বইয়ের বিবরণ
অন্য ধর্মের বেশিরভাগ ঐতিহাসিক-লেখকসহ অধিকাংশ মানুষেরই একটা অন্ধ ধারণা যে, মুসলমান মানেই সন্ত্রাসী, রক্তপিপাসু। তরবারির জোরেই তারা বিশ্বের নানা ধর্মের মানুষকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেছে। তবে এদের মধ্যে যাঁরা একটু নিরপেক্ষ মন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন, তাঁরা লক্ষ্য করলেন, বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবাংলায় কেন এবং কীভাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পরিণত হলো। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসকদের পরিচালিত আদমশুমারীতে তাদের তরবারিতত্ত্ব আরেক দফা বড়ো ধরনের হোঁচট খেল। আদমশুমারী রিপোর্টে দেখা গেল, এ উপমহাদেশের যেসব এলাকা মুসলিম সেনা অভিযানের মাধ্যমে করায়ত্ত হয়েছিল, সেসব এলাকার তুলনায় বাংলার এ শস্য শ্যামল ভূমিতে মুসলমানের সংখ্যা অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, এ বাংলার যে সমস্ত শহর-বন্দরে মুসলিম শাসকগণ অবস্থান করেছেন- যেমন মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, ঢাকা, এগুলোর চেয়ে নিভৃত পল্লিতেই মুসলমানের সংখ্যা বেশি। লেখক দীর্ঘদিন গবেষণা করে একটা সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছেন যে, তরবারি তথা বল প্রয়োগের মাধ্যমে নয়; বরং একদিকে হিন্দুধর্মের কঠোর জাতিভেদ প্রথা, ধর্মীয় নির্যাতন-নিপীড়ন, অপরদিকে ইসলাম প্রচারকগণের সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবন যাপন এবং ব্যাপক দানশীলতা, উদার ও সহমর্মী মনোভাবই এতদঞ্চলে মুসলিম সংখ্যাধিক্যের অন্যতম তথা একমাত্র কারণ।