বইয়ের বিবরণ
কাব্যনাট্য পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় লেখার সময়, আমার মনে একটি প্রশ্ন আসে। ভাষার একটি রূপ কি স্মৃতি, অনুষঙ্গ, কল্পনা এবং অভিজ্ঞতার বিশেষ একটি সীমা নির্দেশ করে দেয় উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে? ‘এলোমেলো চুল’ আর ‘আউলাঝাউলা কেশ’ কি মর্মের ভেতরে এক এবং অভিন্ন? এই সব প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করতে গিয়েই যে লেখা হয় এই বইয়ে একত্রে এখন তা রাখা গেল। এই সনেটগুলো লিখতে গিয়ে বারবার আমি অনুভব করেছি আমার পেছনে অজানা অচেনা লোককবিদের উপস্থিতি এবং আমি একজন খেলোয়াড়ের আনন্দ পেয়েছি তাদের সঙ্গে লড়াই করে আমার কালের এবং আমার অস্তিত্বের অভিজ্ঞতা এ হেন বাক্যগঠনরীতি, উচ্চারণ-সুর ও ঝোঁক এবং লৌকিক অনুষঙ্গের ভেতরে প্রসৃত করে দিতে সক্ষম অথবা ব্যর্থ হয়ে। ময়মনসিংহ শহরের প্রান্তে, এক অপরাহ্ণবেলায়, বাঁধানো এক পুকুর ঘাটে বসে একদিন আমার এক প্রিয় কনিষ্ঠ কবি হঠাৎ প্রশ্ন করেছিলেনআমি কি এই সনেট রচনার মাধ্যমে চলতি সাহিত্যিকভাষার একটা বিকল্প খাড়া করতে চাইছি? বাংলাদেশের প্রধান দুর্ভাগ্য, ভাষা নিয়ে রাজনৈতিক কূটচাল বহুদিন থেকে চলেই চলেছে। তাই সেদিন যে উত্তর দিয়েছিলাম, সমাজেও তা আগাম উচ্চারণ করে রাখবার দরকার বোধ করছি, যেনা, আদৌ তা নয়। তবে, ইংরেজিভাষার আওতার ভেতরেই একজন মার্কিন নিগ্রো কবি, একজন স্কটিশ কবি, একজন আফ্রিকান কবি যদি লৌকিক বাগভঙ্গি, শব্দ এবং উচ্চারণ ব্যবহার করে সার্থক ও স্মরণীয় কবিতা লিখতে পারেন, আমরাই বা বাংলায় সে সম্ভাবনা পরীক্ষা করে কেন দেখব না? কখনো কখনো? পাশাপাশি?অথবা, একই সঙ্গে?
- শিরোনাম পরানের গহীন ভিতর
- লেখক সৈয়দ শামসুল হক
- প্রকাশক ঐতিহ্য
- আইএসবিএন 9789847769332
- প্রকাশের সাল 2023
- মুদ্রণ 1st Edition, February 2023
- বাঁধাই (হার্ডকভার)
- পৃষ্ঠা সংখ্যা 48
- দেশ বাংলাদেশ
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

সৈয়দ শামসুল হক
জন্ম ২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫, কুড়িগ্রাম। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, কাব্যনাট্য ও প্রবন্ধ মিলে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ প্রায় দুই শ। আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক, জেবুন্নেসা-মাহবুবউল্লাহ্ স্বর্ণপদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন। মৃত্যু ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
রাফি হাসসান
১৮ Feb, ২০২৩ - ২:৫২ PM
আমার পরানের গহীন আর রক্তের সঞ্চারণে তখন কবিতা পানের গভীর তৃষ্ণা। কবি আর কাব্যের প্রতি উন্মাতাল উদ্যাম। কাব্যকে বুঝতে এবং হৃদয়ে ধারণ করতে পণ করেছিলাম তখন। মোড়ানো বা ছিঁড়া টুকরো কাগজে কবিতার কোন পঙক্তি চোখে পড়লেই পরম যত্নে সেই টুকরো তুলে নিতাম। গুনগুনিয়ে আবৃত্তি করতাম সেই কবিতার অবহেলিত অসমাদৃত পঙক্তি। এমনি এক সময়ে বিষণ্ণ গোধূলির রক্তিমতাকে সাক্ষ্য রেখে একগুচ্ছ গোলাপের সুরভিত অনুভূতি নিয়ে শুরু করেছিলাম সৈয়দ হকের কাব্যগ্রন্থ পরানের গহীন ভেতর। ১৯৮০ সালে ‘পরানের গহীন ভেতর' প্রথম প্রকাশিত হয়। ২০০৪ সালে পকেট সাইজ আকারে বইটি প্রকাশ করে চারুলিপি প্রকাশন। বইটিতে তেত্রিশটি কবিতা রয়েছে। এগুলোে সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা বললেও চলে। আঞ্চলিক ভাষাশৈলীতে লেখা এ কাব্যগ্রন্থটি। তাঁর অন্যান্য রচিত অন্য কাব্যগ্রন্থগুলোর চেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। আমিও তার অন্য কাব্যগ্রন্থের চেয়ে এটিকে প্রাধান্য দিব। মার্কিন নিগ্রো কবি, স্কটিশ কবি, এ আফ্রিকান কবি লৌকিক বাকভঙ্গি, শব্দ এবং উচ্চারণ ব্যবহার করে সার্থক ও স্মরণীয় কবিতা লিখে শিল্পের নতুন দুয়ার উন্মোচন করেন। কবি সৈয়দ হক এদের এ সৃজনে প্রভাবিত হন। তার পরানের গহীনে জেগে উঠে এমন শিল্প নির্মাণের বাসনা। এ বাসনার বুদ্বুদে রচিত হয় এ বইয়ের তেত্রিশটি সনেট। যা পরবর্তীতে কাঁপিয়ে দেয় পাঠকের গহিন গহ্বর। বইটির আরেকটি বিশেষত্ব হলো-শব্দ- ছন্দ-উপমার পাশাপাশি কবিতার মাঝে সুশ্রী রমণীর মতো হেসে উঠে সৈয়দ হকের আঁকা চিত্রকর্ম। এ গ্রন্থে তার হাতে আঁকা কিছু চিত্রকর্ম আছে। শব্দের শরীরে যেভাবে তার অনুভূতি সঞ্চারিত করেছেন তেমনিভাবে চিত্রের অবয়বে তার অনুভব অনুভূতি ডালপালা বিস্তৃত করেছেন। আগে কবিকে চিনতাম একজন কুশলী দক্ষ শব্দ শিল্পী হিসেবে। এ চিত্রকর্মে দেখে নতুন করে জানলাম একজন কুশলী শব্দশিল্পীর পাশাপাশি তিনি একজন সচেতন চিত্রশিল্পী। জানতে বড্ড ইচ্ছে জাগে-কলমের জোরে শিল্পের প্রতিটি শাখায় কি সৈয়দ হক তিনি এভাবে রেখে গিয়েছেন অমরত্বের ছাপ? সৈয়দ হকের কবিতা পড়তে পড়তে আমার ভেতর উন্মীলিত হয় তার কাব্যের সতত অমলিন দ্যুতি। তাঁর কবিতায় পেয়েছি জীবনের গভীর অনুধ্যান ও অনুপ্রেরণা। তার কবিতা পাঠের ভেতর দিয়ে আমি ছুঁয়ে যাই জীবনের জটিল কর্ম প্রেমের আখ্যান। সামনে চলতে চলতে আমি তার প্রেম, ভালোবাসা, ঈর্ষা, আর্তনাদ, আকুতিমাখা পঙক্তির স্রোতে সাঁতরাই। কখনও তার পঙক্তি থেকে ফোঁটা ফোঁটা ঝরতে থাকা ব্যাকুলতা ব্যথা-বেদনা-বিষাদের নীর বোধের ভেতর আদ্রতার ছাপ রেখে যায়। সৈয়দ হকের এ কাব্যগ্রন্থ যতোই পড়ি তাকে পাঠের তৃষ্ণা ততোই প্রবল আর গভীর হয়। এ আকর্ষণ কীসের এ টান এ তৃষ্ণা কীসের প্রতি ঠাওরে উঠতে পারি না। তার কবির পরানের গহীন ভেতরে নিরন্তর উড়তে থাকা অলৌকিক রুমালটি এক পলক দেখার একটু ছুঁয়ে দেওয়ার সাধ জাগে। কবি জাদুকরী শব্দের শরীর বয়ান করেন এ অলৌকিক রুমালের কথা- 'এ বড় দারুণ বাজি, তারে কই বড় বাজিকর যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর।। সৈয়দ হক নেই আমাদের মাঝে। এই না থাকার পরেও তিনি অমর হয়ে আছেন তাঁর সৃজনের পরতে পরতে। তার না থাকার চেয়ে তার থাকাটা বেশ অনুভব করি। তার কবিতা আমাকে তার শরীরী অস্তিত্ব বিলীনের কথা ভুলিয়ে দেয়। কবিতার শব্দ-উপমা-অনুপ্রাসের ভেতর দুলতে থাকা তার অনুভূতি অনুভূতি আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় তার অস্তিত্ব আর অমরত্বের কথ।মাঝে মাঝে তার পঙক্তি আওড়িয়ে আওড়িয়ে ঘোরের মাঝে চলে যাই। আমার সম্মুখে কবি হাসেন। আমি তাকে প্রশ্ন করি-জাদুকরী স্বাদু সংক্ষিপ্ত কাব্য পঙক্তির ভেতর বিশাল গভীর অনুভব-বোধ সঞ্চিত করেন। কবি বলেন, এটা কবিদের কাব্যনির্মাণের একান্ত কৌশল কলকব্জা। কবিরা এ কৌশল সিক্রেট রাখেন। একজন কবি আর অকবির মাঝে এ কৌশল পার্থক্যের রেখা টেনে দেয়। আমি অপার বিস্ময়ে ঘোর থেকে ফিরি। আমার হাতে তখনও কবির কাব্যগ্রন্থ পরানের গহীন ভেতর। বুঝতে পারি কবিতা পড়তে পড়তে ঘোরের জগতে বিচরণ করেছিলাম। আর সেখানেই সাক্ষাৎ হয় একজন কবিপ্রেমীর সঙ্গে একজন কবির। #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা