টুকুনজিল - মুহম্মদ জাফর ইকবাল

লেখক: মুহম্মদ জাফর ইকবাল

বিষয়: বিজ্ঞান কল্পকাহিনি

১৬৮.৭৫ টাকা ২৫% ছাড় ২২৫.০০ টাকা

বইয়ের বিবরণ

আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল

জন্ম ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২, সিলেট। বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র, পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন থেকে। ক্যালিফোর্নিয়া ইনিস্টিটিউট অব টেকনোলজি কমিউনিকেশন্স রিসার্চে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করে সুদীর্ঘ ১৮ বছর পর দেশে ফিরে এসে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্ত্রী প্রফেসর ড. ইয়াসমীন হক, পুত্র নাবিল এবং কন্যা ইয়েশিম।

এই লেখকের আরও বই
এই বিষয়ে আরও বই
আলোচনা ও রেটিং
৫(১)
  • (১)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
আলোচনা/মন্তব্য লিখুন :

আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন

Nazrul Islam

১৯ Feb, ২০২৩ - ১০:৪৯ AM

রাতের মিটিমিটি তারা ভরা আকাশের দিকে তাকালে কার না ইচ্ছে জাগে হারিয়ে যেতে নীলচে-কালোর অজানা গন্তব্যে। অগণিত-অসংখ্য নক্ষত্ররাজি আর অযুত নিযুত ছায়াপথে ঘেরা রহস্যময় মহাকাশের এ আকর্ষণ আকাশচুম্বী। অভিলাষে অন্তপ্রাণ অভিযাত্রীরা কিসের টানে উড়াল দেয় অজানার উদ্দেশ্যে! কিসের এতো নেশা!! একটু একটু করে উন্মোচিত হতে শুরু করে মহাকাশ। বিজ্ঞানের সামনে মাথা নত করতে থাকে দিনের নীলাকাশ আর রাতের চন্দ্র-তারা। বৈজ্ঞানিক "খটমটে আর বিদঘুটে" নামগুলো গবেষনাগার পেরিয়ে সাহিত্যের পাতায় বন্ধি হতে শুরু করে ধীরে ধীরে। সাহিত্যিক "জুল ভার্ন" বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিকে নিয়ে যান এক অনন্য উচ্চতায়। হাটিহাটি পা-পা করে বাংলায় আসন ঘাঁরে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি তথা সাইন্স ফিকশন। বাংলার সাইন্স ফিকশন জগৎটাকে সহজ-সরল ভাবে, শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সীদের উপযোগী করার কঠিন কাজটা গত কয়েক বছর ধরে করে আসছেন "মুহম্মদ জাফর ইকবাল।" তাঁকে বলা যায় এই সেক্টরের বাংলার "বেতাজ বাদশা।" গত চার দশক ধরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে লিখে যাচ্ছেন সাইন্স ফিকশন ঘরানায়। প্রাঞ্জল ও সাবলিলতায় কঠিক কঠিন বৈজ্ঞানিক টার্মগুলোকে বোঝাচ্ছেন অত্যন্ত বোধগম্যতায়। 🖊️ এক পলকে - টুকুনজিল মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রথম প্রকাশ - ১৯৯৩ অনন্যা প্রকাশনী মূল্য - ১৭৫ টাকা পৃষ্টা - ৯৫ 🖊️ আখ্যান - বিলু। ক্লাস সেভেনে পড়ে। ছাত্র হিসাবে অনেক মেধাবী। মেধাবী বলতে পুরো জেলায় এক নাম্বার। মেধাবী, বৃত্তিপ্রাপ্ত। বাবা-মা, বড়বোন ও ছোট ভাই নিয়ে সাথে গ্রামেই বসবাস করে। শহর থেকে একদিন তার ছোট খালা বেড়াতে আসলেন। যাওয়ার সময় বিলুকে সঙ্গে নিয়ে যান। উদ্দেশ্য; শহুরে স্কুলে আরও ভালো পড়ালেখা করানো। বাসার ছাদে বিলু আজব একটি প্রাণীর খোঁজ পায় যে কিনা কথা বলতে পারে! সেই ছোট্ট প্রাণীটি বিলুকে জানায় যে, সে আমাদের প্রতিবেশী গ্যালাক্সি এন্ড্রোমিডা থেকে এসেছে। বিলুর সাথে ছোট্ট প্রাণীটির খুব ভাব হয়ে যায়। বিলু এই প্রাণীটির নাম দেয় "টুকুনজিল।" টুকুনজিলকে ধরতে বিদেশ থেকে এক দল বিজ্ঞানি আসে। তাদের সাথে যোগ দেয় দেশের কিছু খারাপ মানুষ। কিডন্যাপ হয় বিলু। অসহ্য এক্সপেরিমেন্ট শুরু করা হয় তার উপড়। কি করে নিজেকে বাচাঁবে আর কি করেই-বা সাহায্য করবে টুকুনজিলকে। 🖊️ পাঠ অভিব্যক্তি - জাফর ইকবালের বই পড়া মানে নিজেকে সেই হাইস্কুলের শিক্ষার্থী মনে করা। নতুন করে হারিয়ে যাওয়া কৈশোরের নানা রঙের দিনগুলোতে। যে দিনগুলো পরবর্তিতে জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোতে পরিগণিত হয়। বইটা যখন প্রথমবার পড়ি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। একদম গল্পের নায়ক বিলুর ক্লাসে! ধার করে এনে পড়েছিলাম। কি বলবো আর... মনে প্রাণে চাইতাম, মহাজাগতিক প্রাণী আসুক। আমার সাথে বন্ধুত্ব হোক। আমার বিপদে সাহায্য করুক। স্যারের মারের হাত থেকে বাঁচাক। সব বই নিমেষে মুখস্থ করিয়ে দিয়ে ক্লাসে এক নম্বর বানাক। আমার শিশু মনে প্রথম সাইন্স ফিকশন ঘরানার ছাপ ফেলে বইটি। আকর্ষণ করতে থাকে বিজ্ঞান বুঝার-জানার। এখান থেকেই জানি আমাদের গ্যালাক্সি হচ্ছে "মিল্কিওয়ে" বা বাংলায় "আকাশগঙ্গা।" আমাদের পাশের গ্যালাক্সি "এন্ডোমিডা।" আলোর গতিপথ বৈজ্ঞানিক টার্মে যত কঠিন ভাবেই লিখা হোক, লেখক সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছেন সাবলিল ও প্রাঞ্জল ভাষায়। লেখক বিজ্ঞানমনষ্ক হওয়ার জন্য উস্কে দিয়েছেন পাঠককে তাঁর অসাধারণ লেখনিতে। সুপ্ত নরম মনে রোপন করেন আলোর বীজ, যা একসময় অঙ্কুরিত হয়ে ডাল-পালা ছড়িয়ে নিজেকে মেলে ধরে পরিণত করে বিজ্ঞানের একনিষ্ঠতে। সাই-ফাই জনরা বলতে যে সব বড়দের কিংবা বিজ্ঞানীদের বই হয়, এমন না। লেখক তাঁর সিগনেচার স্টাইলে দেখিয়ে দিয়েছেন ছোটদের জন্য কিংবা ছোটদের ভাষায়ও এই কঠিন ঘরানা সহজতর করে লেখা যায়। 🖊️ চরিত্রায়ন - নাজমুল করিম বিলু। গল্পের হিরো। ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া ব্রিলিয়ান্ট বয়। গ্রামের নীলাঞ্জনা স্কুল থেকে পাড়ি জমায় খালার হাত ধরে শহরে। জীবনে প্রায় কিছুই না জানা, না দেখা ছেলেটা শহুরে জীবন পথচলা শুরু করে ভালো-মন্দে মিলিয়ে। টুকুনজিল। মহাজাগতিক প্রাণী। বিলুর বন্ধু। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির প্রতিবেশী গ্যালাক্সি অ্যান্ডোমিডা গ্যালাক্সি থেকে আগত। বব কার্লোস। বিদেশী বৈজ্ঞানিক। পৃথিবীর অনেক দেশ মহাজাগতিক প্রাণীদের সন্ধায় চায় বা পেতে চায়। এর ফলশ্রুতিতেই অনেক টাকা খরচ করে বব কার্লোস কে প্রধান করে টিম গঠন করে। টুকুনজিলকে ধরার জন্য বাংলাদেশে আসে দলবল সহযোগে। দুলাল। বিলুর গ্রামের সবচে' কাছের বন্ধু। ফুটবল বয়েজ ক্লাবে দুজন একসাথে খেলে। একসাথে লাইব্রেরি থেকে বই আনে। হাতে লেখা দেয়ালিকা তৈরি করে। ব্ল্যাক মার্ডার টিম। বিলুর নতুন স্কুলের তারিক, সুব্রত, নান্টু, মাহবুবদের গোপন টিম। রক্ত দিয়ে শপথ করে এ টিমের সদস্য হতে হয়। বিলুও দলের সদস্য হওয়ার জন্য রাজি হয়। বিলুর খালার বাসার সদস্য। খালা, খালু, সমবয়সী খালাতু ভাই বল্টু ও ছোট বোন মিলি। বিলুর পরিবার। বিলুর পাগলাটে বাবা, স্নেহশীল মা, বড়বোন রাঙাবুবু, ছোটাভাই লাবু। 🖊️ শেষকথা - বর্তমান যুগকে বলা হয় বিজ্ঞানের যুগ। প্রতি ৮ বছরে বিজ্ঞান এগিয়ে যায় তার দ্বিগুণ। তাই বিজ্ঞান থেকে একটু দূরে যাওয়া মানে সত্য থেকে যোজন যোজন দূরে যাওয়া। আর বৈজ্ঞানিক এইসব কঠিন কাগুজে ভাষাকে সহজে আয়ত্ত করার পথ হলো, সাবলিল ভাষায় রচিত ফিকশন সমূহ। বরাবর তাই আমি উপভোগ করি সাইন্স ফিকশনকে। এগুলো শুধুই যে ফিকশন এমন নয়, রয়েছে হাজারও থিউরি, তত্ত্ব, সূত্র, হাইপোথিসিস ইত্যাদি। যা একজন সত্যান্বেষীকে খোলে দেয় জ্ঞানের চোখ।