বইয়ের বিবরণ

আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

আবুল মনসুর আহমদ

সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও রাজনীতি—তিন ক্ষেত্রেই আবুল মনসুর আহমদ (১৮৯৮-১৯৭৯) কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। দেশ বিভাগের আগেই সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় তাঁর সাফল্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ব্যঙ্গরচনায় তাঁর কুশলতাকে এ দেশে আজও কেউ অতিক্রম করতে পারেননি। রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও ছিলেন সক্রিয়। পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক রাজনীতির সূচনা থেকে প্রায় এক দশককাল সামনের সারিতে থেকে তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রথমে প্রাদেশিক এবং পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যঙ্গধর্মী রচনায় যেভাবে তিনি সামাজিক কুসংস্কার ও গোঁড়ামি, রাজনৈতিক ভণ্ডামি ইত্যাদিকে কশাঘাত করেছেন, তা আজও আমাদের মুগ্ধ করে। তাঁর অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে—ছোটগল্প: আয়না, ফুড কনফারেন্স, আসমানী পর্দা ; উপন্যাস: সত্যমিথ্যা, আবে হায়াত ; প্রবন্ধ-স্মৃতিকথা: আত্মকথা, শেরেবাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু, বেশী দামে কেনা কম দামে বেচা আমাদের স্বাধীনতা।

এই লেখকের আরও বই
এই বিষয়ে আরও বই
আলোচনা ও রেটিং
৪(১)
  • (০)
  • (১)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
আলোচনা/মন্তব্য লিখুন :

আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন

Shotabdi Bhattacharjee

০১ Feb, ২০২৩ - ২:০০ PM

আত্মজীবনী অনেক পড়েছি, কিন্তু এমন অকপট আত্মকথা কমই পড়েছি। এমনকি পড়িনি বললেও ভুল হবে না বোধহয়৷ আবুল মনসুর আহমদ এর লেখনশৈলী এমনিতেই দারুণ রসাত্মক। তাঁর ভাষাশৈলী একটু আলাদা হলেও কৌতুকরস আর তীক্ষ্ণ শ্লেষের সাথে প্রাঞ্জল বর্ণনায় একটা নেশার মতো অবস্থার সৃষ্টি করে দিতে পারেন। তাঁর এই আত্মজীবনীটি একটা বিশেষ সময়কে প্রতিনিধিত্ব করে। তৎকালীন সমাজব্যবস্থা, সম্ভ্রান্ত মুসলিমদের মনোভাব, ধীরে ধীরে রাজনৈতিক পালাবদল এইসব অতি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস উঠে এসেছে বইটিতে। বইটাকে ভাগ করা হয়েছে শৈশব, সাহিত্য জীবন, আইনী জীবন, সাংবাদিক জীবন ইত্যাদি ভাগে। এতে সুস্পষ্টভাবে লেখকের জীবনের নানান সময়কার ভাবনা চিন্তার পরিবর্তন ধরা গেছে। লেখকের পরিবার ফরায়েজী মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। ছেলেবেলা থেকেই প্রচণ্ড ধর্মবিশ্বাসী এবং তীব্র আত্মসম্মানবোধযুক্ত একজন মানুষ ছিলেন লেখক। তাঁর মেধা এবং প্রজ্ঞা শৈশব-কৈশোরেই তাঁর পরীক্ষার ফল, প্রবন্ধ লেখন এবং আচরণের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। স্থানে স্থানে গ্রামীণ নানান সংস্কৃতি, কুসংস্কার এর সাথে হিন্দু-মুসলিমের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টিও উঠে এসেছে। সাম্প্রদায়িকতা তখন বেশ প্রকটভাবেই উপস্থিত থাকলেও পারস্পরিক প্রীতিরও একটা জায়গা ছিল। লেখক যখন নিজ এলাকা ছেড়ে বড় শিক্ষামাধ্যমে যান তখন নানান ব্যক্তিত্ব এবং বিশ্ব সাহিত্যের সাথে পরিচিত হয়ে তাঁর ধর্মীয় ভাবনায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। নানা উত্থান পতন, বদলের মধ্য দিয়ে বারবার তাঁর ধর্মীয় চিন্তার পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি মুসলিম স্বকীয়তা, সংস্কৃতির একজন প্রকৃষ্ট ধারক ছিলেন৷ দুই ধর্মের মানুষের অন্যায় আচরণেরই প্রতিবাদ করতেন। মনেপ্রাণে একজন বাঙালি মুসলিম ছিলেন কিন্তু অসাম্প্রদায়িক ভাবনা লালন করতেন, যদিও তাঁর আচরণ, কথাবার্তায় অনেক হিন্দু বন্ধুই ভুল বুঝতেন। রাজনৈতিক জীবনে কংগ্রেসপন্থী ছিলেন, ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর একনিষ্ঠ সমর্থক। পরবর্তীতে পাকিস্থানপন্থী হন। সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক জীবন অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। কাজী নজরুল ইসলামের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক শেষ দিকে শীতল হয়ে পড়ে। নবযুগ পত্রিকার সাথে সম্পর্ক ছেদের সময়টুকু বেশ টানাপোড়েন এর। তাঁর প্রবন্ধ রচনার প্রতিভার পরিচয় শৈশবেই পাওয়া যায়৷ যদিও লেখক স্বীকার করেছেন যে সেটা ঠিক মৌলিক ছিল না, অনুবাদ ছিল। তবুও সেই অনুবাদটাই তাঁর রচনার গুণে প্রায় মৌলিক হয়ে ওঠে ভূয়সী প্রশংসা কুড়ায়। লেখকের জীবনে তাঁর স্ত্রী এর ভূমিকা শতকণ্ঠে ব্যক্ত করেছেন, যেটা বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনীতে বেশ কমই পাওয়া যায়। তাঁর রাজনৈতিক জীবন এবং আইন পেশা দুইক্ষেত্রেই তাঁর স্ত্রী এর প্রভাব অপরিসীম। যদিও বয়সের হিসেবে একটা গোলমাল করেছেন লেখক। দুইজনের জন্মসাল লেখা যথাক্রমে ১৯২৬ এবং ১৯১৬, অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধান৷ অথচ তার কয়েক লাইন পরেই লেখক বলছেন, ১১ বছরের এক বালিকার পক্ষে ৩০ বছরের এক যুবককে তুমি বলে সম্বোধন করা কঠিন। অর্থাৎ এখানে আবার ব্যবধান দাঁড়াচ্ছে ১৯ বছর! তবে ব্যবধান যাই হয়ে থাকুক, দাম্পত্য জীবনে যে তিনি অত্যন্ত তৃপ্ত ছিলেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। লেখকের নিজস্ব জবানের প্রতিটা কথাই ভালো লেগেছে এমন বলব না। মাঝে মাঝে ব্যক্তিত্বের তীব্রতা এবং অকারণ জেদ আমার ভালো লাগেনি। কিন্তু বইটা একটা রত্নবিশেষ। একজন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের বেড়ে ওঠা, তাঁর নানান চিন্তার উন্মেষ এবং বদলের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়া, নানান সুকুমার ক্ষেত্রে অবদান রাখার পাশাপাশি রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা, বিখ্যাত সব ব্যক্তিদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওঠাপড়া ইত্যাদি পাঠ অনেক ভাবনার খোরাক জোগায়, অনেক দ্বিধা দূর করে দেয়, লেখককে এক নতুন চোখে দেখতে শেখায়। বিশেষত তাঁর বৈষয়িক ভাবনাগুলো বেশ আলোড়িত করে। তাই আবুল মনসুর আহমদ এর এই অকপট আত্মজীবনী বাংলা সাহিত্যের একটি অত্যুজ্জ্বল রত্নের পাশাপাশি একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা