বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন বরেণ্য লেখক হাসনাত আবদুল হাই। তাঁর লেখালেখির শুরু ছাত্রাবস্থাতেই। তিনি ছোটগল্পের জন্য অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। তবে শুধু ছোটগল্পই নয় তিনি যে তাত্ত্বিক বিষয়বস্তু নিয়ে লিখতেও সমান পারঙ্গম তার জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত হচ্ছে ‘চলচ্চিত্রের নান্দনিকতা’ শিরোনামে একগুচ্ছ লেখার সংকলনটি। তিনি নন্দনতত্ত্ব বিষয়ক লেখালেখির অংশ হিসেবে বইটিতে কাজ করেছেন সিনেমার ভাষাবিষয়ক ধারণা নিয়ে।
প্রায় দুই শতাধিক পৃষ্ঠার বইটি একান্তভাবেই গবেষণাধর্মী। এক কথায় বলা যায়, লেখক চলচ্চিত্রের মৌলিক ভাষা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন তথ্যবহুল বইটিতে। সচল দৃশ্যকল্প অর্থাৎ রং ও শব্দের অনুপস্থিতিতে কেবল অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নাড়াচাড়া ও মুখভঙ্গিকেই লেখক এখানে সিনেমার মৌলিক ভাষা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কেবল এই নিয়েই লিখেছেন একটি অধ্যায়। এছাড়াও আলোচনা করেছেন সিনেমায় শব্দ, লিখিত ভাষা/চিত্রনাট্য, সেমিওলজি, টেকনিক্যাল নানা ইস্যু, সম্পাদনা, মনস্তত্ত্ব, ফেমিনিজম, রাজনীতি ও রূপতত্ত্ব নিয়ে। প্রতিটি বিষয় নিয়েই লেখক যে পরিমার্জিত অথচ তথ্যবহুল আলোচনার অবতারণা করেছেন, তাতে চলচ্চিত্রকে নিছক বিনোদনের বাইরেও আরো গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হিসেবে যাঁরা দেখতে অভ্যস্ত, তাঁরা নানা জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজে পাবেন। এসব লেখালেখির মধ্যে উঠে এসেছে নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি, বিমূর্ততা, ভিজ্যুয়াল ইমেজ, ন্যারেটিভ, শটের প্রকারভেদ, মন্তাজ, পুঁজিবাদ ও মার্কসবাদ প্রভৃতি। সমস্ত আলোচনার শেষ টেনেছেন শিল্প হিসেবে সিনেমার গুরুত্ব অর্জনের লক্ষ্যে যেসব ফিল্ম-থিওরির অবতারণা করা হয়েছিল, সেগুলো নিয়ে একটি প্রাসঙ্গিক সমীক্ষা অবতারণার মধ্য দিয়ে।
‘চলচ্চিত্রের নান্দনিকতা’ বইটিতে কেবল এই বিষয়গুলি নিয়েই তথ্যবহুল আলোচনা করা হয়নি, হাসনাত আবদুল হাই পক্ষ ও বিপক্ষ শ্রেণির মতামতও উপস্থাপন করেছেন পক্ষপাতিত্ব না দেখিয়ে। রেফারেন্স টেনেছেন বহু নামজাদা চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব এবং সিনেমার। অনেকাংশে চলচ্চিত্রের কোনো নির্দিষ্ট দৃশ্যের উদাহরণ দিয়ে অবতারণা করেছেন তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার। নিজস্ব মতামতের তুলনায় নানা প্রসঙ্গে তাত্ত্বিকদের তত্ত্বালোচনার তুলনামূলক উপস্থিতি এখানে গুরুত্ব পেয়েছে বেশি।
দেশি-বিদেশি প্রচুর সিনেমা, বিশেষ করে আর্ট ফিল্ম ও ক্লাসিকধর্মী চলচ্চিত্রের সাজেশন চাইতে হলে এই বইটি থেকে উপযুক্ত উৎস মনে হয় না আর পাওয়া যাবে। এই জাতীয় ঘরানার চলচ্চিত্র থেকে যাঁরা রসাস্বাদন করতে চান তাঁদের জন্য বইটি দারুণ উপযোগী হিসেবে দেখা দেবে। লেখক অবশ্য সচেতনভাবেই কিছুটা এড়িয়ে গিয়েছেন বিনোদনমূলক চলচ্চিত্রের অঙ্গনকে। অসংখ্য সাদাকালো আলোকচিত্রের সম্ভার, বিশেষ করে কালজয়ী চলচ্চিত্রগুলির অনেক দৃশ্যের স্থিরচিত্র বইটির আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। মোটকথা, চলচ্চিত্রপ্রেমীদের আদর্শ সাজেশনের ভাণ্ডার হিসেবে কাজে দিতে পারে বইটি। সাথে জোগাবে বিস্তর চিন্তার খোরাক। আগ্রহীরা পাবেন দিকনির্দেশনা।
বইয়ের বিবরণ
- শিরোনাম চলচ্চিত্রের নান্দনিকতা
- লেখক হাসানাত আবদুল হাই
- প্রকাশক বেঙ্গল পাবলিকেশন্স
- আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৯১৬৪৩৮৮
- প্রকাশের সাল ২০১৫
- মুদ্রণ 1st Published
- বাঁধাই হার্ডকভার
- দেশ বাংলাদেশ
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।