বইয়ের বিবরণ
আবুল ফজল (১৯০৩-১৯৮৩) একাধারে ছিলেন সৃজনশীল সাহিত্যিক, প্রগতিশীল চিন্তাবিদ ও বরেণ্য শিক্ষাবিদ। চিন্তার স্বাধীনতা, যুক্তির প্রসার ও বুদ্ধির মুক্তি ছিল তাঁর সাহিত্য ও কর্মসাধনার মৌল ব্রত। কর্মে চিন্তায় ও সাহিত্য-সাধনায় তিনি আমৃত্যু সচেষ্ট ছিলেন মানস-মুক্তি তথা মানব-মুক্তির খোলা হাওয়া ছড়িয়ে দিতে।
আবুল ফজলের লেখাপড়ার ভিত্তি রচিত হয়েছে মাদ্রাসায়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলনে যোগ দিয়ে উদার মানবিকতা, মুক্তবুদ্ধি ও গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল চেতনায় উজ্জীবিত হয়েছিলেন তিনি। ব্রতী হয়েছিলেন বাঙালি মুসলমান সমাজে মানবিকতাবোধ ও যুক্তিবাদী চেতনার উজ্জীবন ঘটিয়ে বিশ্বের মানবধর্মের সঙ্গে তার সেতুবন্ধ রচনা করতে।
সাহিত্য-চর্চা ছাড়াও আবুল ফজল সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে প্রসারিত করেছেন অন্বেষু দৃষ্টি, পালন করেছেন সমাজভাবুকের দায়িত্ব, অবতীর্ণ হয়েছেন অকুতোভয় বিবেকী বুদ্ধিজীবীর ভূমিকায়। শাসকের রক্তচক্ষুকে ভয় পান নি। শোষণশীল রাষ্ট্রযন্ত্র ও প্রথাবদ্ধ ধর্ম যখন নিরঙ্কুশ আনুগত্য দাবি করতে চেয়েছে তখনও দায়বদ্ধ লেখকসত্তা নিয়ে তিনি প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
সাহিত্যিক জীবনে আবুল ফজল গল্প, উপন্যাস ও নাটক লিখেছেন। তবে তাঁর চিন্তাধারার সম্যক প্রকাশ লক্ষ করা যায় তাঁর প্রবন্ধ-সম্ভারে। সেখানে ঋজু ও ঋদ্ধ, সৎ ও সাহসী, মননশীল ও মানবতাবাদী এক মনীষীর চিন্তা-চেতনার সঙ্গে আমরা পরিচিত হই। তাঁর ভাবনার ক্ষেত্রও সীমিত নয়। সাহিত্য ও শিল্প, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, রাষ্ট্র ও রাজনীতি, ধর্ম ও বিশ্বাস, মানবকল্যাণ ও মানবমুক্তি-এমনি নানা বিষয়ে তিনি তাঁর ভাব-ধারণার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। সব ক্ষেত্রেই তাঁর ভূমিকা সমাজসচেতন, দেশব্রতী এবং দায়বদ্ধ লেখক ও ভাবুকের।
আবুল ফজল যে কেবল সমকালিক ছিলেন না, তাঁর চিন্তাধারা এখনও যে অনেক ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক, তার পরিচয় মিলবে এই গ্রন্থে।
- শিরোনাম শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ : আবুল ফজল
- লেখক ড. মাহবুবুল হক
- প্রকাশক কথাপ্রকাশ
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

ড. মাহবুবুল হক
জন্ম ৩ নভেম্বর ১৯৪৮। পৈতৃক নিবাস ফরিদপুর জেলার মধুখালী। ছেলেবেলা থেকে জীবন কেটেছে চট্টগ্রামে। দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। বাংলা একাডেমির বানান অভিধান ও প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রণয়নে ড. মাহবুবুল হকের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ গ্রন্েথর তিনি সহযোগী সম্পাদক ও লেখক। তাঁর প্রকাশিত বই চল্লিশটিরও বেশি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ বাংলা বানানের নিয়ম, নজরুল তারিখ অভিধান, বাংলা ভাষা: কয়েকটি প্রসঙ্গ, প্রবন্ধ সংগ্রহ ইত্যাদি। তিনি ফিলিপস পুরস্কার, মধুসূদন পদক, নজরুল সম্মাননা, মুক্তিযুদ্ধ পদক, চট্টগ্রাম একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন।