রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি

লেখক: মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

বিষয়: রহস্য–রোমাঞ্চ, গোয়েন্দা ও ভৌতিক, দ্বিতীয় দরজা

৩২৫.০০ টাকা ৩৫% ছাড় ৫০০.০০ টাকা

বইয়ের বিবরণ

  • শিরোনাম রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি
  • লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
  • প্রকাশক বাতিঘর প্রকাশনী
  • আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৮৭২৯৭৫৫
  • প্রকাশের সাল ২০২০
  • বাঁধাই Hardcover
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৭২
  • দেশ বাংলাদেশ
  • ভাষা বাংলা

আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

এই লেখকের আরও বই
এই বিষয়ে আরও বই
আলোচনা ও রেটিং
৪(১)
  • (০)
  • (১)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
আলোচনা/মন্তব্য লিখুন :

আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন

মাহরীন হক মোহো

২৮ Feb, ২০২৩ - ৭:০০ PM

❝বইয়ের চেয়ে শক্তিশালী ও পুষ্টিকর খাবার এখনো আবিস্কার হয়নি❞ কথাটি নির্ভেজাল সত্য। একজন বইপ্রেমী কিংবা আনাড়ি ও এটা অন্তর থেকে মানতে বাধ্য যে বইয়ের মতো শক্তিশালী কিছুই নেই। একটা বই যতটা দেহে মনশক্তি যোগাতে সক্ষম তেমনি কিছু ক্ষেত্রে দেহাংশেও কিন্তু শারীরিক শক্তি যোগাতে সক্ষম। কি অবাক হচ্ছেন তো? লেখক নাজিম উদ্দীন সাহেব এটাই কিছুটা ঘুরিয়ে মূল রহস্যের পর্দা উঠিয়েছেন “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি” উপন্যাসে। ❝খিদের কাছে সব পরাজিত হয়। সবার আগে পরাজিত হয় স্বাদ-রুচি। তারপর যুক্তি-বুদ্ধি, সভ্যতা, মানবিকতা❞ ⚫গল্পসংক্ষেপঃ মফস্বল শহর সুন্দরপুর। ছবির মতই সুন্দর। প্রকৃতির শোভা ছাড়া উল্লেখযোগ্য আর কিছু নেই বললেই চলে, কিন্তু সবাই জানে রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেন নি! কেন আসেননি, তারচেয়েও বড় কথা কেন অনেকেই সেখানে ছুটে আসে! এক আগন্তুক এসে হাজির হল সেই সুন্দরপুরে। তার গতিবিধি অস্পষ্ট আর রহস্যময়। সে যেটা জানতে চায় সেটা ওখানকার খুব কম লোকেই জানে। আর যখন সেটা জানা গেল তখন বেরিয়ে এল রোমহর্ষক এক কাহিনী। পরিহাসের ব্যাপার হল সেই রোমহর্ষক কাহিনী কাউকে বলার মত সুযোগ সত্যি কঠিন। ⚫পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ- আচ্ছা ধরুন খাবারের স্বাদ গন্ধে যদি মানুষ হারিয়ে যাওয়ার রহস্য মিশে যায় মনের মাঝে কিন্তু একটু না একটু অন্য চিন্তা আসবেই। উক্ত উপন্যাসেও তার ব্যতিক্রম নয়। রহস্যময় ভাবে হারিয়ে যুবক তদন্তের ফলাফলে একদিকেই তাক করে আর তা হলো রহস্যময় এক নারীর খাবারের রেস্তোরাঁ। ▪️বাংলা মৌলিক উপন্যাসে এমন ভিন্নধর্মী থ্রিলার আসলেই তেমন দেখা যায় না। উপন্যাসের প্লটের ধারাবাহিকতা যেমন সুদূর চিলির কাহিনীর প্রেক্ষাপটে সাজিয়েছেন লেখক তেমনি প্রতিটি পর্বের শেষ মুহূর্তে কি হবে এমন সাসপেন্স তৈরি করেছেন।পাঠক নিজ উদ্যোগে পুরোটা উপন্যাস পড়ার ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় সাসপেন্স, টুইস্ট আর হরর ধাঁচের বিশ্লেষণধর্মী বর্ণনা উপভোগ করবেন। উপন্যাসের পছন্দের কেন্দ্রীয় চরিত্র সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর ছিলো মুসকান জুবেরী। ক্যানিবালিজম আসক্ত, উদ্দেশ্য – অমরত্ব অর্জন এতসব থিমের প্রেক্ষাপট কিংবা গল্পের বুনট আরো শক্ত হতে হয়। পুলিশ কিংবা ডিটেকটিভ ক্যারেক্টারে আরো ভিন্নতা আনতে হয় লেখক বেশ স্পষ্টতা ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন। ▪️একটা উপন্যাসে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মাঝে গল্পে থাকা চরিত্র গুলো গল্পের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। গল্পের বুনট যতই রহস্য, সাসপেন্স ও কনফ্লিক্টের ছাঁচে গড়া হোক না কেনো যদি সেখানে চরিত্রের বুনট শক্ত না হয় গল্পের খেই পুরো উপন্যাস পড়ার আগেই আগ্রহ চলে যায়। সেক্ষেত্রে “রবীন্দনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি” বইটিতে কিছু চরিত্র গুলো খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। একটা থ্রিলার জনরার উপন্যাসে সবচেয়ে মজবুত চরিত্র হতে হয় প্রধান চরিত্রকে। রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি উপন্যাসে এই চরিত্রকেই সবচেয়ে আধো আলো আধো ছায়াতে রেখেছেন বলা যায়। গল্পের শুরু থেকে শেষ অব্দি কাহিনী ঘুরপাক খায় মুসকান জুবেরীর চরিত্রের বুনটের মাধ্যমে। একই সাথে ভিলেন হিসেবে উপন্যাসে উপস্থাপন করার পরও কিছুটা অসহায় অর্থাৎ বাস্তবতার কঠোর প্রলাপে যেনো ছাড় পাইনি ভিলেন রুপী মুসকান জুবেরী ও। ❝মানুষ শব্দকে ছয়টি সুরে বেঁধেছে;স্বাদকে টক-ঝাল-মিস্টি, নোনতা আর তেতো পাঁচটি ভাগে আলাদা করেছে; স্পর্শ হচ্ছে স্থূল ইন্দ্রিয়, যেমন- গরম-ঠান্ডা, নরম-কোমল, শক্ত-তরল-বায়বীয় এর বাইরে কোনো অনুভূতি নেই। কিন্তু গন্ধের বেলায় মানুষ বিপাকে পড়ে গেছে। গন্ধ কয় প্রকার- কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না।প্রকৃতির প্রতিটি গন্ধেরই আলাদা আলাদা স্বাদ আছে। একটি গন্ধ আরেকটি গন্ধের সাথে মেশানো যায়; একটি স্বাদের সাথে আরেকটি স্বাদেরও মিশ্রণ হয়।❞ ▪️উপন্যাসে আরেকটা সবচেয়ে শক্তিশালী চরিত্র হওয়ার দরকার ছিলো তা হচ্ছে নূরে ছফা। কিন্তু তার চরিত্র অনেকটা বেখেয়ালি ভাবেই তৈরি করা হয়েছে মনে হয়েছে। উপরমহলের প্রোঢ় খাওয়া নূরে ছফা সব কেসেই সফলতা পাবার পর ও মুসকান জুবেরীর কেসে অপরিপক্বতা প্রকাশ করেছেন। তার চিন্তাধারাও কেমন যেনো দূর্বলতা দেখানো হয়েছে। যখন শেষাংশে মুসকান জুবেরীর সাথে কথা বলছিলো তখন কেমন জানি মিইয়ে যাওয়া চরিত্র ফুটে উঠেছে যেটা আসলে খাপছাড়া মনে হয়েছে। ▪️উপন্যাসের মাঝে কিছু পারিপার্শ্বিক চরিত্র থাকে যা উপন্যাসের প্রাণ সবিস্তারে তুলে ধরে। এই উপন্যাসে আতর আলীর চরিত্রটা তেমন। যেন বাস্তবে আতর আলীর চরিত্রটা দেখছি। তার পান খাওয়া, যেখানে সেখানে পানের পিক ফেলে বাঙালীয়ানের মতো কথা বলা,খুব সুন্দর করে চরিত্র টা ফুটে উঠেছে। ▪️থ্রিলার গল্পে সাধারণত দেখা যায় প্রতিটা ছোট বড় চরিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল গল্পের সাথে তাদের বেশ বড়সড় যোগ থাকে। সেই সূত্র মানতে গেলে এই গল্পে সৃষ্ট চরিত্র ফালুর গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ আমার অনেকবার মনে হয়েছে ফালু না থাকলে গল্পের প্লটের কোনো ক্ষতি হতনা। শুধুমাত্র ছমছমে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা ছাড়া তার তেমন কোনো ভূমিকা নেই। চরিত্রটা রহস্য রেখে শেষে এমন না দেখালেও হতো। ▪️লেখকের লেখনশৈলী বেশ ভালো ছিলো, প্রতিটি পর্বে লেখক মুশকানের উপস্থিতিতে বেশ কিছু রবীন্দ্র সংগীতের বিশ্লেষণ করেছেন। ব্যাপারটা খুব সুন্দর ছিলো। একটা ক্লাসিক অনুভূতি আসে পড়ার সময়। ★ ❝কোমল বাহুর ডোর ছিন্ন হয়ে যায়, মদিরা উথলে নাকো মদির আঁখিতে। কেহ কারে নাহি চিনে আঁধার নিশায়।❞ ★ ❝ঝরা পাতা গো, আমি তোমারি দলে। অনেক হাসি অনেক অশ্রুজলে ফাগুন দিল বিদায়মন্ত্র আমার হিয়াতলে...❞ ▪️বইয়ের বানান ও সম্পাদনা ভালো ছিলো।প্রচ্ছদটা বেশ সুন্দর। তাকালেই মনে হয় মুশকান জুবেরীর ছায়া। “মানুষের মন জয় করতে হলে আগে তার পেট জয় করা চাই” উল্লিখিত সংলাপটুকুর সারাংশই রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি। থ্রিলার ও ক্যানিবালিজমের মিশেলে গল্প যাদের পছন্দ তাঁদের ভালো লাগবে "রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি ” উপন্যাস।