বইয়ের বিবরণ

আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

এই লেখকের আরও বই
এই বিষয়ে আরও বই
আলোচনা ও রেটিং
৫(১)
  • (১)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
আলোচনা/মন্তব্য লিখুন :

আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন

User

২০ Feb, ২০২৩ - ৩:০৪ PM

#প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা জীবন একটি রঙিন ক্যানভাসের নাম,এই ক্যানভাসে রংতুলির আঁচড়ে তৈরি হয় জীবনের বহুমাত্রিক গল্পের সমাহার। যে গল্পের ভেতরে রয়েছে মানুষের হাসি-কান্না, দুযোর্গ-দুর্বিপাক, ক্ষোভ-হতাশা ও দুঃখ-বেদনার সমরোহ। যে গল্পের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে নানান জানা-অজানা গল্প, রয়েছে কত বিচিত্র সব ভঙ্গিমা,কত উত্থান-পতন আর রহস্যময়তা! ধরণির পথে পথে বইটির ট্যাগলাইনে বলা হয়েছে 'মুসাফিরের চোখে দিগদিগন্তের জীবন দর্শন',আসলেই তাই। লেখক বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সমাজে উঠা-বসার কারণে তাদের সমাজকে গভীরভাবে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের জীবনপদ্ধতি অনেক কিছুই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছেন। আর তাই সমাজের ভেতরের অজানা, না বলা গল্পগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরতে পেরেছেন। তাদের জীবনের করুণ পরিণতি হওয়ার পিছনে কী কারণ ছিল? তার জন্য সমাজব্যবস্থা কতটুকু দায়ী? এইসব দৃষ্টিকোণ খুব নিখুত করে তুলে ধরেছেন বইয়ের পাতায় পাতায়। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে, লেখকের চোখে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের পারিবারিক ব্যবস্থা, তাদের সমাজ ব্যবস্থা, জীবন ব্যবস্থা, তাদের সংস্কৃতির চিত্র, মূল্যবোধ বিষয়গুলো উঠে এসেছে 'ধরণির পথে পথে' বইটিতে। লেখক ইংল্যান্ডের একটি মানসিক হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজার হিশেবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন। কুয়েতের মানসিক হাসপাতালেও ছিলো তার কর্মক্ষেত্র, যার ফলে তিনি মানসিক অসুস্থ রোগীদেরও খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের উপচে পড়া অশ্রুফোঁটার গল্পগুলো গভীর মনযোগ দিয়ে শুনেছেন। আর তাদের জীবনের এই অব্যক্ত কথাগুলো লেখক চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন 'ধরণির পথে পথে' বইয়ে। বইটি মূলত বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া একগুচ্ছ গল্পের সংকলন। ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া ২৮টি দৃশ্যপট তুলে ধরেছেন লেখক। যার প্রতিটি দৃশ্যপট আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে। যে পশ্চিমা জীবনের অন্ধ অনুকরণে আমরা ব্যস্ত, সে জীবন বাস্তবে কতটা কষ্টের, অসহায়ত্বের আর হাহাকারে পরিপূর্ণ—বাস্তব জীবনে লেখক সেগুলোর প্রতীক্ষদর্শী হয়ে যেমন অবাক হয়েছেন তেমনি বইটি পড়ার সময় পাঠক হিশেবেও অবাক হতে হয়। একজন পাঠক হিসেবে বইটির যে গল্পগুলো আমাকে শিহরিত করেছে, চোখের কোণায় জমতে থাকা অশ্রু ফোঁটার কারণ হয়েছে, বিষ্ময়ে হতবাক করেছে আর আমার বোধের দুয়ারে কড়া নেড়েছে এমনই আরও কয়েকটি গল্প হলো— • সিক্স সেভেনটি ফাইভ,ওয়েলবেক রোড • ট্রেসি • কালের নির্মমতার সাক্ষী • খোকন সোনা বলি শোনো • সখী ভালোবাসা কারে কয় • একা, বড় একা • একজন জাদ আর রাব • হাসি-কান্নার কথকতা • টাইম; দ্যা অ্যাভেঞ্জার • তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয় • শোনো বাহে, জাতিসংঘ তাকেই বলে • গুড লাক পলিন 📚পাঠ-প্রতিক্রিয়া 📚 ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পড়তে গিয়ে কখনো আমার চোখ ভিজেছে,কখনো বিস্মিত চোখে থাকিয়ে ছিলাম বইয়ের গল্পের পাতায় পাতায়। গল্পগুলো কখনো শিহরণ দিচ্ছিল, আবার কিছু ঘটনা পড়তে গিয়ে শরীরটা ঘৃণায় ঘিনঘিন করছিলো। আবার কিছু ঘটনা পড়ে চোখ মুছতে মুছতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। 📓পাঠ পর্যালোচনা📓 পাঠককে আঁকড়ে ধরার জন্য একটা ভালো স্টার্টিং থাকা দরকার। যেটা পড়ে পাঠক নড়েচড়ে বসবে এবং গল্পের প্রতি আগ্রহ পাবে। ''ধরণির পথে পথে'' বইটির গল্পগুলো স্টার্টিং অনেকটা সেরকমই। প্রতিটি চরিত্রকে শুরু থেকে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করার সময় তাঁর বর্ণনাশৈলী ছিল বেশ শালীন ও শৈল্পিক। লিটারেরি টুলস হচ্ছে সাহিত্যের অলঙ্কার। মূল গল্পটাকে পাঠকের কাছে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করার জন্য লেখক এখানে তাঁর মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। যে বিষয়গুলো অংসগতি মনে হয়েছে তা হচ্ছে, প্রতিটি গল্পের যে জিনিসটা বেশি চোখে পড়েছে তা হলো— লেখকের ইংরেজি শব্দ ব্যবহারের প্রবণতা, যা আমার মতে বাংলা ভাষায় লেখার সময় ইংরেজি শব্দের ব্যবহারও দূষণীয়। যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অংসগতি মনে হয়েছে তা হলো—গল্পের নামকরণেও গানের লাইন ব্যবহার করা। গল্পে একাধিকবার গানের লাইন এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার অনেকটা বেমানান লেগেছিলো আমার কাছে। এছাড়া ওভারঅল বলতে গেলে— আমি মনে করি,ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আপনাকে কাঁদাবে আর এরসাথে সেই সমাজে ভেতরের জগতে আপনি ঢুকতে সক্ষম হবেন। প্রতিটি ঘটনা পড়ে আপনার চিন্তার জগতকে চূর্ণবিচূর্ণ করে নতুন করে ভাবতে শুরু করবে। আমরা যাদের আধুনিক উন্নত সমাজ বলে জানি,তাদের সমাজের করুণ দশা পতনের সীমা ছাড়িয়ে আজ তারা অধঃপতনে কোন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, বইটির ঘটনাগুলো পড়ার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি তা জানতে পারবেন। আরো জানতে পারবেন মধ্যেপ্রাচ্য ও পশ্চিমের সমাজের সমাজ ব্যবস্থা,জীবন ব্যবস্থা,পারিবারিক ব্যবস্থা, নৈতিক মূল্যবোন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে। আমাদের তথাকথিত সমাজের মানুষেরা যে পাশ্চাত্য সভ্যতার গুনোগান গায়, বইটি পড়লে তারা সেই পাশ্চাত্য সভ্যতার স্বরূপটা উপলব্ধি করতে পারবে। আশা করি বইটি পাঠকদের ভালো লাগবে, বইটি পড়ে জানতে পারবেন, মানুষের দুর্বোধ্য ও রহস্যময়ের ইতিহাস, মানুষের জীবন দর্শন। যারা জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে উপলব্ধি হয়েছে, সেইসব ভুলগুলো যেনো আমরা না করি,সেই পথে যেনো না যায়। বইয়ের গল্পের নায়কদের যে করুণ পরিণতি হয়েছে, সেই করুণ পরিণতি না যায়, গল্পগুলোর সাথে সেই শিক্ষাও তুলে ধরেছে, 'ধরণির বইয়ে পাতায় পাতায়'। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সম্মানিত লেখক জিয়াউল হক ভাইসহ বইয়ের প্রত্যক্ষও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল ভাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুক। •বই: ধরণির পথে পথে। •লেখক: জিয়াউল হক। •প্রকাশনী: গার্ডিয়ানপাবলিকেশন্স। •ক্যাটাগরি: দর্শন বিষয়ক বই। •মুদ্রিত মূল্য: ৩৫০টাকা। •পৃষ্ঠা: ২০৮। • পার্সোনাল রেটিং : ৯/১০ ||বুক-রিভিউ || ~মঈন উদ্দীন চৌধুরী সাকিব।