নতুন একটি দেশ জন্ম নিচ্ছে, ভেঙে যাচ্ছে সামাজিক বুনন। একটি উথালপাতাল সময়ের ছবি ফুটে উঠেছে কলমের আঁচড়ে। এটি উপন্যাস নয়, সনাতন ধাঁচের রোজনামচাও নয়। এটি এক তরুণ অ্যাকটিভিস্টের জীবনের গল্প, যা পাঠককে ফ্ল্যাশব্যাকে নিয়ে যাবে এক ভয়ংকর সুন্দর অস্থির সময়ের মাঝে।
বইয়ের বিবরণ
একদিকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার শাসন, অন্যদিকে একটি জনগোষ্ঠীর জেগে ওঠা। স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন, ঊনসত্তরে গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। শিকল ছিঁড়ে জন্ম নিল নতুন জাতিরাষ্ট্র, বাংলাদেশ। কিন্তু জন্মলগ্নেই দেশটি পড়ে গেল রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে। তারুণ্যের স্বপ্ন, আকাশছোঁয়া আকাঙ্ক্ষা এবং সনাতন ধ্যানধারণার সঙ্গে বিরোধ জন্ম দিল সংঘাতময় রাজনীতির।
এটি ওই সময়ের একটি বয়ান। কৈশোর-তারুণ্যের সন্ধিক্ষণে লেখক ওই সময়টিকে দেখেছেন, উজানসেÊাতে ভাসিয়ে দিয়েছেন নিজেকে। এই বইয়ে তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর দেখা, শোনা ও জানা ঘটনা ও মানুষের কথা। কালো অক্ষরে এঁকেছেন জীবনের গল্প।
- শিরোনাম এই দেশে একদিন যুদ্ধ হয়েছিল
- লেখক মহিউদ্দিন আহমদ
- প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন
- আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৯৩১৮৮৪২
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
মহিউদ্দিন আহমদ
জন্ম ১৯৫২, ঢাকায়। পড়াশোনা গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। ১৯৭০ সালের ডাকসু নির্বাচনে মুহসীন হল ছাত্র সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিএলএফের সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দৈনিক গণকণ্ঠ-এ কাজ করেছেন প্রতিবেদক ও সহকারী সম্পাদক হিসেবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সুংকোংহে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মাস্টার্স ইন এনজিও স্টাডিজ’ কোর্সের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও অধ্যাপক। তাঁর লেখা ও সম্পাদনায় দেশ ও বিদেশ থেকে বেরিয়েছে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা অনেক বই। প্রথমা প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে ‘অপারেশন ভারতীয় হাইকমিশন’, ‘প্রতিনায়ক’, ‘জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’, ‘এক–এগারো’, ‘বাঙালির জাপান আবিষ্কার’, ‘বিএনপি: সময়-অসময়’, ‘বিএনপি : সময়-অসময়’, ‘আওয়ামী লীগ: উত্থানপর্ব ১৯৪৮-১৯৭০’, ‘এই দেশে একদিন যুদ্ধ হয়েছিল’, ‘আওয়ামী লীগ : যুদ্ধদিনের কথা ১৯৭১’। প্রথম আলোয় কলাম লেখেন।
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
Md. Yaqub Ali
২১ Feb, ২০২৩ - ৬:৩৬ AM
এই বইয়ের বিষয়বস্তু তিনটি অধ্যায়ে ভাগ করা। প্রথম পর্বের নাম – ‘দুর্জয় প্রাণের আনন্দে’। যেখানে লেখক তাঁর শৈশব থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত অভিজ্ঞতাগুলি লিপিবদ্ধ করেছেন। দ্বিতীয় পর্ব ‘জ্বলে ওঠে জলাভূমিতে’ আছে লেখকের যুদ্ধদিনের অভিজ্ঞতা। আর তৃতীয় পর্ব ‘যুদ্ধ দিনের প্রাপ্য চাই’তে আছে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি সময়ের অভিজ্ঞতা। এই বইটা যেহেতু কোন ইতিহাস গ্রন্থ নয় তাই পাঠ করতে যেয়ে পাঠক ক্লান্ত হয়ে পড়েন না বা তাকে একঘেয়েমিতে পেয়ে বসে না। বরং লেখকের সাথে সাথে পাঠক মুখোমুখি হন বাংলাদেশের সবচেয়ে সোনালী সময়ের। এখানে মূল চরিত্র লেখক নিজেই এবং প্রথম পুরুষেই সকল ঘটনার বর্ণনা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পূর্ববর্তি দিনগুলোর ইতিহাস আমাদের সাহিত্যে সেইভাবে আসেনি। মোটাদাগে পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ বঞ্চনার কথা আসলেও সেটা সামাজিকভাবে কতটা গভীর ছিল বা সেটা কিভাবে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানিদের মনের উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল সেটা আসেনি। এই বইয়ে সেটা এসেছে বেশ বড় পরিসরে। তখনকার দিনের পাঠ্যপুস্তক, মানুষের চালচলন সবকিছুই এসেছে এই বইয়ে। বইটা ব্যক্তি পর্যায়ের অভিজ্ঞতার বর্ণনা হলেও এতে অবধারিতভাবে উঠে এসেছে আমাদের ইতিহাস। কারণ লেখক নিজেই সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি করতেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনেকরি আমাদের তৎকালীন নাগরিকদের প্রত্যেকেরই এমন স্মৃতিকথা লেখা জরুরি যেটা লেখক এই বইয়ের ভূমিকায় বলেছেন। এই লেখাগুলো যেমন একদিকে গবেষণার বিষয়বস্তু হতে পারে তেমনি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি প্রজন্ম নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, বিস্তার এবং পরবর্তি পরিস্থিতি সম্মন্ধে জানতে পারবে। এই বই লেখার বিষয়ে লেখক একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। লেখকের ভাষায় - ' আমার মতো এমন মানুষ আছেন হাজার হাজার। একেকজনের অভিজ্ঞতা, একেকজনের গল্প একেক রকম। এগুলোকে মেলানোর দরকার নেই। সব অভিজ্ঞতা ও গল্পই স্বতন্ত্র ও গুরুত্বপূর্ণ। এই অভিজ্ঞতা গবেষক ও ইতিহাসবিদদের কাজে লাগতে পারে। আমরা সবাই যদি নিজেদের কথা বলে যাই, তাহলে এগুলো একত্র করেই একদিন লেখা হবে এ দেশের ইতিহাস।'