সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতি নিয়ে এই সংকলন; সুরভিত স্মৃতিসূত্রে এসেছে তাঁর সৃষ্টির সারগর্ভ বিশ্লেষণও। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে এই বই বাংলাদেশের বিনীত শ্রদ্ধার্ঘ্য।
বইয়ের বিবরণ
সত্যজিৎ রায় তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন ও অজস্র-অনন্য সৃজনকর্মে বাংলা-ভারত পেরিয়ে নিজের নামকে বিস্তৃত করেছেন বিশ্বজুড়ে। তাঁর শিকড় পূর্ববঙ্গে অর্থাৎ আজকের এই বাংলাদেশে। বাংলাদেশে তিনি এসেছেন শৈশবে এবং পরিণত বয়সে, বলেছেন পূর্বপুরুষের স্মৃতিমাখা এই ভূখণ্ডের কথা। এখানকার সৃষ্টিশীল মানুষেরা তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে, নানা কর্মসূত্রে। প্রয়াত ও জীবিত সেই সব মানুষ স্মৃতির অক্ষরে এঁকেছেন তাঁদের একান্ত আপন সত্যজিৎ রায়কে। সঙ্গে আছে তাঁর চলচ্চিত্র ঘিরে অনুভূতির বয়ান এবং বাংলাদেশে তাঁর শিকড়ের সন্ধান। সত্যজিতের নিজের রচনার সংযোজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ঘিরে স্মৃতির দখিন দুয়ার খোলার পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক আলোকচিত্রগুচ্ছে পাঠকের কাছে ভাস্বর হবে বিশেষ এক সত্যজিৎ রায়ের ছবি। এই বই জন্মশতবর্ষে এক শ্রেষ্ঠ বাঙালির প্রতি বাংলাদেশের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
- শিরোনাম সত্যজিৎ স্মৃতি
- লেখক পিয়াস মজিদ (সম্পাদক)
- প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
Shotabdi Bhattacharjee
০৪ Feb, ২০২৩ - ১১:৩৩ AM
সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে সত্যজিৎকে নিয়ে নানাবিধ আয়োজন। সেই আয়োজনেরই একটি অংশ এই বইটি। সত্যজিৎ এর আদি বাড়ি যে বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের মসূয়া গ্রামে সেটা কে না জানে! সেই বাংলাদেশকে নিয়ে সত্যজিৎ এর স্মৃতি, বাংলাদেশে সত্যজিৎ এবং বাংলাদেশের নানা গুণীজনের সত্যজিৎ সান্নিধ্যের স্মৃতিমালা নিয়ে রচিত হয়েছে বইখানা। সংকলন এবং সম্পাদনায় ছিলেন পিয়াস মজিদ। শেষ পাতে ডেজার্ট হিসেবে সত্যজিৎ এর আদিবাড়ি নিয়ে তাঁর লেখা একটি ছোট্ট নিবন্ধ ও রয়েছে। শুরুতেই রয়েছে বাংলা সাহিত্যের প্রথিতযশা দুই কবি শামসুর রাহমান এবং বেলাল চৌধুরীর সত্যজিৎকে নিয়ে রচিত কবিতাদ্বয়। তারপর একে একে স্মৃতির ঝাঁপি উপুড় করেছেন সৈয়দ শামসুল হক, ববিতা, সৈয়দ হাসান ইমাম, আমানুল হক, মতিউর রহমান, সাইদা খানম, লুৎফর রহমান লিটন, সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, কাইয়ুম চৌধুরী এবং সেলিনা হোসেন। ঢাকায় শহীদ দিবস উপলক্ষে সত্যজিৎ এর বক্তৃতাটিও রয়েছে বইটিতে। আসলে প্রতিটা লেখাই আগে কোথাও না কোথাও পড়া ছিল, দু তিনটি বাদে। কিন্তু সত্যজিৎ এত প্রিয়, এত কাছের যে তাঁকে নিয়ে কোন লেখা তাঁর লেখার মতোই বারবার পড়তে ক্লান্তিবোধ হয় না। সেলিনা হোসেনের রচনাটিতে সেলিনা হোসেনকে লেখা চিঠি তিনটিও সংকলিত হয়েছে। অরুণেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এর সাথে আলাপনে সত্যজিৎ এর অশনি সংকেত এ অভিনয়ে ববিতার অভিজ্ঞতাটা পড়তে খুব ভালো লেগেছে। সম্ভবত এই লেখাটা আগে কোথাও পড়িনি। আরেকটি লেখা পড়ে খুব মজা পেয়েছি। লুৎফর রহমান রিটন এর কলমে তাঁর এবং আলী ইমাম এর সত্যজিৎ দর্শনের অভিজ্ঞতা! বইটিতে দুটো ভুল নজরে এল, সম্ভবত সেগুলো লেখকদেরই বলে শুধরানো হয়নি। সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী সত্যজিৎ এর সাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গে লিখেছেন, 'তার মধ্যে পঁচানব্বই শতাংশই সাহিত্যনির্ভর (কাঞ্চনজঙ্ঘা, নায়ক, অশনি সংকেত, সোনার কেল্লা, জয় বাবা ফেলুনাথ, হীরক রাজার দেশে ছাড়া)' এখানে অশনি সংকেত তো বিভূতিভূষণের উপন্যাস থেকে বটেই, একই সাথে সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ সত্যজিৎ এর নিজের লেখা হলেও, আগে সেগুলোর উপন্যাস আসে, পরে চলচ্চিত্র, কাজেই এ কটাও আসলে সাহিত্যনির্ভরই। অপরদিকে সৈয়দ হাসান ইমাম স্মৃতিকথনে বলছেন, ঘরে বাইরের সন্দীপ চরিত্রটি তাঁকে দিয়ে করাতে চাইছিলেন সত্যজিৎ, যাতে পরে অভিনয় করেন ভিক্টর ব্যানার্জি। কিন্তু সন্দীপ চরিত্রে আসলে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বইটিতে সংযোজিত হয়েছে অনেক ছবি, যেগুলো স্মৃতিকাতরতা উসকে দেয়। শহীদ কবীরের অনবদ্য প্রচ্ছদে বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সত্যজিৎ এর সকল স্মৃতি একত্রে সংগ্রহ করার জন্য এই সংকলনটি সত্যিই কৃতিত্বের দাবিদার। #প্রথমাডটকম_কথাপ্রকাশ_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা