বইয়ের বিবরণ
যে গল্পের শেষ নেই গ্রন্থটি দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন মূলত কিশোরদের ইতিহাস জানাতেই। মূলত তিনি বৈজ্ঞানিক চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ গড়ে তোলার জন্যই এ গ্রন্থ রচনায় ব্রত হয়েছেন। এ গ্রন্থের মাধ্যমে একজন কিশোর পৃথিবীর বহিঃপ্রকাশ ও বিস্তারের সহজেই হিসাব-নিকাশ করতে পারবে। জানতে পারবে পৃথিবীর রহস্য ও উদ্ঘাটন সম্পর্কে । লেখক সে লক্ষ্যে সহজ ভাষাশৈলীর মাধ্যমে পৃথিবীর উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে তার লেখনিতে তুলে ধরেছেন।
- শিরোনাম যে গল্পের শেষ নেই
- লেখক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
- প্রকাশক টাঙ্গন
- আইএসবিএন 9789849588245
- প্রকাশের সাল 2021
- মুদ্রণ 1st
- বাঁধাই হার্ডকভার
- পৃষ্ঠা সংখ্যা 111
- দেশ বাংলাদেশ
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন

Nabonita Pramanik
১৫ Feb, ২০২৩ - ১০:৪৯ AM
❝গল্প❞ তৈরি হয় কেমন করে? পৃথিবী জুড়ে কত শত গল্প। অথচ রুনু সন্ধান করছে এমন একটা গল্পের, যার কোনো শেষ থাকবে না। হঠাৎ করে দেখলে মনে হতে পারে, এমন গল্প থাকা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে একটু যদি পেছনে ফিরে তাকাই, ভেবে দেখি নিজেদের ভুলে যাওয়া ইতিহাস - তাহলে কিন্তু তেমন একটা গল্প আমরা ঠিক পেয়ে যাব। আর এই গল্পের সবচেয়ে মজার ব্যাপারটা কী জানেন? গল্পের নায়ক আমাদের খুব চেনা। প্রকৃতপক্ষে; আপনি, আমি - আমরা সবাই সেই গল্পের নায়ক। কারণ এই গল্পটা তো আমাদের নিজেদের-ই গল্প! সে অনেক আগের কথা! কম করে হলেও সাড়ে চারশ কোটি বছর হবে! এবং এই সংখ্যাটা দিয়েই পৃথিবীর আনুমানিক বয়স ধারণা করা হয়। কিন্তু এখানেও মজার একটা ব্যাপার আছে; পৃথিবীর বয়স গণনা করা হয় কেমন করে? কী সেই উপায়? তাছাড়া শুধু কি বয়সের হিসেব? সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যাপারটাই বা কতটুকু জানি? একসময় পৃথিবীতে জল, পাহাড়, মাটি, গাছ - কিছুই ছিল না। ছিল শুধু আগুন। সেই আগুন নিভে গিয়ে পৃথিবীর বুকে জন্ম নিল প্রাণ। খুলে গেল সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। কীভাবে? আণুবীক্ষণিক প্রোটোপ্লাজম থেকে শুরু। সেখান থেকে বদলে যেতে লাগল প্রাণের ধারা। ট্রাইলোবাইটদের যুগের শেষে জলের তলে সংঘবদ্ধ হলো নতুন ধরনের প্রাণ, অস্ট্রাকোড্রাম। এককোষী জীব ধীরে ধীরে বহুকোষী প্রাণীতে রূপান্তরিত হলো। এবং এভাবেই একদিন পৃথিবীর বুকে দেখা দিল আমাদের পূর্বসূরি, প্রাইমেট। কিন্তু কীসের গুণে আমরা মানুষ হয়ে উঠলাম? বন্য থেকে সভ্য হয়ে ওঠার গল্পটাই বা কী? কেবল তো শুরু। আরও কত গল্প বাকি। মিশরের পিরামিড, গ্রীসের সমৃদ্ধি আর রোমের দম্ভ তৈরির গল্প। সভ্যতার ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে মানুষের জিতে যাওয়ার গল্প কিংবা হেরে যাওয়ার গল্প। সবচেয়ে বড় কথা; ভবিষ্যতের পৃথিবীটাকে আপনি, আমি - আমরা সবাই কতটুকু জয় করতে পারি, সেই গল্প যে এখনো বাকি! ❝যে গল্পের শেষ নেই❞ মূলত গবেষণামূলক/ প্রবন্ধ ঘরানার একটা বই; যেখানে প্রাধান্য পেয়েছে মানুষের শূন্য থেকে শিখরে ওঠার বিচিত্র সব গল্প। প্রবন্ধের বইগুলো পড়ার ক্ষেত্রে; চরিত্রায়ণের তুলনায় মূল গল্পটাই আমার কাছে বেশি প্রাধান্য পায়। যেহেতু কাঠখোট্টা ঘরানার বই; কাজেই লেখকের লেখার ধরনটা সুন্দর না হলে গল্পটা ঠিক জমে না। এদিক দিয়ে অবশ্য ❝যে গল্পের শেষ নেই❞ যথেষ্ট সফল বলা যায়। কেননা বিজ্ঞানের জটিল তত্ত্বকথার সাথে ইতিহাস ও দর্শনের মেলবন্ধন ঘটিয়ে দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বইয়ের গল্পগুলো লিখেছেন খুবই চমৎকারভাবে। এক্ষেত্রে লেখার ধরন এতটাই প্রাঞ্জল; যার কারণে কমবেশি সকল বয়সের মানুষ-ই বইটা পড়ে আনন্দ পাবে। বইয়ের গল্পগুলো এগিয়েছে দুই ধাপে। প্রথম ধাপের গল্পগুলো জুড়ে বর্ণিত হয়েছে পৃথিবীর সৃষ্টিতত্ত্ব, প্রাণের ইতিহাস, মানুষের বন্য থেকে সভ্য হয়ে ওঠার কথাসহ আরও অনেক কিছু। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের গল্পগুলোতে কেবলই মানুষের রাজত্ব। মূলত দ্বিতীয় ধাপের গল্পগুলো-ই বইয়ের প্রধান আকর্ষণ। কেননা এখানেই মিশর, গ্রীস, রোমের মতো প্রাচীন সভ্যতাগুলোর সমৃদ্ধির রহস্যময় গল্পগুলো উঠে এসেছে। সুন্দর অথচ করুণ সব রহস্যের গল্প! কিন্তু হ্যাঁ; সমৃদ্ধির গল্প তৈরি করা বেশ ব্যয়বহুল। কেননা অফুরন্ত ঐশ্বর্য প্রাপ্তির জন্য কঠিন মূল্য দিতে হয়। আর তাই তো জিতে যাওয়ার যে গল্পটা আমরা জানি; ঠিক তার পেছনে হেরে যাওয়ার গল্পটাও মুখ লুকিয়ে থাকে। সভ্যতার ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে চিরায়ত জয়-পরাজয়ের এই গল্পগুলো উঠে এসেছে বইয়ের পাতায়। এক্ষেত্রে পাঠক যেন নেতিবাচক বার্তা না পায়, সেজন্য লেখকের সতর্কবাণী কিছুটা এরকম- ❝...মনে রাখতে হবে, তখনকার যুগ ছিল নেহাতই তখনকার মত, তখনকার কালে মানুষের অবস্থা ছিল নেহাতই তখনকার কালের মত।❞ বই: যে গল্পের শেষ নেই লেখক: দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা