দরিয়া-ই-নুর লিখেছিলাম প্রথম আলো’র ঈদ সংখ্যার জন্য; রোজার দিনে, লক-ডাউনের মধ্যে দমবন্ধ করা আটকাবস্থায়।
পত্রিকার জন্য লিখতে গেলে শব্দসংখ্যার বাধ্যবাধকতা থাকে, হাতখুলে লেখা সম্ভব হয় না। এমন সীমাবদ্ধতার মধ্যে গল্প-উপন্যাস লেখা একটু কঠিন, আর থৃলার-উপন্যাস লেখা বোধহয় সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং। মাত্র ১৫-১৬ হাজার শব্দের মধ্যে লিখতে হয়, ফলে বড় ক্যানভাস কিংবা চরিত্রবহুল গল্প লেখা যায় না। তার পরও চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলাম। শুরু থেকেই পরিকল্পনা ছিল, কম শব্দে বেশি গল্প বলবো। এরজন্যে দরকার পড়েছিল ভিন্ন ধরণের ন্যারেশনের; দৃশ্যকল্প নির্মাণের ক্ষেত্রেও ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। লেখাটা শেষ করার পর মনে হয়েছিল চ্যালেঞ্জটা উতরে গেছি।
ঈদ সংখ্যা প্রকাশ হবার পর পত্রিকার এক সিনিয়র সাংবাদিক প্রশংসার ছলে বলেছিলেন, ‘ছোট কাচামরিচের ঝাল বেশি!’ অগণিত পাঠকও বেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল দরিয়া-ই-নুর নিয়ে। তখনই ঠিক করেছিলাম লেখাটা যেভাবে আছে সেভাবেই বই আকারে প্রকাশ করবো, নতুন করে কিছু সংযোজন করবো না--কম শব্দে বেশি গল্প বলার নজির হয়ে থাকুক এটি।
সিনেমার জীবন, জীবনের সিনেমা।
দরিয়া-ই-নুর-এর গল্পটিকে এক লাইনে বললে এভাবেই বলতে হবে। রূপালি পর্দার আকর্ষণে কতো মানুষের জীবন বদলে যায়, কতো মানুষ স্বপ্নভঙ্গের ভেদনায় ক্লিষ্ট হয়...এ রকম কিছু গল্পের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচয় আছে আমার। এই কাহিনিতে সে রকম কিছু গল্পের চরিত্র আর উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে।
৫ই ফেব্রুয়ারি কলকতার স্বনামখ্যাত অভিযান পাবলিশার্স থেকে দরিয়া-ই-নুর প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের পাঠকের জন্য এবার প্রকাশ করা হলো যথারীতি বাতিঘর প্রকাশনী থেকে। আশা করি ছোট পরিসরে লেখা এই উপন্যাসটি পাঠকের ভালো লাগবে।
দীর্ঘদিন পর জেল থেকে মুক্তি পায় মির্জা আশেক। নতুন করে জীবনটা শুরু করার আগে আবারো পা বাড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ পথে। শেষ একটি দান মারতে চায় সে। এবার তার পরিকল্পনা যেমন নিখুঁত তেমনি অভিনব। সামান্য ভুলে তলিয়ে যেতে পারে তার জীবনটা, সেই সাথে আরো কিছু মানুষেরও!
এসবই কি মহামূল্যবান হীরকখণ্ড দরিয়া-ই-নুরের হাতছানি? নাকি অন্য কিছু?
বইয়ের বিবরণ
- শিরোনাম দরিয়া-ই-নুর
- লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
- প্রকাশক বাতিঘর প্রকাশনী
- প্রকাশের সাল ২০২৩
- বাঁধাই হার্ডকভার
- দেশ বাংলাদেশ
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
বিনিয়ামীন পিয়াস
১১ Mar, ২০২৩ - ১১:১৪ PM
'দরিয়া-ই-নুর' শব্দটি শুনলে প্রথমেই চোখের সামনে কী ভেসে আসে? আক্ষরিক অর্থ 'আলোর সমুদ্র' হলেও এটি মূলত একটি হীরা। যেটি বাংলাদেশে প্রাপ্ত রত্নসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় আকৃতির। ছাব্বিশ ক্যারাটের হীরাটির চারপাশে সংযুক্ত রয়েছে ছোট দশটি পাঁচ ক্যারাটের ডিম্বাকৃতির হীরা। তো এই হীরাটি নিয়ে গল্পে কী কাজ? গল্পের একটা উলেখযোগ্য অংশে হীরাটির ভূমিকা থাকলেও মূল গল্পটি কিন্তু ভিন্ন। একটা প্রতিশোধের গল্প। যেই গল্পের অংশ হয়ে এসেছে মির্জা আশেক, রোজি, আর্জুমান্দ সহ আরো কয়েকজন। বিচিত্র তাদের জীবন। পাওয়ার-হারানোর হিসেবের বাইরে অমীমাংসিত গল্প রয়েছে অনেক। আর সেই গল্পের মীমাংসাই যেন হয়েছে ছোট পরিসরের এই উপন্যাসিকাটিতে৷ একজন বড় লেখকের বিশেষ গুণ হচ্ছে একটা গল্পকে তিনি বিভিন্নভাবে বলতে পারেন, কিন্তু তাতে গল্পের মূল রসের কোনো হেরফের হয় না। চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজারের গল্পকে লিখে ফেলতে পারেন বিশ হাজারেরও কম শব্দে, কিন্তু তবুও একইভাবে আলোড়ন তুলতে পারে পাঠক হৃদয়ে। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন যে একজন বড় লেখক সে বিষয়ে নিশ্চয়ই কারো কোনো সন্দেহ নেই, তাই শব্দের সীমাবদ্ধতার লিটমাস টেস্টেও তিনি উৎরে গিয়েছেন চমৎকার ভাবেই। প্রথম আলোর ঈদ সংখ্যার জন্য লেখা এই উপন্যাসিকাটির শব্দ সংখ্যা কম হলেও 'ধামাকা' কিন্তু কম ছিল না। বরং কম পরিসরের লেখায় এলোমেলোভাবে অনেকগুলো গল্পের অবতারণা যেন মূল গল্পটির পথকে আরো মসৃণ করেছে। লেখকের শব্দের খেলা আমাকে আটকে রেখেছে নিউক্লিয়াসে আবদ্ধ প্রোটনের মতোই! এক বসায় পড়ে ফেলার মতো দারুণ উপভোগ্য এই লেখাটি যেকোনো পাঠকের কাছেই ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস। বই: দরিয়া-ই-নুর লেখক: মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন প্রকাশনী: বাতিঘর #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা