বাংলার গ্রামে-গঞ্জে সাধক-বাউল-ফকির-
মহাজন-তান্ত্রিক-উপাসকেরা নীরবে-নিভৃতে নিজস্ব এক দর্শনের ধারা বহন করে চলেছেন। লোকচক্ষুর আড়ালে লালন করছেন সাধনকেন্দ্রিক গুহ্য একটি মরমি দর্শন বা মতবাদ। লোকসংস্কৃতি গবেষক সুমনকুমার দাশ মেলা-উৎসব-ওরস, মাজার-মন্দির-শ্মশান, ফকিরের ডেরা, বাউলের আখড়া আর গ্রামীণ জনপদ ঘুরে সেই প্রান্তিক লোকসাধকদের বৃত্তান্ত তুলে এনেছেন, পাঠককে যা গভীরভাবে স্পর্শ করবে।
বইয়ের বিবরণ
গ্রামে-গঞ্জে যেসব সাধক-বাউল-
ফকির-মহাজন-তান্ত্রিক-উপাসক রয়েছেন, তাঁদের কজনকেই-বা আমরা চিনি? তাঁদের প্রায় সবাই আমাদের ‘ভদ্র’ ও ‘নাগরিক’ সমাজে অপরিচিত। নীরবে-নিভৃতে তাঁরা বাংলায় নিজস্ব এক দর্শনের ধারা বয়ে নিয়ে চলেছেন। নির্মাণ করেছেন আলাদা এক মরমিজগৎ। লোকচক্ষুর আড়ালে তাঁরা সাধনকেন্দ্রিক গুহ্য একটি সাংস্কৃতিক জীবনধারা অনুসরণ করছেন। গানের মধ্য দিয়ে তাঁরা সন্ধান করে চলেছেন জীবনের গভীরতর অর্থ। তাঁদের জীবনযাপন, সংগীতচর্চা আর সাধনার বিষয়টি খুব কমই আলোচিত হয়েছে বাংলা সাহিত্যে। মেলা-উৎসব-ওরস, মাজার-মন্দির-শ্মশান, ফকিরের ডেরা, বাউলের আখড়া আর গ্রামীণ জনপদ ঘুরে লোকসংস্কৃতি গবেষক সুমনকুমার দাশ আমাদের প্রান্তবাসী সাধকদের সেই অচেনা ভুবনের আশ্চর্য ও কৌতূহলোদ্দীপক গল্প বলেছেন এ বইয়ে।
- শিরোনাম বাউলের আখড়ায় ফকিরের ডেরায়
- লেখক সুমনকুমার দাশ
- প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন
- দেশ বাংলাদেশ
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
সুমনকুমার দাশ
জন্ম ১৯৮২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর, সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার সুখলাইন গ্রামে। কম্পিউটার-বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ছাত্র ছিলেন। বর্তমানে কাজ করছেন প্রথম আলোর সিলেট প্রতিনিধি হিসেবে। আগ্রহ ও চর্চার প্রধান বিষয় ফোকলোর ও সংগীত-সংস্কৃতি। গ্রামাঞ্চল ঘুরে প্রাচীন ও বিলুপ্তপ্রায় গান সংগ্রহ করেন। তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহে নানা ধারা-উপধারার অজস্র লোকগান রয়েছে। রচিত ও সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা চল্লিশের বেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশের বাউল-ফকির: পরিচিতি ও গান, বাংলাদেশের ধামাইল গান, বাউলকোষ, বাউলসাধনা লালন সাঁই ও অন্যান্য, লোকভাবন, লোকগান লোকসংস্কৃতি, বেদে-সংগীত, আমাদের শান্তিনিকেতন উল্লেখযোগ্য। তাঁর সম্পাদনায় অনিয়মিতভাবে বেরোচ্ছে গানের কাগজ দইয়ল।
মরিলে কান্দিস না আমার দায় - গিয়াসউদ্দিন আহমদের নির্বাচিত গান
সুমনকুমার দাশ
১৬০.০০ টাকা ২০০.০০ টাকা
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
User
২৮ Feb, ২০২৩ - ৯:০৯ PM
“তারা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে এমনভাবে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন যা বাংলাকে অন্যরূপে চিনিয়েছে।” 'বাউলের আখড়ায় ফকিরের ডেরায়'- এই ধরনের বই খুব একটা পড়ার সুযোগ আমার হয় নি। সে দিক থেকে সুমনকুমার দাশের এই বইটি পড়ে বেশ নতুন কিছু জানতে পারলাম। আমাদের সমাজের যারা কোনো সৃষ্টিশীল কাজ করেন রাতারাতি সেই কাজগুলো সমাজে কোনো না কোনো ভাবেই সবার সামনে চলে আসে। এই সমাজেই কিছু সাধক-বাউল, ফকির-মহাজন-তান্ত্রিক, উপাসকের বসবাস; যারা কিনা নীরবে-নিভৃতে বাংলাতে তাদের নিজস্ব এক দর্শনের চর্চা করে চলছেন, তাদের কথা আমরা কয়জন জানি? হয়তো অনেকেই জানতে চেয়েও জানতে পারেন না! অনেকেরই আবার হয়তো এই ব্যাপারে জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ অবধি নেই! কিন্তু দিনশেষে এটা তো স্বীকার করতেই হবে যে, তারা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে এমনভাবে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন যা বাংলাকে অন্যরূপে চিনিয়েছে। লেখক সুমনকুমার দাশ এই বইয়ে মূলত সেই সকল মানুষের মরমি-জগৎটাকে ওনার লেখার মাধ্যমে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। লোকসংস্কৃতি গবেষক সুমনকুমার দাশ বইটিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ঘুরে গ্রাম-বাংলার মেলা, উৎসব, ওরস, মাজার-মন্দির-শ্নশান, ফকিরদের ডেরা, বাউলদের আখড়া ইত্যাদি ফুটিয়ে তুলেছেন স্ব-আঙ্গিকে। আমরা মানুষেরা সাধারণত সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়ার আশায় কতো কিছুই না করি। বইয়ে 'আবদুর রউফ' নামের এক চরিত্রের দেখা মিলে, যে কিনা আল্লাহ লাভের সরলতম এক পথ বাতলে দিয়েছেন। লেখক যখন তার কাছে জিজ্ঞাসা করেলেন,‘এই যে আপনি এতো বছর ধরে ফকিরি রাস্তায় আছেন, তা নবীরে কী পাইছেন?’ তখন 'আবদুর রউফ' বলে উঠেন,‘পাইমু না ক্যান? মানুষের ভেতরেই তো আল্লার বাস। মানুষ চিনতে পারলেই আল্লারে সহজেই চেনা যায়। তখন আল্লার সন্ধান মিলে।’ কতো সরলতাই না ছিল আবদুর রউফের বলা কথাগুলোর মধ্যে! বইটিতে লেখক অনেকগুলো গান উপস্থাপন করেছেন।তার মধ্যে লালনের গানগুলো ছিল অন্যতম, যা বইটির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। তাছাড়া লেখক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কিছুর ছবি, যেমন- মাজারে ফকিরালি গানের আসরের ছবি, মহররম অনুষ্ঠানের ছবি, চড়ক পূজোর ছবি ইত্যাদি সংযুক্ত করে বিষয়গুলো আরো নিবিড়ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। যা একজন পাঠককে দারুণভাবে স্পর্শ করবে। একটা সময় এসে লেখক 'হৃদয় সাধু' বলে একজন সাধুকে উপস্থাপন করান, যিনি মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে সুন্দর কিছু লাইন বলার চেষ্টা করেছেন। হৃদয় সাধু বলেন,‘ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর মতে 'আলোকিত মানুষ চাই', আর আমি বলছি – তোমাদের প্রত্যেকের ভিতরের প্রদীপ আছে যেটা আগে তোমাদের জ্বালাতে হবে। তোমাদের ত্যাগের খাতায় নাম লেখাতে হবে, ভোগের খাতায় নয়!’ বইটিতে বাউল ধর্ম সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলা হয়েছে– "পৃথিবীতে দুই হাজার পাঁচটা ধর্ম বিদ্যমান। একমাত্র বাউল ধর্মতেই শিষ্যকে গুরুও প্রণাম করে।" সমাজের যে মানুষগুলো আড়ালে থেকেই নিভৃতে বাংলার নিজস্ব এক দর্শন প্রতিষ্ঠা করে চলছেন, সেই সকল সাধক, বাউল, ফকির, তান্ত্রিকদের জীবনের টুকরো-টুকরো গল্প বইয়ে উপস্থাপন করেছেন লেখক। তুলে ধরা হয়েছে সে-সকল গীতচর্চা ও দর্শন, যা কিনা যুগের পর যুগ লালন করে আসছেন প্রান্তিক লোকসাধকরা। বাংলার এই দর্শনের ইতিহাস আমাদের সকলের জানা উচিৎ। এই বইটি পড়লে আপনি তার অনেক কিছু জেনে নিতে পারবেন। তাহলে শুরু করা যাক। (৪) বই:- বাউলের আখড়ায় ফকিরের ডেরায় লেখক:- সুমনকুমার দাশ জনরা:- আর্ট, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশনা:- Prothoma ব্যক্তিগত রেটিং:-[৮/১০] ~রিভিউদাতা- হিমাদ্রি শর্মা #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা পড়তে আপনাকে হবেই, হয় বই নয়তো পিছিয়ে!🌻