অসুখী দিন

লেখক: শাহীন আখতার

বিষয়: কথাসাহিত্য

৪৭২.৫০ টাকা ২৫% ছাড় ৬৩০.০০ টাকা

অনিতা আর সাবিনা। দুই ভূগোলের দুই সময়ের মানুষ। শিলংয়ের আর বাংলাদেশের। দেশভাগের আর এই সময়ের। অনিতা সেনের স্মৃতিকথা পড়তে পড়তে সাবিনার সামনে ভেসে উঠল তাঁর বাবার জীবন। বিশ্বযুদ্ধ, মন্বন্তর, দাঙ্গা, দেশভাগ। সুভাষ বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। বাংলা আর বাংলার সীমান্তের ওপারের দুই মানুষের জীবনে একই ইতিহাস এগিয়ে চলল ভিন্নতর দুই গল্পে। 

পছন্দের তালিকায় রাখুন

বইয়ের বিবরণ

একটা ছেঁড়া মলাটে হলুদের ছোপ লাগা জরাজীর্ণ বই। দুই ভূগোলের দুই সময়ের দুজন মানুষ সাবিনা আর অনিতা সেনের মধ্যে অভিনব এক সংযোগ ঘটায়।

অনিতা সেন বিশ শতকের চল্লিশের দশকের কমিউনিস্ট। বরাক আর আসাম ভ্যালির। ব্রহ্মপুত্রের ভেজা পলি মাটিতে তাঁর কচি পায়ের চিহ্ন আঁকা রয়েছে—যুদ্ধে, আন্দোলনে, মন্বন্তরে। অনিতা সেনের স্মৃতিকথা পড়তে পড়তে সাবিনার মনে হয়, বইটা এর চেয়েও বেশি কিছু, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাঁর হারিয়ে যাওয়া ভাই নীরদচন্দ্র সেনের হদিস পাওয়ার উপায়। সুভাষ বসুর আজাদ হিন্দে যোগ দিতে সে রেঙ্গুন পাড়ি দিয়েছিল। যৌবনে একই কাজ করেছেন সাবিনার বাবা মোয়াজ্জেম হক। তিনি যে নিশান উড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাইতে গাইতে মৃত্যু উপত্যকা ইম্ফলের দিকে মার্চ করে গিয়েছিলেন, তার উত্তরাধিকারী হননি। কুঁচকিতে বুলেটের দাগ নিয়ে দেশভাগের পরের বছর বাড়ি ফিরেছিলেন। তারপর ছিটকে পড়েন এই ইতিহাস থেকে। তাঁর জীবনে আজাদ হিন্দের বছরগুলো যেন জলের ওপর বুদ্বুদ, কোনো চিহ্ন না রেখেই মিলিয়ে গেছে। তাই জীবনের এপার-ওপার জুড়তে পারেননি। 

যার কাছে অতীত একটা বেড়াভাঙা বাড়ির ক্রমে বদলে যাওয়া, যে গ্রাম থেকে শহরে ফেরে জানালার শার্সির বুকের সবুজ আল্পনার পিছুটান নিয়ে, সে তার বাবার জীবনের এপার-ওপার টুকরো টুকরো গল্প গাঁথতে বসে। কেননা, ইতিহাস তামাদি হয়ে গেলেও সত্য যা, তা জেনে নিতে হয়। নীরদচন্দ্র সেনের মৃত্যুরহস্যের কিনারাও হয় সাবিনার হাত দিয়ে। 

আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

শাহীন আখতার

জন্ম কুমিল্লা জেলার চান্দিনায়। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, অর্থনীতিতে। প্রায় দুই দশক ধরে গল্প-উপন্যাস লিখছেন। দ্বিতীয় উপন্যাস তালাশ-এর জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা বই ১৪১০ পুরস্কার পান। বইটির ইংরেজি তরজমা দ্য সার্চ নামে দিল্লির প্রকাশনা হাউস জুবান প্রকাশ করেছে ২০১১ সালে। তালাশ-এর কোরিয়ান ভাষার সংস্করণ আর সখী রঙ্গমালা উপন্যাসের ইংরেজি সংস্করণ বিলাভেট রঙ্গমালা প্রকাশের কাজ চলছে। প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ময়ূর সিংহাসন উপন্যাসের জন্য তিনি পেয়েছেন বাংলার পাঠশালা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্য পুরস্কার ২০১৫ এবং আইএফআইসি ব্যাংক পুরস্কার। তিনি ভারতের আনন্দবাজার গ্রুপের টিভি চ্যানেল এবিপি আনন্দ কতৃর্ক সাহিত্যে ‘সেরা বাঙালি’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন ২০১৪ সালে। অতি সম্প্রতি তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন।

এই লেখকের আরও বই
এই বিষয়ে আরও বই
আলোচনা ও রেটিং
৫(১)
  • (১)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
আলোচনা/মন্তব্য লিখুন :

আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন

Amit Das

২৬ Feb, ২০২৩ - ৬:১০ PM

শাহীন আখতারের 'অসুখী দিন' উপন্যাসের শুরুটা হয় বেশ সাদামাটাভাবে, বাদামি মলাটের পুরোনো এক বই দিয়ে। শ্রীহট্টবাসী নীলিমা দাসের শুভ পরিণয়ে শিলং পুলিশবাজারের শংকরলালের প্রীতি উপহার। বিদ্যমান সময়ে জরাজীর্ণ এক বই ছাড়া যা আর কিছুই না। হলুদের ছোপ ছোপ দাগ লাগা সেকেন্ডহ্যান্ড ঐ বই সংযোগ ঘটায় দুই ভূগোলের দুই সময়ের দুই মানুষের মাঝে। একজন চল্লিশের দশকের বরাক আর আসাম ভ্যালির কমিউনিস্ট, অনিতা সেন। অন্যজন উপাগত সময়ের সাবিনা। দুজনেরই রয়েছে অতীত। সেই অতীত কখনও উজ্জ্বল, কখনও বর্ণহীন। বাইরে পাতা ঝরানো, ধুলো ওড়ানো বাতাস, সবুজের সমারোহ আর সকালের বাদামি রোদ্দুরকে সঙ্গী করে ট্রেন চলতে থাকে একসময়। আর অনিতা সেনের সেই স্মৃতিকথা পড়তে পড়তে পাঠিকা সাবিনা ঘুরে আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, অল ইন্ডিয়া কমিউনিস্ট পার্টি, আগস্ট আন্দোলন, আজাদ হিন্দ ফৌজ, পঞ্চাশের মন্বন্তর, দাঙ্গা থেকে দেশভাগের সময়টুকুতে; যে সময়টুকু আজও ধরে রেখেছে তার পিতা মোয়াজ্জেম হকের ছাত্রাবস্থায় পালিয়ে গিয়ে সুভাষ বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগ দেয়া, কুঁচকিতে বুলেটের দাগ নিয়ে দেশভাগের পরের বছর বাড়ি ফিরে আসা- এই সবকিছুকে। বয়স নব্বই ছাড়িয়ে যাওয়া সেই মোয়াজ্জেম হক আজ শয্যাশায়ী। বাকশক্তিরহিত পিতা আর বৃদ্ধা মায়ের কাছ থেকে পাওয়া খন্ড খন্ড স্মৃতিগুলোকে একত্র করে একসময় সাবিনা সন্ধানে বের হয় স্মৃতিকথার অতলে হারিয়ে যেতে বসা এক মানুষের। সময়ের ব্যবধানে ইতিহাস বিচূর্ণ-নিষ্পিষ্ট হয়ে গেলেও সত্য যা, তা তো জেনে নিতে হবেই। বই হাতে নিয়ে প্রথমেই চোখ যায় জাহিদুর রহিম অঞ্জনের করা দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদটির দিকে। অতীত ও বর্তমানের মাঝে নীল এক দরজা, যা মেলবন্ধন ঘটায় দুই সময়ের- এই মূলভাব নিয়ে তাঁর চমৎকার এই প্রচ্ছদটি জোগায় ভাবনার বিস্তর খোরাক। সুলেখক শাহীন আখতারের লেখার একটি বড় গুণ বোধ করি তাঁর সৃষ্ট চরিত্রদের ধূসর জটিলতা। উপন্যাসের মোয়াজ্জেম হক চরিত্রটির কথাই ধরা যাক। এমন নিগূঢ় রঙ আর রূপ মিশে আছে যার জীবন আলেখ্যে, তাকে নিয়ে তো আস্ত এক উপন্যাসই রচনা করা সম্ভব! শুধুমাত্র চরিত্রের ধূসরতাই নয়, নারী ও পুরুষের সম্পর্কগুলোর দ্বান্দ্বিক অবস্থানে মোড় নেয়া এবং তাদের মানসপটের অতলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা খুঁটিনাটি বিষয়গুলোর সমারোহও ইঙ্গিত দেয় চরিত্রগুলো সরলরৈখিক নয় কোনোভাবেই। প্রায় দুই দশক ধরে গল্প-উপন্যাস লিখে আসছেন শাহীন আখতার। লেখক হিসেবে তিনি কতটা ইতিহাস সচেতন, তা তাঁর পাঠকমাত্রই অবগত আছেন। ইতিহাস আশ্রিত এই উপন্যাসে তিনি গল্প বলে যান তাঁর স্বভাবসিদ্ধ লেখনীর মাধ্যমে; ক্ষুরধার যে লেখনী অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটায় সত্য আর কল্পনার, যে লেখনী নাড়া দেয় ভেতর থেকে, জাগিয়ে তোলে বিশাল ধাক্কা দিয়ে, অস্বস্তিতেও ফেলে কখনও সখনও। আর প্রতি অধ্যায় শেষে থমকে যেতে হয় একগাদা বিস্ময় নিয়ে। জীবনানন্দের গাঢ় বিষণ্ণতার মতোই একরাশ বিষণ্ণতা আর হাহাকার নিয়ে ঘটে উপন্যাসের সমাপ্তি। বেলাশেষে এই উপন্যাস তাই হয়ে ওঠে অসুখী দিনেরই আখ্যান। একটি উপন্যাস লেখার সময় একজন লেখককে যেমন লম্বা একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেই উপন্যাস পাঠকালে পাঠকও তেমনি নতুন নতুন দৃশ্যপট, অচেনা-অজানা সব চরিত্র, অদেখা সময় আর মাথায় ভিড় করা সব প্রশ্ন নিয়ে পাড়ি দেয় এক দীর্ঘযাত্রা। যাত্রা শেষ হয়ে গেলেও রেশটুকু রয়ে যায়। 'অসুখী দিন' নিয়ে পরিশেষে একটা কথাই বলতে হয়, একজন সচেতন পাঠকের পঠনে অবশ্যপাঠ্য হিসেবে তো বটেই, বাংলা সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবেও এ উপন্যাস আরো বেশি আলোচনার দাবি রাখে। উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছে প্রথমা প্রকাশন থেকে। প্রকাশকাল ২০১৮। #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা