‘মাহজাবীন আবার সোফায় গিয়ে জোড়াসন হয়ে বসে।
আবার সে সিগারেট ধরায়। চন্দনা কার্পেটের ওপর, পায়ের কাছে বসে। মুখোমুখি হয়ে।
একের পর এক সিগারেট ধরাইতেছ?
হ্যাঁ, একটি দৌড়ের ভেতরে বর্তমানে আছি।
কী ব্যাপার? সঙ্গে একটি ভারী ব্যাগও দেখিতেছি।
কী আছে উহাতে?
ইয়াসমিনের কাপড়। পৌঁছাইয়া দিতে হইবে।
বুঝিলাম না।
ইয়াসমিন বাড়ি ছাড়িয়াছে। আজ কন্যা দেখিবার জন্য এক ষাঁড়ের আসিবার কথা! ইহা ব্যতীত পথ ছিল না।
আবার শিস দেয় চন্দনা। জিজ্ঞেস করে, বাড়ির পরিস্থিতি কী?
মাম কাঁদিতেছে। ড্যাডি কাঁদিতেছে। উহারা বুঝে না। উহারা বাঙালিই রহিয়া গেল।’
বইয়ের বিবরণ
মি. আলী সপরিবার লন্ডনপ্রবাসী। তাদের তিন মেয়ে। তারা ব্রিটেনে বড় হচ্ছে কিন্তু বাঙালি মা-বাবার নজরদারির জন্য তারা তাদের ব্রিটিশ বন্ধুদের মতো স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে না। যেহেতু মিনার বয়স ১৬ পেরিয়েছে, পুলিশও চাইলে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না, তাই সে এককাপড়ে বেরিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে এক পরিত্যক্ত বাড়িতে। বন্ধুরা সেখানে নেশা করে, রাস্তায় ছিনতাই করে আর জোড়ায় জোড়ায় মিলিত হয় শারীরিকভাবে। এ স্বাধীনতার আনন্দটুকু অনুমান করেছিল মিনা, কিন্তু এসব ব্রিটিশ বন্ধু যে শেষ পর্যন্ত হঠকারী, এশীয়দের মনে করে ‘বাদামি শুয়োর’ আর ‘বাদামি কুক্কুরী’—এটা বুঝতে মিনার দুই দিনও লাগে না। এর মধ্যেই, নেশা করে ঘুমের মধ্যে মিনা কখন তার কুমারীত্ব হারিয়েছে, টেরই পায়নি। সব বুঝতে পেরে সে হাজির হয় নিজেদের বাসার দরজায়, ‘মাম, আমি ঢাকা যাব।’ কিন্তু ফেরা কি এত সহজ? তখন আমরা হাহাকার শুনি মি. আলীর কণ্ঠে, ‘উহাদের কোনো স্বদেশ নাই।’
সৈয়দ শামসুল হক তাঁর অসামান্য ভাষায় লিখেছেন বালিকার চন্দ্রযান। এ উপন্যাসে শিকড়হীন উদ্বাস্ত্ত হৃদয়ের হাহাকার পাঠককে আপ্লুত করবে।
- শিরোনাম বালিকার চন্দ্রযান
- লেখক সৈয়দ শামসুল হক
- প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন
- আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৯২৭৪৩৮৪
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
সৈয়দ শামসুল হক
জন্ম ২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫, কুড়িগ্রাম। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, কাব্যনাট্য ও প্রবন্ধ মিলে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ প্রায় দুই শ। আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক, জেবুন্নেসা-মাহবুবউল্লাহ্ স্বর্ণপদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন। মৃত্যু ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬।