নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ওফাতের পর ধীরে ধীরে ইসলাম আরব ভূখণ্ডের বাইরে প্রসার হতে থাকে। দ্বিতীয় খলিফা উমরের (রাঃ) হাত ধরে ভূখণ্ডগতভাবে মুসলিমরা মক্কা থেকে অনেকদূর পর্যন্ত এগিয়ে যায়-বলা হয়ে থাকে তিনি প্রায় অর্ধেক পৃথিবী শাসন করেছিলেন। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক বা বৌদ্ধিক স্থানে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইসলামকে তখনও পরিপূর্ণরূপে পাইনি। বলতে গেলে বুদ্ধিবৃত্তিক অংশের শুরুটা হয় মূলত উমাইয়াদ খেলাফতের মধ্য দিয়ে। যেখানে তাবেইন হাসান আল বাসরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্র। তিনি ‘বুদ্ধির স্বাধীনতা’ নিয়ে খুবই খোলামেলাভাবে উমাইয়াদ খলিফাদের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন, যদিও তিনি ছিলেন উমাইয়াদ খলিফাদের একজন কর্মচারি। তাঁর রিসালা তখনকার ‘রাষ্ট্রীয়’ আইন তৈরিতে বা প্রণয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। তিনি হয়তো উমাইয়াদের সংশোধন করতে সম্পূর্ণ সফল হননি তবে তাঁর এই ‘বুদ্ধির স্বাধীনতা’ তত্ত্বের পরম্পরায় জন্ম হয় সুদূর প্রসারি কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক গোষ্ঠীর। যেমন-মুতাজিলা, আশারিয়া, কাদেরিয়া, ইখোয়ানুস-সাফা ইত্যাদি। এই গোষ্ঠীর মাধ্যমে আমরা পাই আল কিন্দী, মায়মুন, ইবনে ফারাবি, খোয়ারিজমি, ইবনে সিনা থেকে ইমাম গাজ্জালি কিংবা ইবনে রুশদ্ বা ইবনুল আরাবীদের মতো মহারথীদের। সেই প্রজন্ম যেটা করেছে তা হলো-প্রাচীন গ্রীক দর্শনকে ব্যাপক অনুবাদের মাধ্যমে এবং নিজস্ব ইসলামী ঐতিহ্যের দর্শনকে পাশাপাশি রেখে আলোচনা চালিয়েছে। যার মধ্য দিয়ে দর্শন, বিজ্ঞান, তর্কশাস্ত্র, জোতির্বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, জ্যামিতি ইত্যাদির প্রভূত উন্নতি সাধন করে প্রাচীন জ্ঞানগত জায়গাকে বাঁচিয়ে রেখেছে তাঁরা, যা পরবর্তিতে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রেখেছে ইউরোপের উত্থানে। এই বুদ্ধিবৃত্তিক গোষ্ঠীর অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেন ইবনে সিনা, দ্যা প্রিন্স অব ফিজিসিয়ান্স-এই প্রিন্সকে গভীর থেকে জানার সুযোগ আমাদের দেশে খুবই কম। বইয়ের অপ্রতুলতা যার অন্যতম কারণ। আমার জানামতে, বড়জোর বাংলায় দুটি বা তিনটি বই পাওয়া যাবে ইবনে সিনাকে নিয়ে। যা পড়ে আসলে ইবনে সিনার বিষয়ে ক্ষুদ্রই জানা যায়। তাঁর কর্ম ও জীবন নিয়ে জানতে হলে এই দু’একটি বই আসলে যথেষ্ট নয়। তাকে নিয়ে বিস্তর জানতে গেলে আমাদের দেশে খুবই বাইনারি কিছু প্রশ্নের সন্মুখীন হতে হয়, ‘ইবনে সিনা আস্তিক, নাকি নাস্তিক?’ যা একজন ব্যক্তিকে জানার প্রক্রিয়ায় বেশ অন্তর্ঘাতি ‘প্রি-ডিটারমাইন্ড’ মনোভাব তৈরিতে ভূমিকা রাখে। মানে তিনি যদি ‘নাস্তিক’ হন তাহলে তাঁকে ‘পড়া যাবে না’ বলবে এক শ্রেণি, আবার তিনি যদি ‘আস্তিক’ হন তাহলেও পূর্বানুমান বা পূর্ব ধারণা নিয়েই তাকে পড়া শুরু করতে হবে। যা একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ত্বকে জানার ক্ষেত্রে খুবই বিপদজনক প্রক্রিয়া।
বইয়ের বিবরণ
- শিরোনাম লাইফ অব ইবনে সীনা
- লেখক রাফসান জানি, ইবনে সীনা (অনুবাদক)
- প্রকাশক গ্রন্থিক প্রকাশন
- আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৯৫৪০৭-১-৭
- প্রকাশের সাল ২০২১
- দেশ বাংলাদেশ
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।