মুজিব ভাই বইটি আমি এক নিঃশ্বাসে পড়েছি। মনে হয়েছে, বইটি পড়ার সময় লেখক বন্ধুবর মূসার চেয়েও বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেয়েছি বেশি। তরুণ প্রজন্মের যেসব পাঠক বঙ্গবন্ধুকে ব্যক্তিগতভাবে দেখার সুযোগ পাননি, তাঁরাও বইটি পাঠের সময় বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য অনুভব করবেন। ছোট চৌবাচ্চার পানিতে যেমন সূর্যের মতো বিরাট গ্রহের প্রতিবিম্ব ধরে রাখা যায়, তেমনি এবিএম মূসার মুজিব ভাই নামের ছোট বইটিতে এক মহানায়কের বিশাল চরিত্রকেও তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে।
বইয়ের বিবরণ
একেবারে ঘরোয়া আটপৌরে ভাষায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের নানা দিক এই বইয়ে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে, এক কথায় যাকে বলা যায়, অতুলনীয়। একজন মানুষ যখন সাধারণ থেকে অসাধারণ বা সবিশেষ হয়ে ওঠেন, হয়ে ওঠেন ইতিহাসের মহত্তম ব্যক্তিত্ব, তখন তাঁর ঘরোয়া জীবন আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। লেখক এবিএম মূসা তাঁর টগবগে যুবা বয়স থেকে শেখ মুজিবকে দেখেছেন। কালক্রমে তাঁর ‘মুজিব ভাই’য়ের নিবিড় সান্নিধ্যে এসেছেন। ফলে তাঁর পক্ষে বঙ্গবন্ধুর ঘরোয়া জীবনের এমন সব দিক এই বইয়ে তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে, যা এত দিন আমাদের জানার বাইরে ছিল। শুধু বঙ্গবন্ধু কেন, তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সর্বাত্মক প্রেরণাদাত্রী সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেসা মুজিব এবং তাঁর তিন পুত্রের কথাও তিনি তুলে ধরেছেন, পাঠককে যা মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে। এ বই নিছক বঙ্গবন্ধুর ঘরোয়া জীবনের কথা নয়, হয়ে উঠেছে একটি নির্দিষ্ট কালপরিসরের আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনেরও অমূল্য দলিল।
- শিরোনাম মুজিব ভাই
- লেখক এবিএম মূসা
- প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন
- আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৯০০৩৯৬০
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
এবিএম মূসা
জন্ম ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১, ফেনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (১৯৫০) এবং লন্ডনের কমনওয়েলথ প্রেস ইনস্টিটিউট থেকে সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা। বাংলাদেশ টেলিভিশন করপোরেশনের প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পাকিস্তান অবজারভার-এর বার্তা সম্পাদক, মর্নিং নিউজ ওযুগান্তর-এর সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রধান সম্পাদক ছিলেন। একাধিকবার জাতীয় প্রেসক্লাব এবং সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত। বিবিসি, লন্ডনের সানডে টাইমস-সহ বিদেশি গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালে রণাঙ্গন থেকে খবর পাঠাতেন। একুশে পদক ও জেনেভার ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট পুরস্কারে ভূষিত। বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের (১৯৭৩) সদস্য। ২০১২ সালে বেরিয়েছে তাঁর বই মুজিব ভাই। ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগেই তিনি শেষ করে যান তাঁর এই আত্মজীবনীর কাজ।
প্যাকেজ: বঙ্গবন্ধু -১
এবিএম মূসা, মতিউর রহমান, মিজানুর রহমান খান, নুরুল ইসলাম
১,৩১২.৫০ টাকা ১,৭৫০.০০ টাকা
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
Md. Yaqub Ali
২১ Feb, ২০২৩ - ৬:২৮ AM
বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের বই লেখা হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে কিন্তু এবিএম মুসার লেখা দু’মলাটের চটি এই বইটা বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের এমনসব দিকে আলোকপাত করেছে যেগুলো সাধারণত কেউ আলোচনায় আনেন না সচরাচর। এই বইটার ফ্ল্যাপে লেখা আছে “একেবারে ঘরোয়া আটপৌরে ভাষায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের নানা দিক এই বইয়ে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে, এক কথায় যাকে বলা যায় অতুলনীয়।” ছোট এই বইটা অনুচ্ছেদ আকারে লেখা আরও সহজ করে বললে, বিভিন্ন সময়ের লেখকের লেখা কলামের বই আকারে আত্মপ্রকাশ। বইয়ের শুরুতেই আছে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর বিশাল ভূমিকা। এরপর আছে লেখকের কথা “আমার কথা” শিরোনামে তারপর আছে এগারোটি অনুচ্ছেদ এছাড়াও আছে কিছু আলোকচিত্র। লেখকের দুই দশক ধরে বিভিন্ন দৈনিক ও সাময়িকীতে প্রকাশিত কতিপয় কলাম, প্রবন্ধ না নিবন্ধের সংকলন এই বইটি। বন্ধুবন্ধুকে নিয়ে লিখতে যেয়ে সবাই “জনগণের অবিসংবাদিত নেতা”, “সাহসী এক সিংহপুরুষ” এসব বিষয়ে লিখেছেন কিন্তু এর বাইরেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন “শ্যাখ সাহেব”, “শ্যাখের পোলা” আবার কারও কাছে শুধু “মুজিব ভাই” বা “নেতা”। লেখক বঙ্গবন্ধুকে সম্বোধন করতেন মুজিব ভাই নাম তাই এই বইটিতে বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য গুণাবলীর চেয়ে লেখকের দেখা মুজিব ভাইয়ের ব্যক্তিত্বের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। লেখক শুরু করেছেন একটা লাইন দিয়ে “হিমালয়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে ওপরে তাকিয়ে সর্বোচ্চ পর্বতমালার উচ্চতা মাপা যায় না।…তবে গজ-ফিতা দিয়ে হিমালয়-সদৃশ শেখ মুজিবুর রহমানের শারীরিক উচ্চতা অনুমান করা গেলেও তাঁর ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা অথবা হৃদয়ের বিশাল ব্যাপ্তি কোন মানদন্ড দিয়ে মাপা অথবা দাড়িপাল্লায় ওজন করা সম্ভব ছিল না।” আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, ফয়েজ আহমদ এবং লেখককে বঙ্গবন্ধু একসঙ্গে দেখলেই বলতেন, “এই রে সারছে! আপদ, বিপদ আর মুসিবত একসঙ্গে। কী জানি কী ফ্যাসাদে ফেলবে।” বঙ্গবন্ধু পরিচিত অপরিচিত সকলের জন্যই ছিলেন এমন দিলখোলা। লেখকের ভাষায়, “সত্যিই বঙ্গবন্ধুকে যারা বুঝেছিল, শুধু তারাই বাঙালিকে চিনেছিল, বাংলাদেশকে ভালোবাসতে পেরেছিল।” অনেকেই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রশাসনিক দক্ষতা বা দূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কিন্তু লেখক কয়েকটা উদাহরণের মাধ্যমে বুঝতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু ঠিক কতখানি দক্ষ ছিলেন।