সাধারণ এক গৃহবধূ ইসরাত, কর্পোরেট পলিটিক্সে তার স্বামী শাহেদের চাকরিটা চলে যায়। এরপর জমা টাকা খরচ করে ঢাকায় টিকে থাকতে তাকে অনেক হিসেব করতে হয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষরক্ষা হয় না।
ঢাকার পাট গুছিয়ে শাহেদ গ্রামে চলে যায়। ইসরাত ওঠে বড় ভাইয়ের বাসায়। সেখানে ভাবীর বিমাতাসুলভ আচরণ আর শাহেদের শীতল ব্যবহার তাকে অনিশ্চয়তার সাগরে ফেলে দেয়। ঠিক সেই সময়ে অদ্ভুতভাবে একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করার সুযোগ পেয়ে ইসরাত প্রবেশ করে শোবিজ জগতে।
অনভিজ্ঞ ইসরাত পারবে কি নিজের সম্মান আর সংসার বাঁচিয়ে মিডিয়া জগতে টিকে থাকতে? নাকি বলি হবে অচেনা কর্পোরেট ভালোবাসার নামহীন কোনো গল্পে.....
বইয়ের বিবরণ
- শিরোনাম শ্বেতপদ্ম
- লেখক শানজানা আলম
- প্রকাশক চলন্তিকা
- প্রকাশের সাল ২০২৩
- বাঁধাই হার্ডকভার
- দেশ বাংলাদেশ
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
অনন্যা
২৮ Feb, ২০২৩ - ৮:১৬ PM
বই: শ্বেতপদ্ম লেখক: শানজানা আলম প্রকাশনী: চলন্তিকা মুদ্রিত মূল্য: ২৮০৳ কাহিনি সংক্ষেপ: "এই শহরটা চলে টাকার ওপর, এটাই সত্য। এখানে টাকা থাকলে চারপাশ ঝলমলে হয়। টাকা না থাকলে নিকষ কালো মেঘে ঢাকা থাকে মাথার উপরের আকাশ।" স্বামী, সন্তান নিয়ে দিব্যি বহাল তবিয়তে চলা ইসরাতের ভালোবাসায় মোড়া সংসারে হঠাতই নেমে আসে নিকষ কালো অন্ধকার, মাথার উপরের আকাশটা ঢেকে আসে কালো মেঘে। সাংসারিক জীবনের সাময়িক বিরতি নিয়ে তার স্বামী শাহেদ চলে যায় গ্রামের বাড়ি আর সে চলে যায় ভাইয়ের ছোটো সংসারে। কিন্তু কী এমন ঘটেছে তাদের জীবনে, যার কারণে এই বিরতি? ইসরাতের ভাই ইকবাল বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে বাড়িতে আশ্রয় দিলেও ভাবি তাহেরা বেগম ছিলেন বিরুপ ভাবাপন্ন। শাহেদ ও ইসরাত দু'জন কি দুরত্বে থেকে ভালো থাকবে? বিশেষ করে ইসরাত ও তার মেয়ে তিন্নি? ইসরাতের মেঘে ঢাকা আকাশে কিঞ্চিৎ সূর্যের আলো হয়ে উঁকি দেয় আদনান ওয়াহিদ। ইসরাত পেয়ে যায় একটা বিজ্ঞাপনের সুযোগ। এরপর একে একে বেশ কয়েকটা কাজ আসে তার হাতে। নতুন পথে কাজ শুরু হয় তার ফিফটি টু এন্টারটেইনমেন্ট এর সাথে। ভাই-ভাবি ও শাহেদ কিংবা শাহেদের পরিবার কাউকে না জানিয়েই শুরু হয় তার নব পথচলা। কে এই জিনান ফেরদৌস যে সাধারণ একজন মেয়েকে এত বড়ো কোম্পানির জন্য মডেল করতে চান? কী তার উদ্দেশ্য? তার সাধারণের মাঝে অসাধারণ লুকটাই পরিচয় করিয়ে দেয় সানশাইন গ্রুপের এমডি জিনান ফেরদৌসের সাথে। তার সাথে কাজ করা নিয়ে সিদ্ধান্তের দোলাচালে দুলতে দুলতে শাহেদকে জানায়। অন্তর ও বাহিরের দ্বিমতকে একদিকে রেখে সে-ও স্ত্রীকে কাজের অনুমতি দিয়ে ফিরে আসে ঢাকায়। শুরু হয় আবার পরিমার্জিত সংসার। রাতারাতি ইসরাতের উন্নতি ঘরে-বাইরে সকলের চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়ায়। শাহেদের সাথে শুরু হয় তার ভালোবাসা ও সন্দেহের শীতল দ্বন্দ। কে জিতবে এই দ্বন্দে? ভালোবাসা না-কি সন্দেহ? কী হবে ইসরাত ও শাহেদের সম্পর্কের পরিণতি? ইসরাত কি পারবে তার বেয়ে চলা সিঁড়ির শেষ ধাপটিতে পৌঁছাতে? পাঠ প্রতিক্রিয়া: একজন নারীর পক্ষে বন্ধুর পথকে মসৃণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়া অতটা সহজ হতে দেয় না আমাদের সমাজ। এ বিষয়ে সাফল্য অর্জন করতে দৃঢ়চেতা হতে হয়। ইসরাত সে জায়গায় সফল। গল্পের শুরুতে আদনান ওয়াহিদের সাথে ঘটনাক্রমে পরিচিত হয় গৃহবধূ ইসরাত। তার মাধ্যমে ইসরাত খুঁজে পেল ভবিষ্যতের পথ। ইসরাতকে নিয়ে আদনানের বিচক্ষণ চিন্তা সত্যিই মুগ্ধ করার মতো। শাহেদের চিন্তাধারায় তাকে একজন সুপুরুষ মনে হয়নি। মানুষ ধাক্কা না খেলে ঘুরে দাঁড়ায় না সহজে। ইসরাতের ভাবি তাহেরা এজন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য। তার ধাক্কায় ইসরাত ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু সহোদর ইকবালের কার্য অকৃতজ্ঞতার পরিচায়ক। জিনান ফেরদৌস চরিত্রটা বেশ আকর্ষণীয় ছিল। তার কার্যকলাপ পাঠককে ভ্রমে ফেলেছিল ইসরাতের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে। সত্যি বলতে কী প্রত্যাশা তার ইসরাতের কাছে, আর ইসরাতই বা কতদূর যাবে তার পরিণতিও গল্পের আকর্ষণ বর্ধিত করে। ইসরাতের বিপদের সময় তার মাধ্যমে লেখক যে মেসেজটা পাঠককে দিয়েছেন তা আমার মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারার সাথে হুবুহু মিলে গেছে। একটা মেয়ে যখন পড়াশোনা করে তখন সমাজের কিছু মানুষ নাক ছিঁটকায়। কিন্তু নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে স্বামীর উপার্জনের উপর নির্ভর করা নারী যখন বিপদে পড়ে তখন তাকে সাহায্য থাক দূর কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দেওয়ার মানুষ পাওয়া দুষ্কর। অথচ একজন নারী যখন নিজ দক্ষতায় সাফল্যের পথে উঠতে থাকে তখন তাকে নিয়ে কাঁদা ছিটানোর মানুষ অভাব নেই। এই ব্যাপারটা চিন্তা করলে তরুণ নারীদের জন্য একটা বার্তাবাহক বই "শ্বেতপদ্ম"। গল্পের পটভূমি, বর্ণনা, চরিত্রায়ন সব মিলিয়ে বেশ চমৎকার একটা বই শানজানা আলম এর "শ্বেতপদ্ম"। #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা