না'য় তিনি আমাদের ধর্মীয় কুসংস্কার, রাজনৈতিক শঠতা ও সামাজিক ক্ষেত্রের নানাবিধ অসঙ্গতি নিয়ে তিনি ব্যঙ্গ করলেও আবুল মনসুরের আক্রমণের লক্ষ্য কোনো ব্যক্তি, ধর্ম বা সম্প্রদায় ছিল না। তাঁর বিদ্রোহ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। তাঁর শাণিত লেখনী সোচ্চার নানাবিধ ভণ্ডামি, শঠতা ও দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে, ধর্মীয় উগ্রতা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে। 'আয়না'–তে আছে মোট সাতটি ছোটগল্প। প্রতিটি গল্প ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিমায় লেখা হলেও এই ব্যঙ্গের পেছনে আবুল মনসুর আহমদের সমাজের জন্য পরম মমতা ও তার অধঃপতিত অবস্থার জন্য গভীর দুঃখবোধ সক্রিয়। আবুল মনসুর আহমদ এর সমাজ সংস্কারী চেতনা 'আয়না' -র অন্তর্গত গল্পগুলোতে ফুটে উঠেছে। তিনি এই গল্পগুলোতে প্রচুর রঙ্গ- ব্যঙ্গ করেছেন। এসবের আড়ালে তিনি পুরোনো, জীর্ণ ও অনুপযুক্ত কিন্তু পূজনীয় ইমারত গুলোকে ভেঙে নতুন, রঙিন ও মনোরম ইমারত গড়তে চেয়েছেন। অর্থাৎ চলমান সমাজ ব্যবস্থার নানা রকম অসঙ্গতি দূর করে একটি মানবিক, বৈষম্যমুক্ত, স্বাভাবিক ও সুন্দর সমাজব্যবস্থা গড়তে চেয়েছেন অর্থাৎ তার সমাজ সংস্কারক মনোবৃত্তি সক্রিয় ছিলো এসব গল্প- রচনার অন্তরালে। আবুল মনসুর আহমদ, তাঁর এই গ্রন্থের গল্পগুলোর মধ্য দিয়ে সমাজের সংস্কার প্রত্যাশা করেছেন, সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো যত্নের সাথে দেখিয়ে দিয়েছেন। তাঁর রচনার একটি অভিনব গুণ হচ্ছে তাঁর এই উদ্দেশ্যমূলকতা কখনো শিল্পকে অতিক্রম করেনি। বরং শিল্পমান অক্ষুণ্ন রেখে তিনি এই গল্পগুলো দক্ষতার সাথে রচনা করতে সক্ষম হয়েছেন। চলমান সমাজব্যবস্থায় নানাবিধ মূঢ়তা, তার অসঙ্গতি, তার স্থবিরতা, গতিহীনতা প্রভৃতি এক গভীর বেদনা ও দুঃখবোধের সঞ্চার করেছিল আবুল মনসুরের সংবেদনশীল মনে। তাই আমরা দেখতে পাই তার এই তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গের সাথে সমাজের জন্য তার পরম মমতা ও এক গভীর দুঃখবোধ আন্তরিকভাবে জড়িত আছে এই বইয়ের প্রতিটি গল্পে। আবুল মনসুর আহমদ, তাঁর এই তীক্ষ্ম ব্যঙ্গধর্মী গল্পগুলোর মধ্য দিয়ে ধর্মীয় কুসংস্কার, রাজনৈতিক শঠতা ও সামাজিক অসঙ্গতির কর্কশ কোপলে সজোরে চপেটাঘাত করেছেন। #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা