পুতুলনাচের ইতিকথা

লেখক: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

বিষয়: বিবিধ

১৬৫.০০ টাকা ২৫% ছাড় ২২০.০০ টাকা

বইয়ের বিবরণ

আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

এই লেখকের আরও বই
এই বিষয়ে আরও বই
আলোচনা ও রেটিং
৫(১)
  • (১)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
আলোচনা/মন্তব্য লিখুন :

আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন

Mostakim Ahmed

১১ Mar, ২০২৩ - ৯:৫৬ AM

একটা পুতুল, মাটির হোক বা কাঠের হোক, পুতুলটা রঙিন কাপড়ে মোড়িয়ে সাজালে-গোছালে যেমন প্রাণবন্ত মনে হয়, তেমনি সাদা কাপড়ে মোড়ালে সেটাকে আর প্রাণবন্ত মনে হয়না, মনে হয় মৃত লাশ। এইখানে পুতুলের দুটো রূপ, পুতুল শুধু এক। ঠিক এইভাবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় "পুতুলনাচের ইতিকথা"য় তাঁর কথাগুলোকে এক সাথে দুটো রূপ দিলেন; এক, আবেগ ও বাস্তবতা, দুই, সত্য ও সরলতা। কিন্তু প্লট এক। তবে তার আশপাশ এমন ভাবে গেঁথে নিলেন যেন; এটা একটা ঘর, শুধু ঘর নয়, কুঁড়েঘর, খড়ের ছাউনির ছিদ্র পথে যেমন বৃষ্টি আসে, তেমনি আসে চাঁদের আলো। ঘর টা শুধু কষ্ট ও ভালবাসায় ভরপুর না, ভরপুর এর বাহ্যিক বৈচিত্র্যতায়ও। যেমন, ঘরের বারান্দায় ভাঙ্গা টবে তুলসি গাছ, তুলসিটা যেমন ধর্মে প্রয়োজন তেমনি কর্মেও প্রয়োজন। এইভাবে একটা জীবন্ত পরিবেশ তুলে দিলেন পাঠকের হাতে। প্রতিটা লাইনে জীবনের সুক্ষ্ম অনুভূতিগুলো এমন ভাবে মেলে ধরেছেন যে, তা আজ অব্দি অজানাই ছিল। পড়তে পড়তে পরত ভেঙ্গে দৃশ্যপটগুলো চোখের সামনে এমন ভাবে ভেসে ওঠে যেন নিজের অজান্তেই হাসি, আর এই অজান্তের হাসিটা এমন কিছু দেয় যা জীবনে ভাত মাছের মতোই প্রয়োজন। কেননা আমাদের সবারই কম বেশ আবেগ আছে, আমরা আমাদের শরীরটাকে যেভাবে বাঁচিয়ে রাখি, ঠিক সেভাবে না, তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়ে আবেগটাকে যত্ন নেয়া উচিত। আমার কাছে মনে হয় মানিক বন্দ্যেপাধ্যায় আমাদের ভোতা, অশিক্ষিত ও রুগ্ন আবেগটাকে একটু যত্ন নেওয়ার জন্যেই এই বইটা লিখলেন। না হয় কী? কখনোই জানতাম না, বুঝতাম না, সত্যিকার জীবন, ভালোবাসা, অপরাধবোধ। সবি নতুন করে শিখলাম। বইটা পড়াকালীন অনেকবার থেমে থেমে ভেবেছি, কল্পনায় গেছি, হেসেছি, বইটিতে কতবার যে কলমের লাঙ্গল চালিয়েছি বলাই বাহুল্য। মাঝে মাঝে বইয়ের ফাঁক-ফোকরে তাঁর কথার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মন থেকেই কালার পেন দিয়ে লিখেছি : ১. এই কথা আসল মানিক, ২. উফ্ মানিক, ৩. পাগল হয়ে গেলাম, এই রকম আরো কতো কমেন্টই। এই বইটা না পড়লে সত্যি জীবনটা অপূর্ণই থেকে যেতো, কখনোই বুঝতাম না যে, একজন লেখক পাঠক হতে সাহায্য করে নাকি পাঠকই পাঠক হয়ে ওঠে। তবে আমি যাই হই, এতটুকু জানি (আহমদ ছফা তাঁর গুরুকে নিয়ে লিখেছেন "যদ্যপি আমার গুরু" যদিও মানিকের বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখা পাইনি সময়ের ব্যবধানে, তবুও...) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার গুরু। মাথাটা ঘুরছে, কেন ঘুরছে? এই যে দেখুননা প্রেমে পড়ার মতো ঘুরছে, প্রেমে পড়লে কেমন লাগে, কি হয় তাও বাদ দেননি। হুবুহু বাস্তবতাটাকে কপি করে পেস্ট করে দিলেন। একটা মানুষ কিভাবে আরেকটা মানুষকে মিথ্যে করে দিতে পারে, কিভাবে আরেকটা মানুষের অস্তিত্বকে পুতুলের মতো অন্তঃসারশূন্য করে দেয়, লেখক এইখানে পুতুল নাচের মতো করে তাঁর "পুতুলনাচের ইতিকথা"য় কিছু গোপন ও মূক কথা একবারে হুবুহু আস্তে ধীরে বাহির করে তাতে বাস্তবতার রং দিয়ে এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে জীবনের পরম সত্যিটা এই, সত্যিই এই, আমরা কারো ভালোবাসা ছাড়া বাঁচতে পারি, আবার ভালোবাসায়ও বাঁচতে পারি, তবে কারো ভালোবাসা পাওয়ার পর না পেলে আর বাঁচা যায় না। যেমনটা "পুতুলনাচের ইতিকথা"য় পাই; কুসুম চলে যাওয়ার পর শশী বারবার ভাবে দূরে বহুদূরে কোথায়ও চলে যাবে... যেতে কি পারে? পড়া যতো এগোতে থাকে তাঁর কথার মোহে পড়তে পড়তে পাঠক জলে ডুবে স্নান করার পরও বুঝতে পারেনা সে কি স্নান করেছে নাকি করবে! যেমনটা আমাকে কাবু করেছে। তাঁর প্রতিটা লাইনে লাইনে মানিক রতন ছড়ানো ছিটানো পাই, খাতার পাতায় সুন্দর করে বড় বড় করে লিখেছি "মানিক নেই তবে মানিক আছে"। কেনই-বা লিখবনা? দেখুন-তো এতো সুন্দর ও সত্য কথা কবে কোথায় পেয়েছেন : "সত্যি মিথ্যায় জড়ানো জগৎ। মিথ্যারও মহত্ত্ব আছে। হাজার হাজার মানুষকে পাগল করিয়া দিতে পারে মিথ্যার মোহ। চিরকালের জন্য সত্য হইয়াও থাকিতে পারে মিথ্যা।" আহ্ জীবনটা স্বর্গে উড়ছে, জীবনের স্বার্থকতা এই যে আমি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পড়তে পেরেছি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা। আর অশেষ কৃতজ্ঞতা তাকে, যে প্রিয় মানুষটি আমাকে এই বইটি উপহার দিয়েছিলো। ধন্যবাদ। #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা