বইয়ের বিবরণ

এক কুৎসিত চেহারার মানুষকে এক বিদুষী নারী বলেছিল ‘আপনি হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ।’ এই একটি বাক্যেই বদলে গেছে তার জীবন। সে ছিল এমন পুরুষ যার সৌন্দর্য দেখার জন্য থাকতে হয় অন্তরের চোখ। একমাত্র সে নারীরই ছিল সেই চোখ। তারপর, জমিদারের বিলাসী জীবন থেকে সে লোকটি নেমে এসেছিল সাধারন মানুষের কাতারে। ভালোবাসা তাকে দিয়েছিল বিদ্রোহের শক্তি। এটা সেই সময়ের ঘটনা  যখন পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা পরাজিত হয়েছেন, আর সুবে বাংলা ও বিহার দখল করে নিয়েছে ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ইতিহাসে এই অংশটুকু লেখা হয় অনেক বড় করে। কিন্তু যে অংশটার কথা সবাই বিস্মৃত সেটা হলোÑ পলাশী পরবর্তী তিন দশক নবাবের চাকরিচ্যুত সৈন্য, সাধারন কৃষক, মুসলিম সাধক ও হিন্দু সন্ন্যাসীদের প্রায় ৫০হাজার সদস্যকে সংগঠিত করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন এক মহান সুফি সাধক, তাঁর নামÑ ফকির মজনু শাহ্। শেষ যুদ্ধে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন, কিন্তু উত্তরপুরুষের জন্য রেখে গেছেন ইনসাফের পক্ষে জালিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধের এক অভূতপূর্ব সাহসের উদাহরণ।  ‘নূর’ 

  • শিরোনাম নূর
  • লেখক লতিফুল ইসলাম শিবলী
  • প্রকাশক নালন্দা
  • আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৯৭১৫৪৪৩
  • প্রকাশের সাল ২০২৩
  • মুদ্রণ 1st Published
  • বাঁধাই হার্ডকভার
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৪০
  • দেশ বাংলাদেশ
  • ভাষা বাংলা

আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

এই লেখকের আরও বই
এই বিষয়ে আরও বই
আলোচনা ও রেটিং
৫(১)
  • (১)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
আলোচনা/মন্তব্য লিখুন :

আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন

Khan Rupok

২১ Feb, ২০২৩ - ৫:১৫ AM

"মানুষ ভুল করে অনেক কিছুর ভুল নাম দেয়,মানুষ যেটাকে ভালোবাসা বলে সেটা আসলে মায়া "। নূরের প্রেক্ষাপট পলাশীর যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতক সেনাপতি মীর জাফরের সহায়তায় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজের করুন পরিণতির পরে ইংরেজ শোষন ও অত্যচারী জমিদারদের নির্মমতা,ইংরেজদের অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখলের পর সাধারণ জনগোষ্ঠীর উপর শোষনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ,হিন্দু অভিজাত জমিদারদের অত্যচারের উপর বিদ্রোহ স্বরুপ ফকির সন্যাসীদের আন্দোলন ।ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উপমহাদেশের ক্ষমতা দখল করার পর তাদের সাথে কিছু অভিজাত শ্রেণীর হিন্দু জমিদার যোগ দেয় তাদের হয়ে কাজ করতে,অন্যায় জেনেও তারা শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত স্বার্থের জন্য সাধারণ মানুষের উপর নির্মম অত্যচার ও পাষবিক বর্বরতা চালায় । তাদের ভাষ্যমতে ইংরেজদের আগে ভারত শাসন করেছিল মুঘলরা,আর এখন শাসন করছে ইংরেজ বাহিনী। শাসকগোষ্ঠীর কেউই যেহেতু ভারতীয় উপমহাদেশের না, সেক্ষেত্রে যাদের দিয়ে তাদের লাভ হবে তাদের সাথেই জমিদাররা থাকবে। লেফটেনেন্ট ব্রেনান বাহিনীর পাষবিক নির্যাতন আর ফকির মজনু শাহের দলের লোকদের কঠিন সময়েও শক্ত মনোবল থাকা, সৃষ্টিকর্তার উপর ইমান অটুট রাখা...নিজেদের জীবন দিয়ে হলেও উপমহাদেশ থেকে অত্যাচারী শোষক শ্রেনীকে বিদায় করার কঠিন মনোবলের পরিস্থিতি দিয়ে কাহিনী শুরু। লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন ইংরেজ শাসকরা ক্ষমতা দখল করার পর মানুষের দুর্দশার কথা,দুর্ভিক্ষের কথা,অনাহারে মরে যাওয়ার পরিস্থিতি আর বাচার জন্য মানুষ মৃত মানুষের মাংস খেয়েছেন এমন বিভীষিকাময় অবস্থার কথা। ভারতীয় উপমহাদেশে আগত ইংরেজরা মুসলিমদের বিতাড়িত করে যেহেতু ক্ষমতা দখল করেছিল,এজন্য পরবর্তী সময়ে মুসলিমরা তাদের প্রধান শত্রু বা তাদের প্রতিহত করতে হবে এটা খুব সহজেই বুঝতে পেরেছিল শোষকরা। হিন্দু নিচ বর্নের মানুষ সবাইও অত্যাচারীত হয়েছিল ইংরেজদের দ্বারা,তাই নিচু বর্নের হিন্দুরাও ফকির সন্যাসী আন্দোলনের সাথে ছিল মুক্তির জন্য। ফকির সন্যাসী আন্দোলনের প্রধান ছিলেন মজনু শাহ। মজনু শাহের শিষ্য ও সহযোদ্ধা সোবহান শাহ এবং তার জন্মান্ধ মেয়ে নূর কে কেন্দ্র করে মূল ঘটনা আগায়। সোবহান শাহ বিদ্রোহের আগুন সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পাড়ি জমান ছত্রিশ পরগনায় তার মুরিদ মনসুর এলাহীর বাড়িতে,সেখান থেকেই সবার মাঝে ছড়িয়ে দেন ইংরেজদ আর জমিদারদের বিতাড়িত করার শক্তিশালী বার্তা। সবার সাথে মিশতে জীর্ণশীর্ণ একটা মসজিদকে পূনরায় জামাতের উপযোগী করেন। বইয়ের শুরুতে বিদ্রোহী ফকির বাহিনী অত্যচারী জমিদার অশোক গুপ্তের প্রাসাদে আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করে অনেক সৈন্য,হত্যা করে তার স্ত্রীকে। আর তাকে কষ্ট দেয়ার জন্য নির্মমভাবে আগুনে মুখ পুড়িয়ে দেয় তার একমাত্র ছেলে সমুদ্র গুপ্তকে । ভাগ্যক্রমে জমিদার সেদিন বেচে যায়,অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলে তার জন্য তার ছেলের করুন অবস্থা দেখে সৃষ্টিকর্তার নিকট তার নিজ সন্তানের মৃত্যু কামনা করেন। যদিও বেচে যায় সমুদ্র গুপ্ত,তার চেহারা ভয়ংকর দানবের মত হয়। সমুদ্র গুপ্ত তার বাবার সব অন্যায় আচরন বুঝতে পারেন এবং তার মানসিকতা জমিদার অশোকের সম্পুর্ন বিপরীত ছিলো। জমিদারের সন্তানের প্রতি সবার ভুল ধারনা ছিল,সাধারণ মানুষ তাকে তার বাবার মতই অত্যচারী আর ভয়ংকর ভাবতো তার বাবার জন্যই। সমুদ্র গুপ্তের সাথে রক্তদহ বিলে একদিন ভয়ংকর ভাবেই দেখা হয় সোবহানের কন্যা নূরের। তাকে সবাই ভয় পেলেও অন্তরের চোখ দিয়ে তাকে চিনতে পারেন সোবহান শাহের অন্ধ মেয়ে নূর। এরপর সমুদ্র গুপ্ত নূরের সাথে দেখা করতে চান আরো, কারন এই প্রথম কেউ তাকে দেখে ভয় পায়নি। নূরের সাথে কথা বলার পর তিনি মিশে যান সাধারণ মানুষের মাঝে তাকে খোজার জন্য। নূরকে খুজতে গিয়ে সমুদ্র গুপ্ত তার বাবার প্রতি সাধারণ মানুষের অভিব্যক্তি কাছ থেকে জানেন। সমুদ্র গুপ্ত ও তখন তার জালিম বাবার পতন চাওয়া শুরু করেন । গুরুত্বপুর্ন সময়ে নুরের বাবা সোবহান শাহকে বাচিয়েছেন তার বাবার বাহিনীর হাত থেকে। নূরের কিছু কথাই তাকে সাধারনের সাথে নামিয়ে এনেছিল।উপন্যাস এভাবেই এগিয়েছে,আরো সুন্দর সব কাহিনী দিয়ে। শেষ পর্যন্ত অত্যচারী জালিমদের পতন হয়,অত্যচারীদের শাসন ক্ষণস্থায়ী এটাও প্রমাণিত হয়। সেই সাথে করুন কিছু ঘটনায় শেষ হয় উপন্যাসটি। আরো দারুন সব ছোট ছোট ঘটনা,অসাধারণ সব গভীর অর্থের বাক্য বিনিময় ছিল বইটিতে। বইটি পড়তে পারেন,মাস্ট রিড।আমার কাছে মনে হয়েছে এই বইটি সবার একবারের জন্য হলেও অন্তত পড়া উচিত। সম্পুর্ন বইটি পড়ার পর মনে হয়েছে এর চেয়ে সুন্দর বই খুব কম ই হতে পারে... বইয়ের নাম : নূর লেখক :- লতিফুল ইসলাম শিবলী প্রকাশনী :- নালন্দা আমরা আমাদের মৃত্যুকে শ্বাস-প্রশ্বাসের হাতে তুলে দেইনি,বরং আমরা আমাদের মৃত্যুকে তুলে দিয়েছি আল্লাহর হাতে।নিঃশ্বাস বন্ধ হলে তোমার মৃত্যু হবে কিন্তু আল্লাহর হাতে তুলে দেওয়া জীবন প্রবেশ করবে সসীম জীবন থেকে অসীম জীবনে।যারা মনে করে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়াটাই মৃত্যুর কারন,শুধু তাদেরই মৃত্যু হবে...। #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা