বইয়ের বিবরণ
কয়েকজন অর্ধেক মানুষ নিয়ে এক বাক্যে যদি কিছু বলতে হয়, তাহলে বলতে হবে, প্রতিটি গল্পের মধ্যে সত্যিকারের গল্প আছে। চরিত্রগুলো জীবন্ত—বেশির ভাগই আমাদের চেনা মানুষ। গল্পগুলোর ভাষা সরল ও গতিময় কিন্তু আনন্দদায়ক। প্রতিটি গল্পে আছে লেখকের নিজস্ব বোধ ও দর্শন—সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করলে সেটি পাঠকের চোখ এড়াবে না। লেখকের কথাসাহিত্য যাঁরা আগে পড়েছেন, তাঁরা জানেন যে একবিন্দু একঘেয়ে না হয়ে তাঁর লেখা পাঠ করা যায়। সেই পাঠ সব সময়ই আনন্দময়।
নতুন এ আনন্দযাত্রায় স্বাগতম।
- শিরোনাম কয়েকজন অর্ধেক মানুষ
- লেখক রাসেল রায়হান
- প্রকাশক চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন
- আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৯৭৪৫২-১-১
- প্রকাশের সাল ২০২৩
- মুদ্রণ 1st Published
- বাঁধাই হার্ডকভার
- পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮৮
- দেশ বাংলাদেশ
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

রাসেল রায়হান
রাসেল রায়হান। জন্ম ৬ ডিসেম্বর। পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। কথাসাহিত্য ও কবিতা—দুই মাধ্যমেই স্বচ্ছন্দ। প্রকাশিত উপন্যাস তিনটি—একচক্ষু হরিণীরা; অমরাবতী; আরও গভীরে। কবিতাগ্রন্থ চারটি—বিব্রত ময়ূর; সুখী ধনুর্বিদ; তৃতীয় অশ্বারোহী; ইহুদির গজল। বিব্রত ময়ূর-এর পাণ্ডুলিপির জন্য মার্কিন গবেষক অধ্যাপক ক্লিনটন বি সিলি ও প্রথমা প্রকাশনের যৌথ উদ্যোগে প্রবর্তিত ‘জীবনানন্দ দাশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ১৪২২’ পেয়েছেন। একই গ্রন্থের জন্য পরবর্তীকালে পেয়েছেন ‘মাহবুবুল হক শাকিল পদক ২০১৭’। বর্তমানে দৈনিক প্রথম আলোয় কর্মরত।
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন

Rafia Rahman
১৫ Mar, ২০২৩ - ৭:১৭ PM
বই: কয়েকজন অর্ধেক মানুষ লেখক: রাসেল রায়হান জনরা: সমকালীন গল্প সংকলন প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত প্রকাশনী: চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৮৭ মুদ্রিত মূল্য: ২৬০/- নয়টি ছোট গল্পের সংকলন ❝কয়েকজন অর্ধেক মানুষ❞। আমাদের আশেপাশে ঘটতে থাকা কিছু ঘটনা গল্পাকারে দেখানো হয়েছে। পেন্ডুলাম: একজন সন্তানের কাছে সবচেয়ে কষ্টকর সময় যখন নিজের মাকে বাবার হাতে অপমানিত হতে দেখে। আর সে তা দেখতে বাধ্য। এমনই একটা দৃশ্যের বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু কোন পাপের কথা বলা হয়েছে এটা স্পষ্ট না। শুভ মৃত্যুদিন: প্রিয়তমাকে কি অন্যের হাতে তুলে দেওয়া সহজ? এর জবাব রয়েছে ছোট গল্পটিতে। তেমন ভালো লাগেনি। অতি-আবেগের তাৎক্ষণিক কিছু সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই নেই আসলে। কেউ কথা রেখেছিল: প্রিয়জনের বিয়োগে বা চরম কষ্টের সময় মানুষ সাধারণত তার মনের কথা কাউকে বলতে চায়। আরও ভালো হয় যদি বলা যায় অপরিচিত কাউকে। দু'জনের কষ্টের দিনগুলোর কথা উঠে এসেছে কিন্তু গল্পের নামের সাথে প্লট মিলে নায়। পরস্পরা: যুদ্ধের সময় চলছে। সামনে ঈদ। মুক্তিযোদ্ধাদের মনে বাড়ি ফেরার আকুতি যেমন প্রবল তেমনি মাতৃভূমি স্বাধীন করারও। ছেলের অপেক্ষায় বাবা-মা ও বোন। পাকবাহিনী থেকে মুক্ত হবে দেশ তখন ঘরের ছেলে ঘরে ফিরবে। সুন্দর একটা গল্প। পরাজিগীষা: বিয়ে বাড়িতে চুরি হয়েছে! চোর খোঁজার জন্য ডাকা হয়েছে বিশু কবিরাজকে। অতিপ্রাকৃত উপায়ে চোর ধরা হবে। কিন্তু মীন রাশির জাতক হওয়ার জন্য ঘটনায় গন্ডগোল শুরু হয়। আর এই গন্ডগোলের রহস্য খোলসা করা হয়নি। বলতে গেলে যখনই গল্পটা ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছিল তখন হুট করে শেষ! একজন সুখী ঘুমকাতুরে মানুষ: বাঙালি আরামপ্রিয় জাতি এটা আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু গল্পের সুখী মানুষটি অতি আরামপ্রিয়। ঘুমই যেন তার কাছে সব। বিয়ের পরও তেমন পরিবর্তন দেখা যায় না। কিন্তু যখন কোল জুড়ে ফুটফুটে সন্তান আছে কেমন যেন বদলে যায় সব। ভালো লেগেছে। স্টুপিডিটি সিনড্রোম: কোনোকিছুকে আমরা নিজেদের মতো বিশ্লেষণ করতে পছন্দ করি। সেটা আদোও ঠিক কি না ভাববার সময় কই আমাদের? কনসেপ্ট ভালো হলেও প্লট ভালো লাগে নাই। করুণ বাঁশি: আশেপাশের অপরাধ দেখে আমরা অনেকেই হতাশ হই, আফসোস করি। আবার কেউ বা অপরাধীর বদলে অপরাধের শিকার হওয়া ব্যক্তিকে দোষারোপ করি। কিছুদিন পর আমরা সব ভুলেও যাই। কিন্তু যখন সেই অপরাধ নিজের সাথে হয় তখন? বইয়ের সবচেয়ে পছন্দের গল্প। গল্পটা তিনজন বাবার। বাবা কেন বলছি? কারণ অপরাধ দেখেও মৌন ছিলেন তারা কিন্তু যখন অপরাধ হয় সন্তানের প্রতি রুখে দাঁড়ান, গর্জে উঠেন। যে অপরাধগুলোর কথা বলা হয়েছে তা আমরা প্রতিনিয়ত দেখে চলেছি। অনেকের কাছে এখন অপরাধগুলো অপরাধই মনে হয় না। কিন্তু সুবলবাবুর মতো কিছু মানুষ এখনও রয়েছেন। যাঁরা সাধারণ বেশে অসাধারণ কাজ করে চলেছেন। দুজন অর্ধেক মানুষ: বড়ো পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ হয়ে ওঠেনি জাভেদের। বুকের সুপ্ত স্বপ্ন প্রায়ই পীড়া দেয়। অবশেষে সে দিন আসে... জীবনের মঞ্চে অভিনয় করে কাউকে খুশি করা কি যেনতেন ব্যাপার? এই লেখাটাও বেশ ভালো লেগেছে। আমরা কমবেশি সবাই দুঃখী, কেউ প্রকাশে তো কেউ আড়ালে। কিন্তু কতজন পারেন নিজের দুঃখকে ভুলে অন্যের সুখের কারণ হতে? অল্প কয়েকটা বানান ভুল আছে। কিছু শব্দ জোড়া হয়ে গেছে। এছাড়া সম্পাদনা ও প্রুফ রিডিং ভালো বলা যায়। বইয়ের প্রোডাকশনও বেশ ভালো। প্রচ্ছদটা মোটামুটি। #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা

Arafat Ahamed Rifat
২৫ Feb, ২০২৩ - ২:৫৭ PM
পড়লাম রাসেল রায়হানের ছোটো গল্পের বই ‘কয়েকজন অর্ধেক মানুষ’। তাকে আমি মূলত কবি হিসেবে জানতাম। কিন্তু তিনি তো অলরাউন্ডার। কবিতার পাশাপাশি গল্প এবং উপন্যাসও লিখেছেন। এবার বইমেলায় তার এই ছোটো গল্পের বই এবং উপন্যাস ‘অমরাবতী’ কিনেছি। গল্পগুলো নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। পেন্ডুলাম: বাঙালির কোনো এক অলিখিত সংবিধানে হয়তো লেখা আছে পান থেকে চুন খসলেই একজন স্বামী তার স্ত্রীকে শাস্তি দিবেন। অবশ্য অনেক সময় পান থেকে চুন খসারও প্রয়োজন হয় না। পৈশাচিক এই সংস্কৃতির চর্চা সবচেয়ে বেশি হয় গ্রাম অঞ্চলে। গ্রামে বেড়ে উঠার জন্য এর সাথে আমি বেশ পরিচিত। আমার কাছে জঘন্য লাগে যে বিষয়টা, সন্তানের সামনে বাবা তার মাকে অত্যাচার করছেন অথবা মায়ের গায়ে হাত তুলছেন। এমনই তথাকথিত বউ পিটানো বা অত্যাচারের সংস্কৃতি উঠে এসেছে পেন্ডুলাম গল্পে। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হচ্ছে, পুরো গল্পটাই সন্তানের জবানিতে লেখা। গল্পের দুটো লাইন হুবহু তুলে দিচ্ছি— আম্মা কান ধরে ওঠবস করতে শুরু করেন। পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত আর লজ্জাকর দৃশ্যটি আমার সামনে দৃশ্যায়িত হতে থাকে। আমি সৃষ্টিকর্তাকে ডাকি। সচরাচরের মতোই তিনি আমার ডাক শোনেন না। গল্পের শেষে পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগবে, আসলেই কি গল্পকথকের মায়ের কোনো দোষ ছিলনা? আমার চোখে গল্পে একটা বানান ভুল মনে হয়েছে। ‘বড়’। আমি যদি ভুল না করে থাকি এখন ‘বড়ো’ শুদ্ধ। শুভ মৃত্যুদিন: প্রতিটা বন্ধু মহলে এমন একজন বন্ধু থাকে, যে তার পাগলামিতে সবাইকে মাতিয়ে রাখে। শুভ মৃত্যুদিন গল্পের গল্প কথকের এমন এক বন্ধু একদিন ঘোষণা করেন, তিনি তার মৃত্যুদিন পালন করবেন। অ্যাঁ! কী সব গাঁজাখুরী কথাবার্তা। জীবদ্দশায় নিজের মৃত্যুদিন পালন করা যায় না-কি? গল্পের শেষে সেই বন্ধুটির চোখে তীব্রভাবে বাঁচার তৃষ্ণা দেখতে পান গল্প কথক। গল্পের সিংহভাগ জুড়েই থাকে গল্প কথক এবং নবনীতার প্রেম। এটাকে দুজন মানুষের প্রেমের গল্পও বলা যেতে পারে। না, ঠিক দুজন নয়, তিনজন। গল্প কথকের পাগলাটে বন্ধু শাহেদকেই বা বাদ দেই কী করে? গল্পে একটা টাইপিং মিস্টেক হয়েছে। ১৭ পৃষ্ঠায় ‘অনু’ এর জায়গায় ‘অনি’ লেখা হয়েছে। কেউ কথা রেখেছিল: ‘কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখেনি।’ অবশ্য গল্পে কেউ একজন কথা রেখেছিল। আমরা সাধারণ দুঃখ ভাগাভাগি করি বন্ধু বা পরিচিত কারও সাথে। কিন্তু এই গল্পে একজন দুঃখী অপরিচিত একজনকে তার দুঃখের কথা বলেন। গল্প বলতে গিয়ে জানতে পারেন, তার জীবনের দুঃখের চেয়ে অপর মানুষটির জীবনের দুঃখই বেশি। এটাকে দুজন দুঃখী মানুষের গল্পও বলা চলে। পরম্পরা: এটি মুক্তিযুদ্ধের গল্প। একজন মুক্তিযোদ্ধার অবর্তমানে অপর একজন মুক্তিযোদ্ধার দায়িত্ব গ্রহণের গল্প এটি। একজন শহিদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের প্রতি অপর একজন মুক্তিযোদ্ধার ছোট্ট একটি কর্তব্য পালন ফুটে উঠেছে এই গল্পে। এই গল্পে একটা ভুল ধরা পড়েছে আমার চোখে। গল্পের শুরুতে সময়কাল বলা হয়েছে নভেম্বরের শেষ। আবার গল্পের এক জায়গায় বলা হয়েছে, আগামী শুক্র-শনিবার ইদ। ১৯৭১ সালে ইদুল ফিতর দিনটি ছিল ২০শে নভেম্বর, শনিবার। সেক্ষেত্রে বোঝা যাচ্ছে, গল্পের দিনটা ১৩ থেকে ১৭ই নভেম্বরের মধ্যে। তাই এই সময়কে নভেম্বরের শেষ না বলে নভেম্বরের মাঝামাঝি বলা উচিত। আর গল্পে লেখক ‘ঈদ’ বানান ব্যবহার করেছেন, যা বর্তমানে ভুল। যদিও প্রথম আলো সহ বড়ো বড়ো পত্রিকা এখনো ‘ঈদ’ বানান ব্যবহার করে। পরাজিগীষা: বন্ধু একটা সুন্দরী মেয়ে পটিয়ে ফেললেই কেন জানি আমাদের হিংসা হয়। পরাজিগীষা গল্পে বন্ধু জাহিরের প্রতি একটু বেশিই হিংসা হয়েছিল সুলতানের। তাই তো তিনি জাহিরকে চোর সাজাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার বিবেক জাগ্রত হয়। শেষে একটা প্রশ্ন থেকে যায়, জাহির কি আসলেই চোর? গ্রামে বেড়ে উঠার জন্য কবিরাজদের বাটি চালান, লাঠি চালান, চাল পড়া, খুদ পড়ার সাথে আমি বেশ পরিচিত। লেখক এই গল্পে বাটি চালান নামে গ্রামের এক কুসংস্কারকে তুলে ধরেছেন। এছাড়াও ‘একজন সুখী ঘুমকাতুরে মানুষ’, ‘স্টুপিডিটি সিনড্রোম’, ‘করুণ বাঁশি’, ‘দুজন অর্ধেক মানুষ’ নামে আরও চারটি গল্প আছে বইয়ে। সবগুলো নিয়ে আলোচনা করলে মজা চলে যাবে। তবে ‘করুণ বাঁশি’র প্লটটা দারুণ। এই প্লটে ভালো উপন্যাস দাঁড় করানো যাবে। যারা সহজ সাবলীল ভাষার দারুণ গল্প পড়তে চান, তারা বইটি পড়তে পারেন। গল্পগুলো আমার ভালো লেগেছে। তবে ছোটো ছোটো ভুলগুলো না থাকলে ষোলোআনা স্বস্তির ঢেকুর তোলা যেত। বইটি প্রকাশ করেছে চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন। গায়ের দাম ২৬০ টাকা। #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা