তোত্তোচান: জানালার ধারে ছোট্ট মেয়েটি
লেখক: চৈতী রহমান, তেৎসুকো কুরোয়ানাগি (অনুবাদক)
বিষয়: অনুবাদ, শিশু-কিশোর সাহিত্য
বইয়ের বিবরণ
- শিরোনাম তোত্তোচান: জানালার ধারে ছোট্ট মেয়েটি
- লেখক চৈতী রহমান, তেৎসুকো কুরোয়ানাগি (অনুবাদক)
- প্রকাশক দুন্দুভি
- আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৮০৯৯০০১
- মুদ্রণ 1st Published, 2018
- বাঁধাই Paperback
- পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৫৬
- দেশ বাংলাদেশ
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
Nurul Abser
১৭ Feb, ২০২৩ - ৭:৪৫ PM
শৈশব নিয়ে আমাদের নানারকম স্মৃতি থাকে। আমরা সবকিছুর প্রতি প্রথমবার মুখোমুখি হই শৈশবে । চারপাশের প্রকৃতির সাধারণ ঘটনাগুলো আমাদের কাছে অদ্ভুত এবং মজাদার লাগে। ছোটবেলার স্কুল নিয়ে আমাদের সবসময় ভয় থাকে,কারণ প্রতিদিন স্যারদের নতুন পড়া, হোমওয়ার্ক ইত্যাদি। প্রায় প্রত্যেক ছেলেমেয়েদের শৈশবে শাসনের মধ্যে দিয়ে যেতে হতো। সে সময় আমাদের মাথায় হাজারটা কৌতুহল ঘুরপাক খায় কিন্তু আমরা সেটা স্বাচ্ছন্দে প্রকাশ করতে পারি না। তোত্তোচানও আমাদের সেই ছোটবেলার মতো ছোট্ট শিশু। যে তোমোয়েতে এর মতো স্কুলে পড়ার মতো সুযোগ পেয়েছিল। তার শৈশবে স্কুলজীবন ও চারপাশের প্রকৃতির অভিজ্ঞতা নিয়ে এই বই। এই বইটা পড়ে আমার প্রথমেই মাথায় এসেছে ছোটদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। ছোট থেকেই একটা শিশু বুঝতে শিখে, পৃথিবীর অদ্ভুত সৌন্দর্যগুলো আবিস্কার করে। তাই শিক্ষা ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যেখানে ছেলেমেয়েদের নিজের ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশটা বেশি ঘটবে। তোমোয়েতে এমন একটি স্কুল যেখানে তথাকথিত শিক্ষা ব্যবস্থার বিপরীতে একদম ভিন্ন রূপ। ⭕উপন্যাস সম্পর্কেঃ তোত্তোচান বইটিতে লেখিকা তেৎসুকো কুরয়ানাগি তার নিজের ছোটবেলার স্মৃতিকথা তুলে ধরেছেন। বইটা প্রকাশ হওয়ার পর জাপানে বেস্টসেলার বইয়ে জায়গা করে নেয় এবং ছেলেমেয়েদের পাঠ্যবই হিসেবে পড়ানো হয়। বইটি একটি সুন্দর শিক্ষা ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে। তোমোয়েতে স্কুলটি ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য আদর্শ স্বরূপ একটি স্কুল। যেই স্কুল ছুটি হওয়ার পরও বাচ্চারা বাড়ি যেতে চায় না আবার সকাল হওয়ার অপেক্ষা করে কখন স্কুলে যাবে। তোত্তোচান এই স্কুলে ভর্তি হয়েছে এবং সে অবাক হয় এই স্কুলটি তার আগের স্কুল গুলোর মতো নয়। এখানে সবাই যে যার ইচ্ছে মতো বিষয় নিয়ে পড়তে পারে। স্যারেরা বকা দেয় না বরং তাদের মনের অবস্থা বুঝতে পারে। ⭕পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ বইটা পড়ে অদ্ভুত কিছু সুন্দর দৃশ্যের মুখোমুখি হলাম। আবার শেষে গিয়ে মনটা বিষন্নও হয়েছে। তোত্তোচানের বিভিন্ন জিনিসের পরিচিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে ছোট ছোট অধ্যায়ে বইটা শেষ হয়েছে। আমরা ছোটবেলায় স্কুল থেকে বহিষ্কার হলে কতো কান্নায় না করতাম, আমাদের মা-বাবা আমাদের বকতো। কিন্তু তোত্তোচান বকা শুনার বদলক বরং তাকে তোমোয়ের মতো দারুণ একটা ট্রেন স্কুলে ভর্তি করিয়েছে। যে স্কুলের কথা তোত্তোচান সারাজীবন মনে রাখবে। বইটা একটা বড় শক্তি হলো বইটি আমাদের পরিচিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছে। শিক্ষা হতে হবে যেটা বাচ্চারা আনন্দ পায়, তারা নিজেরাই নিজেদের প্রয়োজনটুকু যেন বুঝে। আমি নিশ্চিত তোমোয়ে স্কুলের মতো এখনকার স্কুলগুলো হতো তাহলে আমরা প্রতিনিয়ত যে নির্যাতনের কথা শুনি এগুলা হতো না। তোত্তোচান আর তার তোমায়েতে স্কুলের সুন্দর সুন্দর মূহুর্ত নিয়ে গল্প এগিয়েছে। তোত্তোচান তোমায়েতে স্কুলে এসে জানতে পারল এখানে টিফিনে পাহাড় থেকে কিছু সাগর থেকে কিছু আনতে হয়। যার যে বিষয় পড়তে ইচ্ছে সে সেটা পড়তে পারে। এখানে প্রতিদিন সবাই একসাথে পদযাত্রা করতে যায়। এখানে দুষ্টমি করলে স্যারেরা বকা দেয় না। তোত্তোচানের কাছে সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যক্তি হলো তার হেডমাস্টার। তোত্তোচান কোন ভুল করলেও তিনি কোনদিন রাগ করে নি। ⭕সোসাকু কোবায়াশিঃ কোবায়াশি তোমোয়ে স্কুলের প্রতিষ্ঠাটা, যিনি তোত্তোচানের হেডমাস্টার। এরকম হেডমাস্টার প্রতিটি স্কুলে থাকলে হয়তো ছেলেমেয়েরা সুন্দর একটা শৈশব পেত। তিনি শিক্ষাদের নির্দেশ দেওয়ার চাইতে তাদের কথা শুনতে বেশি পছন্দ করে। তিনি মানেন এবং জানেন পড়ালেখা কখনো চাপ প্রয়োগে হয় না। পড়াশোনা শিখতে হয় প্রকৃতি থেকে, নিজের মনের আত্মা শান্তি হলেই পড়াশোনা সফল।উনি কখন ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিভেদ করে নি। সবধরনের ছেলেমেয়েরা যেমন ইয়াসুয়াকি ইয়ামামোটো মতো পোলিও আক্রান্ত ছেলেরাও সাথে সবার সাথে চলতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছেন। উনি জানেন অসুস্থ বাচ্চারা সুস্থ বাচ্চাদের সামনে গেলে দুঃখ পায়। তাই তিনি তোমোয়েতে এমন ব্যবস্থা করেছেন যেন কেউ দুঃখ না পায়। সবাই হাসিখুশি থাকে। তাদের আনন্দেই তার আনন্দ হয়। লেখিকার কলমে কোবায়াশির জন্য পরম শ্রদ্ধা ফুটে উঠেছে। 🟠বাচ্চাদের বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তাগুলোকে সুন্দর ভাবে প্রকাশের সুযোগ দিলে তারা কতটা নিজে থেকে চলতে শেখে সেটা এই বই পড়ে বুঝা যায়। তাদেরকে শাসন নয় আদরে আর প্রকৃতির সান্নিধ্যে এনে শেখানো উচিত। স্কুল যে কতটা মজাদার হয় সেটা তোত্তোচান না পড়লে বুঝা যাবে না। ⭕সবশেষে আমারও তোত্তোচানের মতো বলতে ইচ্ছে হয় " তোমোয়ো ভালো স্কুল, ভেতরে বাহিরে ভালো স্কুল" #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বইরিভিউ_প্রতিযোগিতা