বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো জটিল এক হিসাব কষেছিল। কেবল পক্ষ বা বিপক্ষের সোজা হিসাবের বাইরে কাজ করেছিল আরও নানা সমীকরণ; ঘটনার পরম্পরা ও প্রভাব-প্রতিক্রিয়া। আর তার রেশ কেবল নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। অবমুক্ত হওয়া মার্কিন গোপন দলিলের তথ্য বিশ্লেষণ করে লেখা বইটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহীদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।
বইয়ের বিবরণ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পৃথিবী ছিল মার্কিন আর সোভিয়েত—এই দুই শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রভাববলয়ে বিভক্ত। সমাজতন্ত্রী সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার প্রভাববলয়ের দেশগুলো ছিল সাধারণভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। কিন্তু আরেক সমাজতান্ত্রিক দেশ চীন ছিল বিপক্ষে। বৃহৎ শক্তিগুলোর এই অবস্থানগত বাস্তবতা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিয়ামক ভূমিকা রেখেছিল। সেই জটিল-কঠিন সময়ে বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যেসব গোপন চিঠিপত্র, দলিল বা তথ্য আদান-প্রদান করেছে, সেগুলো এখন অবমুক্ত। চীনের হুমকির বিষয়টি কি স্রেফ একটা অপপ্রচার ছিল? নাকি সত্যিই সে সময় পাকিস্তানের তরফে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে চীনকে অনুরোধ করা হয়েছিল? সোভিয়েত ইউনিয়ন কি আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থনের ব্যাপারে দ্বিধায় ছিল? বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয় কেন ২০ ঘণ্টা বিলম্বিত হলো? মার্কিন গোপন দলিলগুলো বিশ্লেষণ করে সেসব প্রশ্নের জবাবসহ অজানা নানা তথ্য বের করে এনেছেন প্রয়াত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান। আগ্রহী পাঠকের জন্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অজানা এক দিক উন্মোচন করবে এ বইটি!
- শিরোনাম মার্কিন দলিলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
- লেখক মিজানুর রহমান খান
- প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন
- প্রকাশের সাল ২০২২
- মুদ্রণ 1st
- বাঁধাই হার্ডকভার
- দেশ বাংলাদেশ
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
মিজানুর রহমান খান
জন্ম ৩১ অক্টোবর, ১৯৬৬, বরিশাল। তিন দশকের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন। বিচার বিভাগ ও সাংবিধানিক ইস্যু নিয়ে তাঁর গভীর অনুসন্ধানী ও গবেষণাধর্মী লেখা সুধীমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে তথ্য, নথি ও বই সংগ্রহ করতেন তিনি। তাঁর এমন সব লেখালেখি থেকে ২০১৩ সালে প্রথমা থেকে প্রকাশিত হয় মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড। অনূদিত বই বাংলাদেশ: স্বাধীনতা ও ন্যায়ের সন্ধানে। সর্বশেষ পেশাগত জীবনে তিনি প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি মৃত্যু বরণ করেন।
প্যাকেজ: বঙ্গবন্ধু -১
এবিএম মূসা, মতিউর রহমান, মিজানুর রহমান খান, নুরুল ইসলাম
১,৩১২.৫০ টাকা ১,৭৫০.০০ টাকা
মার্কিন দলিলে জিয়া ও মঞ্জুর হত্যাকাণ্ড: এরশাদের পতন এবং বিএনপির জন্ম
মিজানুর রহমান খান
১৮০.০০ টাকা ২৪০.০০ টাকা
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
মেসবাহ
১৫ Mar, ২০২৩ - ৮:২১ PM
মার্কিন দলিলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মিজানুর রহমান খান, ঢাকা, প্রথমা প্রকাশন, প্রথম প্রকাশ : অগ্রহায়ণ ১৪২৯, নভেম্বর ২০২২, ১৩৬ পৃষ্ঠা, মুদ্রিত মূল্য: ৩৫০ টাকা। লেখক মিজানুর রহমান খান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে দেশ-বিদেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য, দলিল, নথিপত্র ও বই সম্পর্কে অনুসন্ধানী গবেষক। এ সম্পর্কিত লেখকের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ’১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল’ ২০০৮ সালে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়। এছাড়া তাঁর ‘মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড ’ এবং ‘মার্কিন দলিলে বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা হত্যাকাণ্ড ’ পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এ সিরিজের শেষ বই হচ্ছে ২০২২ এর ডিসেম্বরে প্রকাশিত ’মার্কিন দলিলে জিয়া ও মঞ্জুর হত্যাকান্ড এরশাদের পতন এবং বিএনপির জন্ম’ । ’ইয়াহিয়া খান দেড় লিটারের বেশি মদ পান করে বলেছিলেন, ভারতের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধে যাচ্ছেন । ’ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে অবমুক্ত করা এ রকম গোপন মার্কিন তারবার্তা এই বইয়ের বিষয়বস্তু। লেখক মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে বিজয় অবধি চূড়ান্ত দিন গুলোর কূটনৈতিক ভাষ্যের চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন্ । ১৯৭১ সালের মার্চের শুরুতে ‘পাকিস্তান অখণ্ডতা রাখতে শক্তি প্রয়োগ করতে পারে’ – এ তথ্য জেনেও মার্কিন সহকারী নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার তা অগ্রাহ্য করার সিদ্ধান্ত নেন। ডিসেম্বরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হলে প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও কিসিঞ্জার ভারতকে চাপে রাখার সিদ্ধান্ত নেন । এছাড়া তৃতীয় কোন দেশের মাধ্যমে পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা দেয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বক্তব্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন দক্ষিণ এশিয়ার এ সংকটে সরাসরি বিপরীত মেরুতে অবস্থান নেয় । কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিসতানের মধ্যে কোন সামরিক চুক্তি না থাকায় নিক্সন-কিসিঞ্জার উভয়েই জানতেন তাঁদের পক্ষে পাকিস্তানের জন্য ‘মুখের কথা’ (লিপ সার্ভিস) ছাড়া আর কিছু করা সম্ভব নয়। মার্কিন অবমুক্ত করা নথি অনুযায়ী বঙ্গোপসাগর অভিমুখে ‘সপ্তম নৌ-বহর’ প্রেরণ করা ছিল যুদ্ধের মহড়া বা ড্রেস রিহার্সেল মাত্র। পকিস্তান বাংলাদেশের ক্ষতিপূরণ হিসেবে কাশ্মির দাবি করে। কিন্তু ভারত পশ্চিম পাকিস্তানে আক্রমণ করবেনা অর্থাৎ আজাদ কাশ্মির দখল করবেনা নিশ্চিত করে পাকিস্তান ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমান্ডের নিকট আত্মসমর্পণ করে। স্পাই থ্রিলার পড়তে গেলে যেমন সিআইএ বা মোসাদের গোপন তৎপরতার কথা জানা যায়, তেমনি গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত বিবরণের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কথোপকথনে ঠাসা এ বইয়ের প্রতিটি পাতা। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পারষ্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিবরণ পাওয়া যাবে এখানে। অবমুক্ত নথিতে ১৯৭১ সালের আগস্টে করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি, পশ্চিম পাকিস্তানের কোন ভূ-খণ্ড ভারত যাতে দখল না করে সে বিষয়ে মার্কিন তৎপরতা এবং ভারতের বিরুদ্ধে চীনা হুমকির কথা জানা যায়। এ বই এর পাঠক মাত্রই বুঝতে পারবেন নিক্সন-কিসিঞ্জার কিভাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকাতে তৎপর ছিলেন। লেখক অবমুক্ত করা নথির বিশ্লেষণ করে পাঠককে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পরাশক্তিদের ভূমিকা সম্পর্কে আগ্রহী করেছেন, কিন্তু তাঁরই রচিত ‘ মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড’ গ্রন্থে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে ধারাবাহিক ও সার্বিক আলোচনা করেছেন – এ বই য়ে তার অনুপস্থিতি টের পাওয়া গেছে। অবশ্য এ গ্রন্থ প্রকাশের বছর খানেক আগে লেখক ইহকাল ত্যাগ করেন, তাই ধরে নেয়া যায় লেখক এটি সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। তবে এটি অনস্বীকার্য লেখক অবমুক্ত করা মার্কিন নথি বিশ্লেষণ করে গৌরবের ১৯৭১ ও রক্তাক্ত ১৯৭৫ সম্পর্কে যে লেখনী ধারা তেরি করেছেন তার কৃতিত্ব একান্তই লেখকের নিজস্ব। যে সমস্ত তরুণ পাঠক প্রাথমিক গোয়েন্দা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংরাদেশের অভ্যুদয় নিয়ে তৎকালীন পরাশক্তির ভূমিকা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তাদের জন্য বইটি অবশ্য পাঠ্য। #প্রথমাডটকমকথাপ্রকাশবইরিভিউপ্রতিযোগিতা