অনন্য জীবনানন্দ: জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যিক জীবনী
লেখক: ক্লিন্টন বি সিলি, ফারুক মঈনউদ্দীন
বিষয়: জীবনী/আত্মকথা/স্মৃতিকথা, অনুবাদ
মার্কিন গবেষক ক্লিন্টন বি সিলি ষাটের দশকে দুই বছর বরিশালে ছিলেন। কিন্তু তখনো জীবনানন্দ দাশের কবিতার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটেনি, পরিচয় ঘটে নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার পর। এই কবি সম্পর্কে তাঁর গভীর গবেষণালব্ধ তথ্য ও অন্তদৃর্ষ্টিময় বিশ্লেষণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত হয় আ পোয়েট অ্যাপার্ট। এত দিন পর প্রকাশিত হলো সে বইয়ের বাংলা অনুবাদ। জীবনানন্দ দাশের জীবন ও কবিতা সম্পর্কে অপরিহার্য একটি বই
বইয়ের বিবরণ
১৯৫৪ সালে ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন জীবনানন্দ দাশ। এরপর রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতার প্রধান পুরুষ হয়ে ওঠেন এই কবি। তাঁর গভীর প্রভাব বাংলা কবিতার চেহারা পাল্টে দেয়। আধুনিক বাঙালি পাঠকের রুচির পরিবর্তনে তাঁর কবিতার অনির্বচনীয় অভিজ্ঞতা পালন করে মুখ্য ভূমিকা। মার্কিন গবেষক ক্লিন্টন বি সিলি ষাটের দশকে দুই বছর বরিশালে ছিলেন। কিন্তু তখনো জীবনানন্দ দাশের কবিতার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটেনি। পরিচয় ঘটে নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার পর। এই কবি সম্পর্কে তাঁর গভীর গবেষণালব্ধ তথ্য ও অন্তদৃর্ষ্টিময় বিশ্লেষণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত হয় আ পোয়েট অ্যাপার্ট। এ বইটির মধ্য দিয়ে উঠে আসে ব্যক্তিজীবন ও সাহিত্যকর্মের যোগে জীবনানন্দ দাশের এক সামগ্রিক ও অনুপুঙ্খ চিত্র। এ বই বিশ শতকের প্রথমার্ধের সমাজ-রাজনীতির সময়পটে এক তীব্র অনুভূতিশীল কবির রক্তাক্ত জীবনছবি।
- শিরোনাম অনন্য জীবনানন্দ: জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যিক জীবনী
- লেখক ক্লিন্টন বি সিলি, ফারুক মঈনউদ্দীন
- প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন
- বাঁধাই Hardcover
- দেশ বাংলাদেশ
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
ফারুক মঈনউদ্দীন
জন্ম ১৯৫৮ সালে, চট্টগ্রামে। পেশায় ব্যাংকার আর নেশায় কখনো গল্পকার, কখনো অর্থনীতি বিশ্লেষক, কখনো অনুবাদক, আবার কখনো ভ্রমণলেখক। মূলত কবিতা এবং গল্পলেখার মধ্য দিয়ে শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে একে একে তাঁর শাখা মেলতে থাকে বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে। এযাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থগুলো থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহ এবং পদচারণের পরিচয় মিলবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে গল্পগ্রন্থ তিনটি, অনুবাদ তিনটি, ভ্রমণ চারটি, অর্থনীতি-ব্যাংকিং বিষয়ে গ্রন্থ তিনটি ও প্রবন্ধগ্রন্থ একটি। তাঁর অনূদিত জীবনানন্দের সাহিত্যিক জীবনী অনন্য জীবনানন্দ গ্রন্েথর জন্য তিনি ‘আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার ২০১১’ লাভ করেন।
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
Shotabdi Bhattacharjee
০৪ Feb, ২০২৩ - ১১:৩১ AM
প্রায় বছরখানেক আগে কিনে রাখা বইটা আমি হাতে নিতে বরাবরই সাহসের অভাবে ভুগেছি। কারণ, যতবার আমি জীবনানন্দ সম্পর্কে পড়েছি তা সুনীলের কলমে হোক কিংবা শাহাদুজ্জামানের কিংবা আকবর আলি খানের, ভেতরে ভেতরে বারবারই আমার অশ্রুপাত হয়েছে। মনে হয়েছে, একজন আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ মানুষের এক ধরনের ঘোড়ারোগ পেয়ে বসেছিল, কবিতার ঘোড়ারোগ, যা তাঁর আশেপাশের সাধারণতর মানুষের চোখে করে তুলেছিল খেয়ালী। একজন বিবাহিত কবি, দুটি সন্তানের জনক, একজন অসহানুভূতিশীল স্ত্রীকে নিয়ে জীবনযাপন করছেন, একটু ভালো আবাসন, একটু ভালো টিকে থাকার জন্য বারবার এর ওর দ্বারে ফিরছেন, একটু ভালো চাকরির আশায়, যেন তাঁর জীবিকার সমস্যাটা মিটে গিয়ে তিনি নিশ্চিন্তে লিখতে পারেন। তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনের শেষ কয়েকদিন ছাড়া প্রায় সবসময়ই তাঁকে তাড়া করে ফিরেছে অনিশ্চয়তা, অভাব এবং নিঃসঙ্গতা। তাঁর অমিশুক স্বভাব, ভাবুক মানসিকতা, শিল্প এবং কাব্যে যাঁর অন্তর নির্লিপ্ত থাকতে পারেনি আদৌ, কিন্তু বাইরের চেহারায় চরম উদাসীনতা, সেই মানুষটিকে মানসিকভাবে আশ্রয় বা বন্ধুত্ব কে দিয়েছিলেন? বুদ্ধদেব বসুর জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জীবনানন্দকে স্বীকৃতি দেওয়া, কিন্তু বন্ধু কি তিনি ছিলেন? না, সম্ভবত। ওদিকে শনিবারের চিঠির মুহূর্মুহু কটূক্তি, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে কিঞ্চিৎ বিরক্তি উপহার! সব মিলিয়ে কবি এগুবেন, একা একা, এটা অনুমিতই হয়ে গিয়েছিল। তিনি জীবনী লিখে যাননি। কিন্তু তাঁর কবিতা এবং উপন্যাস তাঁকে আমাদের চোখে জীবন্ত করে রাখে। মৃত্যুর পর প্রভূত স্বীকৃতি, আলোচনার পর আলোচনা, এক যুগের কবিকুলের কাছে মোটামুটি গুরুপিতা আসন পাওয়া এই কবিটি জীবিত অবস্থায় কী পেয়েছিলেন? কবিকে চেনা যায় তাঁর 'বোধ' কবিতার লাইনে। ' সকল লোকের মাঝে ব’সে আমার নিজের মুদ্রাদোষে আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা? আমার পথেই শুধু বাধা?' আরেকটি কবিতা উনিশশো চৌত্রিশের, এই গ্রন্থে অনালোচিত, কবিকে চেনার জন্য আমার চোখে এক অন্যতম কবিতা। 'আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না; আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে, পৌঁছে অনেকক্ষণ বসে অপেক্ষা করবার অবসর আছে। জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা অন্য সবাই বহন করে করুক; আমি প্রয়োজন বোধ করি না : আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে নক্ষত্রের নিচে।' এক আজীবন নিঃসঙ্গ কবি, অযথা নির্জনতম আখ্যা নিয়ে চলে গেলেন, যিনি নিজে সচেতন ছিলেন তাঁর প্রতিভা সম্পর্কে। এই বেদনা কখনো ঘুচবার নয়, মৃত্যুর পর যতই আলোচিত হন না কেন তিনি! তাঁর আত্মজৈবনিক উপন্যাসগুলো, যেমন মাল্যবান, জলপাইহাটিতে চরিত্রগুলো যতটা না পরিশীলিত, সুতীর্থতে তেমনই অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ক্লিনটন বি সিলির মত। হয়তো তাই, হয়তো জীবনানন্দ নিজেকে এক অসামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থাতেই ফেলতে চেয়েছিলেন, হয়তো তাঁর জীবন তাঁর কাছে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। ফারুক মঈনউদ্দীন এর অনবদ্য অনুবাদে ক্লিনটন বি সিলির এই অমর গ্রন্থ জীবনানন্দকে দেখায় তাঁর সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষ হিসেবে। প্রথমা প্রকাশিত বইয়ের ব্যপ্তি ৩৫৬ হলেও, অনেকখানি দখল করেছে নির্ঘণ্ট এবং পাদটীকা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের নাম জানতে পারলাম। বর্ষার দিনে এমন মন খারাপ করা একটি সাহিত্যিক পাঠ জীবনানন্দকে করে দিল হৃদয়ের আরেকটু কাছের। #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা