দোজখনামা (বঙ্কিম পুরস্কার)
লেখক: রবিশংকর বল
বিষয়: ভারতীয় বই, উপন্যাস, পশ্চিমবঙ্গের বই, স্টকে থাকা ভারতীয় বই
বইয়ের বিবরণ
- শিরোনাম দোজখনামা (বঙ্কিম পুরস্কার)
- লেখক রবিশংকর বল
- প্রকাশক দে’জ পাবলিশিং (ভারত)
- আইএসবিএন ৯৭৮৮১২৯৫১০৮৯০
- প্রকাশের সাল ২০১৮
- মুদ্রণ 5th Edition
- বাঁধাই হার্ডকভার
- পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৮৩
- দেশ ভারত
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
মুহাম্মদ আবীর
১৫ Mar, ২০২৩ - ৬:৩৪ PM
অজু সেরে; দোজখ্নামা নিয়ে বসলাম। তকী'র ভাষায় উচ্চারিত হলো~ ❝সবে তো প্রেমের শুরু, এখনই কাঁদছ? দেখো ক্রমে ক্রমে আরো কত কী ঘটে।❞ ভারতের কবর থেকে মির্জা গালিব, অন্যদিকে পাকিস্তানের কবর থেকে সাদাত হোসেন মান্টো শুয়ে- শুয়ে; তাদের বৃত্তান্তসব বলতে থাকেন। কবরের ভেতরে জেগে উঠা মুর্দাদের কথোপকথনের ভেতর দিয়ে উঠে আসে; ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহ থেকে ১৯৪৭-এর দেশভাগ, দাঙ্গার নানা ঘটনাবলী। মির্জা গালিব পিতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন~ ❝বাইরে থেকে ভেসে আসছিল হ্রেষাধ্বনি। তলোয়ার হাতে যখন তার পিতা বেরিয়ে যায় বিবিজানের উদ্দেশ্যে বলেন~ ❛যদি কখনও মরে যাই, দুনিয়ায় আমার কবর খুঁজো না বিবিজান। তোমার দিল্-এ গোর হবে আমার।❞ গালিবকে অনেক মানুষ- বুঝতে চাইতো না, তখন গালিব খোদার উদ্দেশ্যে গজল লিখে~ ❝ঈশ্বর, তারা আমার ভাষা বোঝে না। তুমি তাদের অন্য মন দিও। তা যদি না দাও, আমাকে অন্য ভাষা দিও।❞ মির্জা আসাদুল্লাহ বেগ গালিব গল্পকার মান্টোকে কিসসার মহীমা বোঝাতে গিয়ে বলেন~ ❝আপনি তো কিসসা লিখতেন, তাই বুঝতে পারবেন, কিসসা ক'টা লোক বলতে পারে, ক'জনের লেখার ক্ষমতা আছে? ইতিহাস সবাই লিখতে পারে সেজন্য দরকার শুধু দানেশমন্দি। কিন্তু.. কিসসা লেখার জন্য চাই খোয়াব দেখার ক্ষমতা। তাই কিনা বলুন? খোয়াব ছাড়া লায়লী-মজনুর কিসসা জন্ম নিতে পারত? কত যুগ যুগ ধরে এই কিসসা বেঁচে আছে। আর সিকান্দার? তার সম্রাজ্য আজ কোথায়? ইতিহাস একদিন ধুলো হয়ে যায় মান্টো ভাই; কিসসা বেঁচে থাকে।❞ অন্যদিকে মান্টো তার লিখা গল্প গুলোর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন। ❛ঠান্ডা গোস্তো❜ কোন অশ্লীল লেখনি যে নয় তার বিবরণ উন্মোচন করেন। শক্তিমান উর্দু গল্পকার ইসমত চুঘতাই এর সাথে তার অতৃপ্ত প্রেমের কথা- নগ্নভাবে বলতে থাকেন কবরের অন্ধকার ধূসরতার মাঝ থেকে। তাদের কথোপকথনে মীর তকীর জীবনের অন্তিমদশার কথা আসে। যেখানে মীর তকী রমনীর প্রেমে দিওয়ানা হবার পরবর্তীতে, নিকট স্বজনদের দ্বারা উন্মাদ হিসেবে স্বীকৃতি লাভের কথা; বার বার উচ্চারিত হয়, ঠিক তার কবিতার মতোন করেই। মীরের অবস্থা হয়েছিলো ❝হাতি মরলে পিঁপড়েও লাথি মারে❞ ঠিক ওইরকম। কথোপকথনে যখন প্রেমের কথা উচ্চারণ হয় শুনুন~ ভাইজানেরা, শুনে রাখুন, পাগলামি ছাড়া, অস্বাভাবিকতা ছাড়া কোনও সৃষ্টি, ভালবাসার জন্ম হয় না, ভালোবাসা মাপজোক করে হয় না; তুমি আমাকে এতটুকু দেবে তো, আমি তোমাকে এতোটুকু দেবো, এর নাম সংসার, ভালবাসা নয়, মজার কথা, এইরকম হিসেবনিকেশকে মানুষ ভালোবাসা মনে করে। এতে মোঘল সম্রাটেদের শাসন যেমন খণ্ড খণ্ড স্বল্পকারে এসেছে তেমনি এসেছে ইংরেজ শাসন আমলের কথা। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে যেমন ফিনকি দিয়ে রক্ত বন্যা বয়ে গিয়েছিল, তেমনি দেশ ভাগের দাঙ্গায় মানুষের মাঝে হিংস্রতার বিভীষিকার চিত্র খুব নির্মমাকারে উঠে এসেছে মান্টোর ভাষায়। রুটি- শরাব- আওরত আর বাউন্ডুলে জীবনের উর্দু কবি মির্জা গালিব আর মান্টোর এই সংলাপ যেমন তাদের প্রতিবিম্ব তেমনভাবে তা তামাম ভারববর্ষের প্রতিচ্ছবি। যেমনটা আয়নায় আমরা আমাদের দেখে থাকি। একটি সাপ লেজ থেকে নিজেকেই খেয়ে চলেছে। এর শেষ কোথায়? ঔপন্যাসিক রবিশংকর বল এই দোজখনামা'তে, তা দেখিয়েছেন খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে, তার জাদুকরী শৈল্পিক- শব্দমালা দিয়ে। ▓▓▒▒░░ বইয়ের নাম~ দোজখ্নামা লেখক~ রবিশংকর বল জনরা~ উপন্যাস প্রথম প্রকাশ~ নভেম্বর ২০১০, অগ্রহায়ণ ১৪১৭ পুনর্মুদ্রণ~ মার্চ ২০২০, ফাল্গুন ১৪২৬ প্রচ্ছদ~ শান্তনু দে প্রকাশনী~ Dey's publishing মুদ্রিত মূল্য~ ৪৫০৳ পৃষ্ঠা ~ ৩৮৩ রেটিং~ ১০/১০ #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা ▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁▁