আমার বন্ধু রাশেদ

লেখক: মুহম্মদ জাফর ইকবাল

বিষয়: কথাসাহিত্য

২০০.০০ টাকা ২০% ছাড় ২৫০.০০ টাকা

বইয়ের বিবরণ

আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল

জন্ম ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২, সিলেট। বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র, পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন থেকে। ক্যালিফোর্নিয়া ইনিস্টিটিউট অব টেকনোলজি কমিউনিকেশন্স রিসার্চে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করে সুদীর্ঘ ১৮ বছর পর দেশে ফিরে এসে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্ত্রী প্রফেসর ড. ইয়াসমীন হক, পুত্র নাবিল এবং কন্যা ইয়েশিম।

এই লেখকের আরও বই
এই বিষয়ে আরও বই
আলোচনা ও রেটিং
৫(২)
  • (২)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
আলোচনা/মন্তব্য লিখুন :

আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন

Nazrul Islam

২২ Feb, ২০২৩ - ১১:৩৭ AM

বন্ধুর জন্য কখনও কেঁদেছেন? যদি আপনার উত্তর না হয়, তাহলে বলবো সত্যিকার বন্ধু আপনার জীবনে কখনও আসেনি। কথাটা কঠোর হলেও একদম সত্যি...!! 🔰আমার বন্ধু রাশেদ 🔰মুহম্মদ জাফর ইকবাল 🔰প্রকাশ কাল - ১৯৯৪ 🔰কাকলি প্রকাশনি 🔰বইয়ের ধরণ - শিশুতোষ ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক শিশু-কিশোরদের নিয়ে, শিশু-কিশোরদের জন্য, একাত্তরকে নিয়ে লেখা বিখ্যাত এক উপন্যাস "আমার বন্ধু রাশেদ।" শ্রেষ্ঠ এক কিশোর উপন্যাস। বাঙ্গালি জাতির গর্বের বিষয় ঊনিশশো একাত্তর। তবে সে গর্বের বিষয়টা একদিনে আসেনি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, তবেই না আমরা এ দেশ কিনেছি। উপন্যাসটিতে এক নির্ভিক কিশোরের দুঃসাহসিক অভিযান আর দেশপ্রেমের আখ্যানকে কেন্দ্র করে লেখক লিখেছেন শ্রেষ্ঠ এক কিশোর উপন্যাস। যা কিশোর মন সহ, বর্তমান প্রজন্মকে নাড়া দিয়ে যায় হৃদয়ের গভীর পর্যন্ত। 🔰🔰 প্রারম্ভ- আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, এটা সত্য। তবে বন্ধুত্ব দেখেছি। গভীর এবং খাটি বন্ধুত্ব। যেখানে বন্ধুত্বের আড়ালে কোনো স্বার্থপরতা নেই। আছে নিখাদ বিশ্বাস, ভরসা আর একরাশ ভালোবাসা। কোন এক ভাই ইউনিভার্সিটিতে বলেছিলেন- "হাইস্কুল লাইফের বন্ধুত্ব, জীবনের সেরা বন্ধুত্ব।" কথাটার আমি কোনো দ্বিমত পোষণ করিনি। আশ্চর্য হলেও সত্যি, আজ পর্যন্ত কাউকে করতেও দেখিনি। জীবনের সেরা সময়টা কিন্তু আসে হাইস্কুল লাইফে। স্কুল পালানো। বাসায় সত্যি-মিথ্যে কিছু একটা বলে বন্ধুদের সাথে হারিয়ে যাওয়া। সারাদিন দস্যিপনা করা। দুঃসাহসগুলো ভর কর এই লাইফেই। রাতে বাহিরে থাকা। বড় ভাইদের প্রেমের ডাকপিয়ন হওয়া। পাশের পাড়ার পোলাপানের সাথে সামান্য খেলা নিয়ে কথা কাটাকাটি, তারপর আবার মারামারি-রক্তারক্তি কান্ড ঘটানো। এ সব-ই কিশোর বয়সের নিয়মিত এবং চিরায়ত চরম সত্য। 🔰🔰 মূল উপাখ্যান- বইটার শুরু হয় একটা মজার ঘটনা, নাম রাখাকে কেন্দ্র করে। আস্তে আস্তে গল্প মোড় নেয় যুদ্ধে, আর যুদ্ধ যেই-সেই যুদ্ধ না। ৭১-এর মহান স্বাধীনতার মুক্তিযুদ্ধ। স্কুলে আসা নতুন ছেলেটার নাম লাড্ডু!! মজিদ স্যার উনার ক্লাসে এই রাখবেন না। তার ফলশ্রুতিতে লাড্ডু থেকে নাম বদল করে রাখেন রাশেদ। সময়টা ১৯৭১ সালের শুরু। দেশে অবস্হা অস্থিতিশীল। প্রতিদিন মিছিল, মিটিং। অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর। থমথমে পরিবেশ। যুদ্ধের দামামা বাজছে চারদিকে। যে কোনো সময় যে কোনো শুরু হয়ে যেতে পারে মুক্তিযুদ্ধ। এদেশের মানুষ আর শোষন সইবে না। অনেক হয়েছে নির্যাতন নিপীড়ন। মার্চে শুরু হয়ে গেলো যুদ্ধ। শান্তিকামী নিরীহ বাঙালির উপড় ঝাপিয়ে পড়লো পাক হানাদার বাহিনী। তাও রাতের আধাঁরে। স্কুল কলেজ সব বন্ধ। স্কুলগুলোকে দখল করে আবাসন নিলো হানাদার বাহিনী। স্কুল রাতারাতি রূপান্তরিত হলো ক্যাম্পে। জোয়ান-বুড়ো সবাই অংশ নিলো মুক্তিবাহিনীতে। মহিলারাও বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করেছেন যোদ্ধাদের। এমনকি বাদ যায় নি কিশোর যোদ্ধারা পর্যন্ত। সময়ট যুদ্ধের মাঝামাঝি। রাশেদ বরাবর-ই সাহসি ছেলে। এই বয়সেই সে রাজনীতি কি বোঝে। মিছিলে যায়। তার সব ধরনের লোকের সাথে ভালো আতাঁত। ফলশ্রুতিতে দেখা যায়, খুব সহজেই খোঁজে নেয় মুক্তিযোদ্ধারা তাকে। এরপর সে ও তার বন্ধুরা অংশ নেয় সাহসি যুদ্ধে। তথ্য আদায়-প্রদানে। গোলা বারুতসহ গোপনে এটা-সেটা দিয়ে সহায়তা করা। কি রাত, কি দিন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে রাশেদের সব বন্ধুরা তার পরিবারের সাথে চলে যায়, সে কেবল একা সাহায্য করা চালিয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের। যোদ্ধের শেষের দিকে, ডিসেম্বরের ২ তারিখ গ্রেনেড সহ ধরা পরে রাশেদ। রাজাকার বাহিনীর সর্দার আজরফ আলী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা রাশেরকে নিয়ে যায় নদীর পাড়ে। তারপর..... 🔰🔰 চরিত্রায়ন- পুরো গল্পটি ইবু'র বর্ণনায় বর্ণিত। যার ভালো নাম রকিবুল হাসান। উপন্যাসে সবচে' বেশি তার চরিত্রকে ডেভেলপ করা হয়েছে। গল্পের প্রাণ লাড্ডু থেকে টান্সফার হওয়া রাশেদকে ঘিরে। বয়সের বিবেচনায় সে ছোট্ট হলেও সাহসের বিবেচনায় সে বড়দেরও ছাড়িয়ে গেছে। এতটুকু বয়সে সে রাজনীতি কি ভালো করে জানে। মশাল মিছিলসত যাবতীয় রাজনৈতিক প্রোগ্রামে সে যায়। রেগুলার খবরের কাগজ পড়ে। তার মধ্যে রয়েছে অগাধ দেশপ্রেম। কখনও কখনও তাকে নিজেকেও ছাড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। দিলীপ হিন্দু ঘরের ছেলে। লেখক তার সুনিপুণ লেখনি শৈলীতে তৎকালিক হিন্দুদের অবস্হাকে তুলে ধরেছেন। বাচাঁর জন্য সে ও তার পরিবার নিজেদের নাম বদলে ফেলে। সিথির সিদুর মুছে ফেলেন দিলীপের মা। কলমা শিখেন হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পরলে শেষ ভরসা হিসেবে। ক্লাসের ফাস্ট বয় হচ্ছে আশরাফ। সেইসাথে ক্লাস ক্যাপ্টেনও। সে সব সময় রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও, দেশের সংকটময় সময়ে কিংবা বন্ধুদের কথায় বিনা বাক্যব্যয়ে চলে আসে জীবন-মরণের সীমারেখায়। কোনো ধরণের দ্বিধাদ্বন্দ্ব না করেই। ফজলু। সে ইবু, আশরাফ আর রাশেরদের কাছের বন্ধু। সবগুলো সাহসি পদক্ষেপের সঙ্গি ছিলো সে। অরু আপা ও শফিক ভাই। কলেজ পড়ুয়া শফিক ভাই ইবুর পাড়াতো ভাই। সে করতে পারে না এমন কোনো কাজ নেই। যুদ্ধের সময় শফিক ভাই গোপনে মুক্তি বাহিনীতে যোগ দেন। কেউ জানে না তার এই মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কথা। শুধু রাশেদ ও তার বন্ধুরা ছাড়া। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অরু আপার বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ইবু রাশেদের সাথে রাত-বিরাতে চলে আসে মুক্তি বাহিনীর সাথে গোপনে দেখা করতে। উপন্যাসের শেষে শফিক ভাই আর অরু আপার একটা মধুর পরিণতি দেখানো হয়েছে। এছাড়াও মজিদ স্যার, ফেল্টুস কাদের, রাজাকার আজরফ আলী, মুক্তি বাহিনীর কাজল ভাই সহ বেশ কয়েকজনকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলা হয়েছে। যাদের কারণে কাহিনি এগিয়েছে তরতর করে। উপন্যাস পেয়েছে পূর্ণতা। 🔰🔰 লেখক সম্পর্কে কয়েক লাইন- জাফর ইকবাল স্যারকে চিনে না, এমন পাঠক মনে হয় না দেশে আছে। সমকালীন কথা-সাহিত্যিক এবং বিজ্ঞানমনস্ক লেখকদের মধ্যে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার সবার প্রথমে আসেন। তিনি ১৯৫২ সালের ২৩-শে ডিসেম্বর, সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। শিক্ষাজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের "ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন" থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এছাড়াও "ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি" এবং "বেল কমিউনিকেশান্স" রিসার্চে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেন। সুদীর্ঘ ১৮ বছর পর দেশে ফিরে এসে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের "কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং" বিভাগে। বর্তমানে তিনি অবসরে আছেন৷ সাহিত্যজীবনে রচনা করেছেন অসংখ্য বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ও কিশোর সাহিত্য। তাদের মধ্যে "নিঃসঙ্গ গ্রহচারী","জলজ", "আমি তপু", "আমার বন্ধু রাশেদ", "টুকুনজিল" "নাট-বল্টু" "দানব", "দীপু নাম্বার টু" "টুনটুনি ও ছোটাচ্চু সিরিজ" অন্যতম। 🔰🔰 ভালো লাগার মুহূর্তগুলো- কিশোর উপন্যাসেটিতে ভালো লাগার অনেকগুলো মুহূর্ত আছে। বলতে পুরোটাই ভালোলাগার সমুদ্দুর। কয়েকটি মুহূর্ত আছে কিংবা কিছু লাইন, যেগুলো ভূলার মতো নয়। যেমন- "আমার ক্লাসে কারো ভালো নাম লাড্ডু মুহাম্মদ চলবে না। তোর বাবাকে গিয়ে বলবি একটা ভালে নাম দিতে। ছেলেটা মাথা চুলকে বলল, লাভ নেই স্যার। -কেন লাভ নেই? -বাবা নাম দিবে না। -কেন দিবে না? -বড় আলসে। তাছাড়া একটু পাগল কিসিমের। আমার এক ভাই আছে, তাকেও পুরো নাম দেয়নি। -কি নাম তার? -চমচম।" "এখন আমি তোকে নতুন নামে ডাকবো, তুই জবাব দিবি। ঠিক আছে? ছেলেটা মাথা নাড়লো। স্যার ডাকলেন, রাশেদ হাসান। -জ্বী। -ভেরি গুড। স্যার এবারে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, যদি তোরা আর কেউ কোনোদিন রাশেদ হাসানকে লাড্ডু বলে ডাকিস তোদের মাথা ভেঙ্গে ফেলবো। এখন থেকে এর নাম রাশেদ।" "তুই আমার বন্ধু হবি? আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, কেন আমি কি তোর বন্ধু না? একেবারে প্রানের বন্ধু। সারা জীবনের বন্ধু। মরে গেলেও যে বন্ধু থেকে যায় সেই বন্ধু। হবি? আমি মাথা নাড়লাম, হব।" "সেই অন্ধকার রাতে আমি আর রাশেদ হঠাৎ করে বড় হয়ে গেলাম।" "নিষিদ্ধ জিনিস দেখার একরকম আকর্ষণ থাকে।" 🔰🔰 চোখ ভিজে আসার মুহূর্তগুলো- এই বইটি পড়তে গিয়ে শুধু যে ভালো লেগেছে, এমন কিন্তু নয়। অসম্ভব ভালো লেগেছে। কিছু জায়গায় চোখ কোনো বাধা মানে নি... অজান্তেই কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরেছে। কোনো আগাম নোটিশ না দিয়েই। যতবার ওরা কেঁদেছে, তারচেয়ে আমি বেশি কেঁদেছি। কতগুলো তেমনি অংশ বিশেষ- "দেশ যখন স্বাধীন হবে তখন আর হিন্দু মুসলমান থাকবে না। -ততদিনে আমরা মরে ভূত হয়ে যাবো। -মরবি কেন? -আমরা যে হিন্দু। রাস্তায় যদি আমাদের ধরে তাহলে বলবো, আমরা মুসলমান। বাবা আমাদের একটা করে নাম ঠিক করে দিয়েছে। আমারটা আমি ঠিক করেছি। -কি নাম? -রকিবুল হাসান। আমি দিলীপের দিকে তাকালাম। রকিবুল হাসান আমার ভালো নাম। দিলীপ হঠাৎ এসে আমাকে ধরে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে শুরু করলো। কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমার মরতে ইচ্ছে করে না। একেবারে মরতে ইচ্ছে করে না।" "অরু আপা বললেন, "উনিশশো একাত্তরের যুদ্ধ, এই দেশের শিশুদের কাছ থেকে তাদের শৈশব কেড়ে নিয়েছে।" "আমি পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে অরু আপার হাতে দিলাম। অরু আপা জিজ্ঞেস করলেন, কি এটা? -তোমার চিঠি। শফিক ভাই দিয়েছে। -শফিক? অরু আপা চমকে উঠে বললেন, শফিক ফিরে এসেছে? দেখা হয়েছে তোর সাথে? -তোমাকে বলতে পারবো না অরু আপা। আমরা দেশের নামে শপথ নিয়েছি--- -তুই... তুই মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করেছিস? আমি মাথা নিচু করে রইলাম। অরু আপা নিচু হয়ে আমার কাছে এসে হঠাৎ আমাকে বুকে চেপে ধরে ভাঙ্গা গলায় বললেন, এইটুকুন ছেলে তুই, তোর এখন ঘুড়ি উড়ানোর কথা, মাঠে বল খেলার কথা, আর তুই কি না মুক্তিবাহিনীর সাথে কাজ করিস? নিজের প্রাণ হাতে নিয়ে? তোর মতো বাচ্চা? তারপর হঠাৎ কথা নেই, বার্তা নেই। অরু আপা আমাকে শক্ত করে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে ফেললেন। " "রাশেদ, রাশেদ কই? আশরাফ আর ফজলু কেমন জানি চমকে উঠলো। একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। দেখলাম ওদের মুখটা ছাইয়ের মতো সাদা হয়ে যাচ্ছে। আশরাফ দুই হাতে আমাকে শক্ত করে ধরে বললো, হায় খোদা! তুই এখনও জানিস না? -কি জানি না? দুজনের কেউ কোনো কথা বললো না, কেমন যেন ভয় পেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। -কি হলো কথা বলছিন না কেন? তখনও কেউ কোনো কথা বললো না। - কি হয়েছে রাশেদের? আশরাফ ঢোক গিলে বললো, ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখে রাশেদ ধরা পড়লো বাজারের কাছে। ব্যাগের মধ্যে ছয়টা গ্রেনেড ছিলো। আজরফ আলী ও রাজাকাররা তখন নদীর ঘাটে নিয়ে দাড়ঁ করিয়ে... দাড়ঁ করিয়ে... আমার হঠাৎ মনে হলো আমার হাত-পায়ে কোনো জোড় নেই। আমি পিছিয়ে একটা দেয়াল ধরে বললাম, মেরে ফেলেছে রাশেদকে? মেরে ফেলেছে? আশরাফ হঠাৎ ভেউ ভেউ করে কেঁদে ফেললো। আমার ইচ্ছে হল ভয়ংকর একটা চিৎকার করে সারা পৃথিবী ভেঙ্গে ধ্বংস করে দেই। হায় খোদা! তুমি এটা কি করলে? কি করলে? তুমি এটা কি করলে?" 🔰🔰 পরিশিষ্ট- কিশোরকালটা রঙ্গীন হওয়ার পেছনে যে কয়টা বই আমার জীবনে এসেছে, তার মধ্যে এ বইটা অন্যতম। এ বইটা আমি প্রথম বার পড়ি ক্লাস সিক্সে। একদম উপন্যাসের হিরোদের সমসাময়িক বয়সে। সে এক অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করছিল মনে। বার বার তখন ভাবছিলাম, আবার যুদ্ধ হোক আর আমি "রাশেদ" হয়ে যাই। আজ এতো বছর পরও যখন পড়লাম, সেই একই অনুভূতি। সেই এক-ই ভালোলাগা। বিন্দুমাত্র বদলায়নি ভাবাবেগ। #সেজান

Yeash Ahmed

১৭ Feb, ২০২৩ - ৮:১৮ PM

গল্পের শুরুটা হয় মজিদে স্যারের ক্লাসে ভর্তি হতে আসা একটি ছেলে নাম লাড্ডু কে নিয়ে। কিন্তু মজিদ স্যারের ক্লাসে লাড্ডু নামের ছাত্র! "কাভি নেহি"। গল্পের শুরুর দিকের এই দুটি শব্দই গল্পের প্লট সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়। তখন দেশে পাকিস্তান শাসন ।তাই তাদের মুখের অনেক শব্দ তখনকার বাঙালিরাও ব্যবহার করতো এই দুটি শব্দ তার'ই ইঙ্গিত ।সে যাই হোক,আমরা গল্পে ফিরি। স্যার তাকে একটা নাম দিলেন " রাসেদ হাসান"। নামটা রাসেদের খুব পছন্দ হয়ে গেলো তাই এর পর থেকে কেবল এই নামে ডাকলেই সাড়া দিতো। এই নিয়ে ক্লাসে একদিন কাদের নামের এক দুষ্টু ছেলের সাথে বেশ একটা ফাইট ও হয়ে গেলো। রাসেদ ছিল ক্লাসে সবচেয়ে আলাদা। এর কয়েকটি কারণ হলো- রাশেদ স্কুলে এসেছে ফেইল করতে কারণ কয়েকবার ফেইল করলে রাশেদের বাবা রাশেদ কে আর পড়াবে না, রাশেদের বাবা একটু পাগলা কিসিমের এবং এটা স্বীকার করতে রাশেদ লজ্জা বোধ করে না আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রাশেদ রাজনীতির আলাপ করে এবং মশাল মিছিলে যায়। তাই কিছুদিনের মধ্যে দিলীপ, ফজলু, আশরাফ ,ইবু ,রাশেদ নামের অদ্ভুত ছেলেটির বেশ ভালো বন্ধু হয়ে যায়। রাশেদ বাদে বাকিরা একই এলাকায় থাকতো। এবং সেই এলাকায় আরো থাকতো সফিক ভাই ও অরু আপা।রাশেদের বন্ধুরা রাশেদের কাছ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক আলাপ জানতে শুরু করে।পশ্চিম পাকিস্তান কিভাবে আমাদের শোষণ করে বেঁচে থাকে , বঙ্গবন্ধু কে এবং আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাও তারা প্রথম রাশেদের কাছেই দেখতে পায়। এভাবে চলতে চলতেই একদিন ওদের গ্রামে একদিন মিলিটারি চলে আসে এবং ক্যাম্প বানায় ওদের স্কুলেই। চারিদিকে যখন ভয় তখন'ই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বয়সে ছোট হওয়ায় মুক্তি কমান্ডার ওদের নিতে চায় না। মুক্তি ক্যাম্পে গিয়েই অরা প্রথমে সফিক ভাইকে দেখতে পায় এবং যে লুকিয়ে মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছে। দিলীপ, ফজলু, আশরাফ ,ইবু ,রাশেদ রা মুক্তি যুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহন না করলেও সরাসরি অবদান রাখতে শুরু করে। যেমন স্কুলের ম্যাপ দিয়ে বা কখনো গুলি পৌছে দিয়ে। একটি অপারেশনে সফিক ভাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পরলে এরা অসীম সাহসীকতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে তাকে উদ্ধার করে।যেটি এই গল্পের সবচেয়ে লোমহর্ষক অংশ। পাকিস্তানিদের অত্যাচার বাড়তে থাকলে এক সময় রাশেদের বন্ধুরা অঞ্চল ছেড়ে বিভিন্ন যায়গায় চলে যেতে শুরু করে। সর্বশেষ যখন রাশেদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ইবুও চলে যায় তখন রাশেদ একদম একা হয়ে যায়। কিন্তু একা হয়েও রাশেদ মুক্তি যুদ্ধের কাজ করে যায় । কিন্তু তারাদের ও একদিন নিভতে হয়। ১৯৭১ সালের ২রা ডিসেম্বর রাজাকারের হাতে ধরা পরে রাশেদ। নিয়ে যাওয়া হয় নদীর পারে। চোখ বেধে তার দিকে গুলি তাক করে বলতে বলা যায় " পাকিস্তান জিন্দাবাদ" ।শর্ত দেয়া হয় এটা বললে তাকে ছেড়ে দিবে রাজাকার। কিন্তু রাশেদের সাহস অসীম। মৃত্যু ভয় যদি রাশেদের থাকতো তাহলে সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করতো না।রাশেদ বলে না পাকিস্তান জিন্দাবাদ।তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে "জয় বাংলা"। রাজাকাররা তাকে গুলি করে হত্যা করে। নদীর স্বচ্ছ পানি লাল হয় একজন ক্ষুদে মুক্তিযোদ্ধার রক্তে। দেশ স্বাধীনের পর সবাই তার নিজ বাড়িতে ফিরে এলো। অরু আপা শফিক ভাইকে ফিরে পেল। ইবু দৌড়ে গেল বন্ধুদের খবর নিতে। আশরাফ,ফজলুকে দেখে খুশিতে জড়িয়ে ধরল ইবু। বলল রাশেদ কই? তারা ফ্যাকাশে মুখে নিচু হয়ে জবাব দিল , রাশেদ আর নেই। মনটা ভীষণ অজানা শূন্যতায় ভরে উঠলো। চিৎকার করে কেঁদে ফেলল ইবু। কিছুতেই মানতে পারছিল না সে। রাশেদের কথাগুলো বারবার মনে পড়ছিল তার। শেষ দেখায় সে যে বলেছিল, ‘তুই আমার বন্ধু হবি? একেবারে প্রাণের বন্ধু। সারা জীবনের বন্ধু। মরে গেলেও যে বন্ধু থেকে যায়। সেই বন্ধু!’ জাফর ইকবাল স্যারের পড়া আমার প্রথম বই এটি। এবং এই বই এর মাধ্যমেই আমার বই পড়ার অভ্যাস হয়েছিল। প্রথম গল্পটা পড়ে কেঁদেছিলাম। আজ বহুবছর পরেও বই এর একাংশ পড়লে মনটা হাহাকার করে। আমাদের পাঠ্যবই মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাক্তিত্বের অবদান নিয়ে কথা বললেও কখনো এই ক্ষুদে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কথা বলে না।অথচ এরকম হাজারো রাশেদের ত্যাগের বিনিময়েই আমদের এই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। রাশেদদের হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। তাদের রেখে দিতে হবে আমাদের ভাবনায়,ব্যক্তিত্বে অথবা গল্পে। যেনো দেশের অন্য কোনো সংকটে আমরাও একেকজন রাশেদ হয়ে উঠতে পারি। দেশকে আগলে রাখতে পারি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। যতদিন রাশেদের মত ক্ষুদে সাহসীদের হাতে দেশ পথ হারাবে না বাংলাদেশ। #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা