জহির রায়হানের জীবদ্দশায় প্রকাশিত একমাত্র গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ। তাঁর ছোটগল্পের বড় অংশ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে মৃত্যুর পর। এখনো নানা অনুসন্ধানে তাঁর অগ্রন্থিত ছোটগল্পের খোঁজ মিলছে। এই সংকলন তেমনই একটা অনুসন্ধানের ফল। জহির রায়হানের মোট ৭টি অগ্রন্থিত গল্প নিয়ে এই বই। গল্পগুলো ১৯৫৩ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে লেখা ও বিভিন্ন পত্রিকায় মুদ্রিত। গল্পগুলোর প্রধান উপজীব্য ভাষা আন্দোলন, তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জীবনের টানাপোড়েন, সমাজে নারীর ভঙ্গুর অবস্থান ও নর-নারীর প্রেম। এখানে জহির রায়হানের নিখুঁত সমাজবীক্ষণ ও সচেতন শিল্পীসত্তার পরিচয় পাওয়া যাবে সহজে। একইভাবে পাঠককে একটি বিশেষ কালপর্বের সমাজ, সেই সমাজের মানুষ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি করবে।
বইয়ের বিবরণ
- শিরোনাম যখন যন্ত্রণা (অগ্রন্থিত গল্পগুচ্ছ)
- লেখক জহির রায়হান
- প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন
- প্রকাশের সাল 2023
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
Shamim
১৪ Mar, ২০২৩ - ১২:২০ AM
জহির রায়হানকে নতুন করে পাওয়া! বাংলাদেশের লেখক, চলচ্চিত্রকার এবং বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আমার অন্যতম পছন্দ জহির রায়হানকে। জহির রায়হানের উপন্যাস নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তাঁর গ্রন্থিত গল্পের মোট সংখ্যা ২৩টি। উল্লেখ্য তাঁর রচিত ছোটগল্পগুলো মনোমুগ্ধকর। এইবারের বইমেলায় "প্রথমা প্রকাশনী" থেকে তাঁর অগ্রন্থিত ৭টি গল্পের সমন্বয়ে "যখন যন্ত্রণা" বইটি প্রকাশিত হয়েছে। সৈয়দ শামসুল হকের একটি লেখা খুঁজতে গিয়ে কিভাবে অগ্রন্থিত এই গল্পগুলো খুঁজে পাওয়া গেছে তা লিপিবদ্ধ আছে ভূমিকায়। যার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে গল্পগুলোর সংগৃহিত হয়েছে সেই ভদ্রলোকের নাম কাজী জাহিদুল হক। প্রথম গল্প - ঢেউ। জহির রায়হানের গল্প, উপন্যাস এবং সিনেমায় ভাষা আন্দোলনের প্রভাব অপরিসীম৷ এই গল্পটিও ভাষা আন্দোলনকেন্দ্রিক। গল্পের তেজ টের পাওয়া যায় এই পংক্তিগুলোতে, “ভাষার প্রতি যাদের এত দরদ, তাদের ভাষা কেড়ে নেবে –এ শক্তি কারও নেই এ পৃথিবীতে”। দ্বিতীয় গল্প- মনের মতো বউ। নিন্মবিত্ত পরিবারের এক যুবকের মনের মতো বউ পাওয়ার প্রচেষ্টার গল্প। তরুণের তীব্র আকুতি টের পাওয়া যায় নিন্মোক্ত অংশে, “একটু ভালো খাব, ভালো করে থাকব, সে সম্বলও নেই। ধন বলো, টাকাপয়সা বলো, সে তো ঠনঠন। এ অবস্থায় যদি মনের মতো বউও না পাই, তবে কি নিয়ে বেঁচে থাকব এ পৃথিবীতে?” তৃতীয় গল্প- অমিত্রাক্ষর। এটি আমার কাছে বইয়ের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ গল্প মনে হয়েছে। দেয়ালে লেখা “জরিণা বেগম” একটি নাম থেকে কিভাবে একটি গল্প রচিত হয়েছে। এবং লেখক কিভাবে নিজেই অদেখা এবং অচেনা জরিণা বেগমের প্রেমে পরে যায় তা বিস্ময়কর। তবে গল্পের শেষটায় যে ক্লাইমেক্স থাকে অনেকেই ধাক্কা খেতে পারেন। জহির রায়হানের লেখার মুন্সিয়ানা অনেকটাই ফুটে উঠেছে এই গল্পে। চতুর্থ গল্প- অনমিতা। এটি আমার কাছে এই বইয়ের শ্রেষ্ঠ গল্প মনে হয়েছে। এই গল্পে একজন আপোষহীন, সংগ্রামী নারীর গল্প বলা হয়েছে। সম্ভবত এইরকম নারীর অস্তিত্ব বিরল। গল্পের শেষ অংশে মনযোগ দিলে আপোষহীনতার বিষয়টা টের পাওয়া যাবে। পঞ্চম গল্প- যখন যন্ত্রণা। একজন যুবকের অতি বেদনাদায়ক ব্যর্থ প্রেমের গল্প। সেই অর্থে প্রেমের গল্পও বলা যায়না। কারণ প্রেম আসলে হয়েই উঠেনি। বেদনার্ত যুবকের হৃদয়ের ভাষা টের পাওয়া যায় এই অংশে, “সব সময় মনে হতো কী এক শূন্যতায় যেন ভরে আছে সব। কী যেন ছিল আমার এখন আর নেই।” ষষ্ঠ গল্প- অকালসন্ধ্যা। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবন সংগ্রাম এবং জটিলতার গল্প। বউ-শাশুড়ির চিরন্তন সংঘাত নিয়ে একটি পংক্তি উল্লেখযোগ্য, “সব শাশুড়িই এককালে বউ ছিলেন আর সব বউই ভবিষ্যতে শাশুড়ি হবার আশা রাখে, তবু বিরোধ ওদের এ জীবনে মিটল না”। সপ্তম গল্প- বেড়ি। তৎকালীন সময়ে নারীদের পরাধীনতা আর দুঃসহ জীবন-যাপনের গল্প! জহির রায়হান নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে তারা বিনা সংশয়ে বইটি পড়তে পারেন। #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা