অলাতচক্র

লেখক: আহমদ ছফা

বিষয়: উপন্যাস

২৬২.৫০ টাকা ২৫% ছাড় ৩৫০.০০ টাকা

‘অলাতচক্র’ বইয়ের ভূমিকা নয়ঃ


আহমদ ছফা ‘অলাতচক্র’ উপন্যাসটি লিখেছিলেন ১৯৮৫ সালে। সাপ্তাহিক ‘নিপুণ’ পত্রিকার ঈদ সংখ্যার জন্য লেখাটি তাঁকে লিখতে হয়েছিল। শুরুর তারিখটি ছিল ১০ মে। মাত্র বারদিনের মাথায় লেখাটি তাঁকে শেষ করতে হয়েছিল। অনেকটা তাড়াহুড়োর মধ্যে। ব্যত্যয় ঘটলে এ পত্রিকার মাধ্যমে উপন্যাসটি আলোর মুখ দেখত না। উপন্যাসটি তো নিপুণে প্রকাশ পেল। কিন্তু লেখাটি নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। নানাজনের আপত্তিও ছিল। তখনই তিনি ঠিক করেছিলেন উপন্যাসটি পুনরায় লিখবেন। এ কাজে তাঁকে নামতে হয়েছে আরও কয়েক বছর পরে। নানা জনের আপত্তির কারণে তিনি উপন্যাসের কয়েকটি চরিত্রের নামও পরিবর্তন করেছিলেন।


অনেক চড়াইউতরাই পেরিয়ে ১৯৯৩ সালে মুক্তধারা থেকে উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এটা পাঠকের হাতে হাতে পৌঁছে যায়। কিন্তু নিপুণে প্রকাশিত সেই আদিরূপটির কথা আমরা বিলকুল ভুলে গিয়েছিলাম। মানুষের অন্তদৃষ্টি প্রখর না হলে এমনতর হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু একজন ভুলেননি, তিনি পণ্ডিত ড. সলিমুল্লাহ খান। তিনি আদিরূপটি খুঁজে পাবার জন্য যত্রতত্র চষে বেড়িয়েছেন। একসময় তিনি সফলও হয়েছেন। তাঁর মতে, আহমদ ছফার সাহিত্যে অলাতচক্রের আগের লেখাটির ঐতিহাসিক মূল্য কম নয়।


তিনি লেখাটি উদ্ধারের পর তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত এবং এ কে এম আতিকুজ্জামান সম্পাদিত পত্রিকা ‘অর্থে’ হুবহু ছেপেছেন কোন রকম পরিবর্তন, পরিমার্জন ছাড়াই। ড. খান তারই কোমল কপিট আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। যেই কারণে কোন রকম বাড়তি ভোগান্তিতে আমাদের পড়তে হয়নি। অর্থ পত্রিকার ছাপা লেখাটি আমরা অলাতচক্রের আদিরূপ হিসেবে অনেকটা কপি করেই এখানে জুড়ে দিলাম। ড. খানের অনুরোধে একাজটি করতে হল, তাঁর প্রতি সম্মান রেখে। পরিশিষ্টে তাঁর একটি মূল্যবান আলোচনাও সংযুক্ত করে দেয়া হল। এ লেখাটির মাধ্যমে অলাতচক্র উপন্যাসের আদি এবং নতুন দুটি রূপের সাদৃশ এবং বৈসাদৃশ্যের ক্ষেত্রেগুলো খুঁজে পেতে পাঠকদেরকে সাহায্য করবে। আশা করি।

প্রকাশক

পছন্দের তালিকায় রাখুন

বইয়ের বিবরণ

আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

এই লেখকের আরও বই
এই বিষয়ে আরও বই
আলোচনা ও রেটিং
৪(১)
  • (০)
  • (১)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
আলোচনা/মন্তব্য লিখুন :

আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন

Faija Binte Haque

১৫ Mar, ২০২৩ - ৬:৪২ PM

বইয়ের নাম: অলাতচক্র লেখক: আহমদ ছফা আহমদ ছফার বাস্তব ইতিহাস আশ্রিত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাধর্মী উপন্যাস 'অলাতচক্র'। মুক্তিযুদ্ধকালীন লেখকের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতায় অবস্থানকালে অর্জিত স্মৃতিমালাকে নিজ জবানিতে লিপিবদ্ধ করে ১৯৮৫ সালে মাত্র দুই সপ্তাহে 'সাপ্তাহিক নিপুণ' পত্রিকার ইদ সংখ্যায় অলাতচক্র- শিরোনামে প্রকাশ করেন। কিন্তু পত্রিকায় প্রকাশের পর উপন্যাসটি নানা সমালোচনার সম্মুখীন হলে ১৯৯৩ সালে উপন্যাসটির পরিমার্জন, বিশেষত চরিত্রের নাম পরিবর্তন করে 'মুক্তধারা' প্রকাশনী থেকে প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হয়। উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহকে দুইভাগে ভাগ করলে একভাগে দেখা যাবে কেন্দ্রীয় চরিত্র দানিয়েলের সাথে মৃত্যুপথযাত্রী প্রেমিকা তায়েবার সাথে জটিল মনস্তাত্ত্বিক অথচ অমীমাংসিত সম্পর্ক, তায়েবার পারিবারিক সংকট, দানিয়েলের ব্যক্তিগত অস্তিত্ব সংকট, বেকারত্ব ইত্যাদি। অপরভাগে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কলকাতায় শরণার্থী সাধারণ বাঙালি থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অবস্থা, তাঁদের প্রতি কলকাতাবাসীর মনোভাব, থিয়েটার রোডের নেতৃবৃন্দের ভূমিকা এবং ট্রেনিং গ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের বাস্তব চিত্র। ঘটনাপ্রবাহের উভয় ভাগ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত, কেননা উভয় পরিস্থিতির উদ্ভবের মূল কারণ ছিলো একটিই- মুক্তিযুদ্ধ। উপন্যাসের নায়ক দানিয়েল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনবার চেষ্টা করেও ট্রেনিং সেক্টরে পাঠাবার যথেষ্ট উপযুক্ত বিবেচিত হয় নি 'ক্রিয়েটিভ মানুষ' বিবেচনায়; যার ফলস্বরূপ তাঁকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কলকাতায় একরকম অনিশ্চিত, অমানবিক, ভাসমান জীবন যাপন করতে হয়। যুদ্ধের আগে প্রগতিশীল এবং বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের সাথে উঠাবসার সূত্রেই তাঁর পরিচয় হয় ঢাকার গেন্ডারিয়ার প্রগতিশীল একটি পরিবারের সঙ্গে, যাদের বড় মেয়ে তায়েবার প্রতি সে দুর্বল হয়ে পড়ে। তায়েবা ব্যক্তিত্ববান, প্রগতিশীল, সুশিক্ষিতা, গুণবতী মেয়ে; সে 'পার্টি' করে এবং ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে আসাদের মৃত্যুর সময় অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত তায়েবার মা তাদের পারিবারিক গোঁড়ামি থেকে সন্তানদের এবং নিজেকে মুক্ত করতে তায়েবা, দোলা, হেনা, ডোরাদের নিয়ে ঢাকায় বাস করতেন। যুদ্ধ শুরু হলে তায়েবার অসুখের গুরুতর অবস্থা, হেনার বিবাহ, দোলার মুক্তিযুদ্ধে যোগদান, ডোরার মাঝবয়সী পারিবারিক অভিভাবক ও গানের শিক্ষক জাহিদুলকে বিয়ে করে ফেলা ইত্যাদি ঘটনা পরিবারটিকে সংকটে ফেলে দেয়। তায়েবা ও দানিয়েলের প্রতি গুণমুগ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের মধ্যকার সম্পর্ক অতিশয় জটিল এবং অমীমাংসিত- দুজনেই স্বীকার করতে নারাজ তাঁদের ভালো লাগার কথা। যদিও মৃত্যুর আগে কেবল একবার তায়েবা তার ভালো লাগার কথা স্বীকার করে দানিয়েলের কাছে আত্মসমর্পণ করে। অন্যদিকে মূল চরিত্র দানিয়েল কলকাতায় একটি হোস্টেলে অবস্থানকালে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থী সম্প্রদায়ের থিয়েটার রোডের নেতৃবৃন্দের প্রতি ক্ষোভ, লেখকের তাজউদ্দিনের প্রতি পক্ষপাত, হোস্টেলে বিভিন্ন ধরনের মানুষের অবস্থান এবং আনাগোণা, এমনকি একবার অমর্ত্য সেনেরও আগমন, তাঁদের বয়ানে মুক্তিযুদ্ধের বিশ্লেষণ, বিতর্ক, মতপার্থক্য ইত্যাদি নিছক কল্পকাহিনী নয়, বরং বাস্তব সত্য যা উপন্যাসটিকে বিশেষায়িত করে একে বাস্তব ইতিহাস আহরণের আধার করে তুলেছে। উল্লেখ্য ব্যাবলিনে নির্বাসিত ইয়াহুদী জাতির মধ্যে দানিয়েল নামে একজন ধুরন্ধর ব্যক্তি ছিলেন। সম্ভবত আহমদ ছফা উপন্যাসের নায়ক তথা নিজেকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে নামকরণ করেছেন যথার্থভাবেই। লেখালেখির সূত্রে দানিয়েলের পরিচয় কলকাতার কলেজ শিক্ষিকা, সাবেক নকশাল আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী অর্চনার সাথে এবং তাঁর সূত্র ধরেই অর্চনার ফ্রান্স ফেরত সাবেক কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী দাদা ও তার সাবেক পার্টির লোকদের সাথে। অর্চনা ও দানিয়েলের সম্পর্ক নিয়ে তায়েবাকে সময় সময় নারীসুলভ হিংসা ও অভিমানও লক্ষ করা যায়। অর্চনার দাদা অথবা বামপন্থী পার্টির লোকদের আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধকে কমিউনিস্ট আন্দোলন অথবা বিপ্লবের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা লক্ষ করা যায়। আবার তায়েবার চাচার পরিবারের লোকদের মতো গোঁড়া মুসলিমদের পাকিস্তানপ্রীতি, মুক্তিযুদ্ধকে ভারত তথা হিন্দুস্তান-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ভাষা আন্দোলনকে হিন্দুদের ষড়যন্ত্র হিসেবে সাব্যস্ত করতেও দেখা যায়। উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা পাওয়া যায় উপন্যাসের শেষাংশে, লেখকের ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ থেকে। এ অংশে লেখক ব্যক্তিগত জবানিতে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অংশগ্রহণ কেন জরুরী ছিলো, তথাকথিত শান্তি চুক্তি হলে ইন্দিরা গান্ধীর ভারতের কী ক্ষতি হতো, ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে কী ধরনের বহির্বিশ্বের মদদ নিয়ে কী ধরনের কূটকৌশলে মেতে ছিলেন, বহির্বিশ্বের ভূমিকা কী ছিলো তা চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন। এছাড়া যুদ্ধ মানে যে শুধু মাহাত্ম্য আর আত্মত্যাগের উপাখ্যানই নয়, সেখানে সত্য মিথ্যা জড়িত বাড়াবাড়িও থাকে, তাও এ উপন্যাসের উপজীব্য। কখনও চরমপত্র পাঠ শুনে স্বস্তি লাভ, কখনও বা তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে লেখকের দোলাচল লক্ষণীয়। কলকাতার জেন্টস পকেট রুমালের মতো দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিকের নিছক পত্রিকা বাড়ানোর জন্য কল্পিত বীরাঙ্গনা রওশন আরাকে নিয়ে মিথ্যা গল্প এবং পত্রিকাগুলোর অতিশয় বাড়াবাড়ি, শোকসভা আসলে যুদ্ধের বাস্তব একটি দিককেই তুলে ধরে। উল্লেখ্য ২০২০ সালে "অলাতচক্র" উপন্যাস অবলম্বনে দেশের প্রথম থ্রিডি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। অলাতচক্র আহমদ ছফার সেই সকল উপন্যাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, যে উপন্যাসগুলো নিছক গল্পই বর্ণনা করে যায় নি, বরং একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা ও সময়কে আঁকড়ে ধরে রেখেছে উপন্যাসের পাতায় পাতায়। বইটি লেখকের 'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী' কিংবা 'গাভী বিত্তান্ত' বইয়ের মতো করেই ছদ্ম নামের এবং কল্পকাহিনীর আড়ালে ব্যক্তিগত বাস্তব অভিজ্ঞতাকেই তুলে ধরে পাঠকের কাছে। উপন্যাসটিকে মুক্তিযুদ্ধের এক ভিন্নতর পাঠ বলাই সবচেয়ে যথার্থ হবে। বাস্তব ইতিহাস পাঠককে জানানোর ক্ষেত্রে এবং মুক্তিযুদ্ধকে শরণার্থীর চোখে দেখার ক্ষেত্রে 'অলাতচক্র' পাঠক সমাজে এক ক্লাসিক বই হয়েই থাকবে।#প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা ফাইজা বিনতে হক আইন বিভাগ তৃতীয় বর্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়