আলালের ঘরের দুলাল

লেখক: টেকচাঁদ ঠাকুর, আনিসুজ্জামান (সম্পাদক)

বিষয়: কথাসাহিত্য, উপন্যাস

১৭২.৫০ টাকা ২৫% ছাড় ২৩০.০০ টাকা

বইয়ের বিবরণ

মাসিক পত্রিকায় ১৮৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮৫৭ সালের জুন পর্যন্ত ‘আলালের ঘরের দুলালে’র ২০টি অধ্যায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। সম্পূূর্ণীকৃত রচনাটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৮৫৮ সালে।

১৮২১ সাল থেকে বাংলায় আখ্যান ও নকশা প্রকাশিত হয়ে আসছে। ১৮৫২ সালে প্রকাশিত হানা কাথেরীন ম্যলেন্সের ফুলমণি ও করুণার বিবরণে উপন্যাস রচনার প্রয়াস আছে। কিন্তু আলালের ঘরের দুলালই প্রথম উপন্যাসপদবাচ্য। তবে অনেকেই একে উপন্যাস বলতে কুণ্ঠিত হন। কাহিনির ধারাবাহিকতা, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের বাস্তব চিত্রাঙ্কণ এবং চরিত্রচিত্রণের দক্ষতা বিবেচনা করে একে উপন্যাসই বলতে হয়। নকশার রীতি এর ওপর প্রভাববিস্তার করেছে। তাই এর চরিত্রগুলি সাদা অথবা কালো রঙ্গে চিত্রিত-সেখানে ধূসরের কোনো স্থান নেই।

আলালের ঘরের দুলালের প্রশংসা যাঁরা করেছেন, তাঁরা সকলেই এর দুটি গুণের কথা বলেছেন-এর ভাষা ও বিষয়বস্তুর দুইই ঘরের থেকে নেওয়া। বঙ্কিমচন্দ্রের কথায়, যে ভাষা সকল বাঙ্গালির বোধগম্য এবং সকল বাঙ্গালি কর্ত্তৃক ব্যবহৃত, প্রথম তিনিই তাহা গ্রন্থপ্রণয়নে ব্যবহার করিলেন।... আর তাঁহার দ্বিতীয় অক্ষয় কীর্ত্তি এই যে, তিনিই প্রথম দেখাইলেন যে, সাহিত্যের প্রকৃত উপাদান আমাদের ঘরেই আছে,Ñতাহার জন্য ইংরাজি বা সাংস্কৃতের কাছে ভিক্ষা চাহিতে হয় না। ... প্রকৃত পক্ষে আমাদের জাতীয় সাহিত্যের আদি “আলালের ঘরের দুলাল”।

আলালের ঘরের দুলালের ভাষা বস্তুতপক্ষে কলকাতার কথ্যভাষা কলকাতার সন্নিহিত বিভিন্ন অঞ্চলের উপভাষা এবং সাহিত্যে ব্যবহৃত সাধুভাষার মিশ্ররূপ। মনে রাখতে হবে, সেযুগে নানারীতির ভাষার মিশ্রণ দুষণীয় বিবেচিত হতো না। প্যারীচাঁদ তাঁর প্রথম দুটি বইতে মৌখিক ভাষার কাছাকাছি এই মিশ্রিত ভাষারীতিই মূলত প্রয়োগ করেছিলেন এবং তাতেই ভাষাব্যবহারের ক্ষেত্রে বড়োরকম পরিবর্তন ঘটে গিয়েছি। তবে, বঙ্কিমচন্দ্র নিজেই বলেছিলেন যে, এ-ভাষাকে আদর্শ বিবেচনা করা যায় না, কিন্তু ভাষা কেমন হওয়া উচিত, তা উপলব্ধি করতে এ-ভাষা সহায়ক হয়েছিল। পরবর্তীকালে ভাষার এ-আদর্শ থেকে সরে এসে প্যারীচাঁদ সাধুভাষাই অবলম্বন করেছিলেন, তবে আলালের ঘরের দুলালে যার সূচনা হয়েছিল, সে-ভাষার ঐতিহাসিক মূল্য চিরকালীন।

এই উপন্যাসে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগের এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের কলকাতা এবং তার আশেপাশের সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের বিশ্বস্ত চিত্র ধরা পড়েছে। দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থায় কেমন ক্ষয় ধরেছিল, তার কিছু পরিচয় এতে পাই। গ্রন্থকার যে আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতির পক্ষপাতী, তা স্পষ্ট বোঝা যায়। নগর ও গ্রাম উভয়েরই চিত্র এতে উপস্থিত। ইংরেজের নব্যসৃষ্ট আদালত কিভাবে কাজ করছে, তাও এতে দেখা যায়। নীতিউপদেশদানের যে- প্রবণতা প্যারীচাঁদের লিছ, তা এতে ফুটে উঠেছে, যদিও তাঁর অনেক রচনায় নৈতিক ভাবের যে-প্রাবল্য, তা এতে নেই। চরিত্রচিত্রণে প্যারীচাঁদ যে একদেশদর্শী ছিলেন, সেকথা আগেই বলা হয়েছে। এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মতিলাল সৎশিক্ষা ও যথাযথ পরিচালনার অভাবে ধনীর আদরের সন্তানের নষ্ট হয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত মতিলালের সঙ্গীরাও-হলধর, গধাধর, রামগোবিন্দ, দোলগোবিন্দ. মানবগোবিন্দ্র-এবং থার প্রশ্রয়দাতার-বাঞ্জারাম, বক্রেরশ্বর, বটলর-সকলেই দুর্বৃত্তস্বভাবের কিন্তু রক্তমাংসের মানুষ। এদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল চরিত্র মোকাজান মিয়া ওরফে ঠকচাচার।

নিজের কৃতকর্মের অসততা সম্পর্কে ঠকচাচা সচেতন, কিন্তু নিজের কাছে এবং অন্যের কাছেও তার সপক্ষে তুলে ধরার মতো যুক্তি তার আছে: ‘দুনিয়াদারি করতে গেলে ভালা বুরা দুই চাই-দুনিয়া সাচ্চা নয়-মুই একা সাচ্চা হয়ে কিরবো? ক্ষণিকের জন্যে দেখা দিলেও ঠকচাচীও আমাদের মনে দাগ কেটে যায়। অন্যপক্ষে রামলাল ও বরদাদবাবুর সুশিক্ষা ও সকৃতি সত্তে¡ও তাঁরা যতটা আদর্শের প্রতীক অতটা জীবন্ত মানুষ নন। তবে প্যারীচাঁদের বর্ণনার স্বাভাবিক সরসতা সমগ্র রচনাটিকে উপভোগ্য করে তুলেছে। এতকালের ব্যবধানেও তাই বইটির আবেদন নিঃশেষিত হয়নি। বঙ্কিমচন্দ্র যে-ভবিষণ্যদ্বাণী করেছিলেন-“আলালের ঘরের দুলাল” বাঙ্গালা ভাষায় চিরস্থায়ী ও চিরস্মরণীয় হইবে’- তা সত্য হয়েছে।

 

আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

আনিসুজ্জামান

জন্ম ১৯৩৭ সালে, কলকাতায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বি এ অনার্স, এম এ এবং পিএইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। গবেষণা করেছেন শিকাগো ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে, যুক্ত ছিলেন জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা-প্রকল্পে। শিক্ষকতা করেছেন ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্যারিস, নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন, বিশ্বভারতীতে ভিজিটিং প্রফেসর। সাহিত্য ও সমাজ সম্পর্কে ইংরেজি ও বাংলায় লিখিত ও সম্পাদিত তাঁর গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ঢাকা, কলকাতা, লন্ডন ও টোকিও থেকে। বাংলা একাডেমী পুরস্কার ও রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক পেয়েছেন; পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরোজিনী বসু পদক, এশিয়াটিক সোসাইটির পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্মারক ফলক ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মশতবার্ষিক স্মারক ফলক এবং রবীন্দ্রভারতীর সাম্মানিক ডি লিট্। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন। মৃত্যু ১৪ মে ২০২০।

এই বিষয়ে আরও বই
আলোচনা ও রেটিং
০(০)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
আলোচনা/মন্তব্য লিখুন :

আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন