এ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে নকশালবাড়ির ঝাপটা এসে লেগেছিল। ১৯৬৮ সালে সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে তৈরি হয় পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন, যা পরে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টিতে রূপান্তরিত হয়। তরুণদের একটি বড় অংশ এই দলের সশস্ত্র রাজনীতির ধারায় শামিল হন। বাংলাদেশের সর্বহারা রাজনীতির তত্ত্ব, রূপকল্প ও কর্মসূচি এবং একঝাঁক মেধাবী তরুণের স্বপ্নযাত্রা ও স্বপ্নভঙ্গের গল্প এ বইয়ে তুলে ধরেছেন অনুসন্ধানী গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ।
বইয়ের বিবরণ
- শিরোনাম লাল সন্ত্রাস: সিরাজ সিকদার ও সর্বহারা রাজনীতি
- লেখক মহিউদ্দিন আহমদ
- প্রকাশক বাতিঘর
- বাঁধাই হার্ডকভার
- দেশ বাংলাদেশ
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

মহিউদ্দিন আহমদ
জন্ম ১৯৫২, ঢাকায়। পড়াশোনা গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। ১৯৭০ সালের ডাকসু নির্বাচনে মুহসীন হল ছাত্র সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিএলএফের সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দৈনিক গণকণ্ঠ-এ কাজ করেছেন প্রতিবেদক ও সহকারী সম্পাদক হিসেবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সুংকোংহে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মাস্টার্স ইন এনজিও স্টাডিজ’ কোর্সের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও অধ্যাপক। তাঁর লেখা ও সম্পাদনায় দেশ ও বিদেশ থেকে বেরিয়েছে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা অনেক বই। প্রথমা প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে ‘অপারেশন ভারতীয় হাইকমিশন’, ‘প্রতিনায়ক’, ‘জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’, ‘এক–এগারো’, ‘বাঙালির জাপান আবিষ্কার’, ‘বিএনপি: সময়-অসময়’, ‘বিএনপি : সময়-অসময়’, ‘আওয়ামী লীগ: উত্থানপর্ব ১৯৪৮-১৯৭০’, ‘এই দেশে একদিন যুদ্ধ হয়েছিল’, ‘আওয়ামী লীগ : যুদ্ধদিনের কথা ১৯৭১’। প্রথম আলোয় কলাম লেখেন।
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
Sharif Ainul Sohel
০১ Feb, ২০২৫ - ১২:১৯ AM

Md. Yaqub Ali
২১ Feb, ২০২৩ - ৬:৪৮ AM
বইটা মোট দুইটা পর্বে বিভক্ত। এছাড়াও শুরুতে আছে 'জীবনের গল্প' শিরোনামে লেখকের ভূমিকা। আর শেষে আছে 'ইতিহাসের এনাটমি' শিরোনামে লেখকের নিজস্ব কিছু বিশ্লেষণ। প্রথম পর্ব 'পূর্বাপর' এ লেখক বাংলাদেশে সর্বহারা রাজনীতির উৎস এবং বিবর্তন অনুসন্ধান করেছেন। আর দ্বিতীয় পর্ব 'তাহাদের কথা'তে লেখক সর্বহারা রাজনীতির সাথে যুক্ত এবং সহানুভূতিশীলদের নিজেরদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। ফলে বইটা হয়ে উঠছে বাংলাদেশের সর্বহারা রাজনীতির এক অকাট্য দলিল। সিরাজ সিকদারের জন্ম ১৯৪৪ সালে, শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার লাকার্তা গ্রামে। বরিশাল জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তিনি ১৯৬৩ সালে ঢাকায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটে ভর্তি হন। বুয়েটে পড়ার সময় সিরাজ সিকদার পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সংগঠক হন। ১৯৬৫ সালে সোভিয়েত ও চীনা লাইনে ছাত্র ইউনিয়ন বিভক্ত হলে তিনি চীনপন্থী অংশের সঙ্গে থাকেন। সিরাজ সিকদারের ব্যাক্তিমানস ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় তুলে ধরার জন্য লেখক দুটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন। সিরাজ সিকদারের উপলব্ধি হয়, মধ্যবিত্তসুলভ সনাতন খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। 'আমি' শব্দের অহংবোধ ছাড়তে হবে। জীবনে তিনি যত ছবি তুলেছিলেন, যেসব ছবি তাঁর সংগ্রহে ছিল, সব পুড়িয়ে ফেললেন। গোগ্রাসে গিলতে থাকলেন মাও সেতুংয়ের রচনা। সমাজের নানা অংশের মানুষের মধ্যে বৈষম্য তাঁকে পীড়িত করতো। দ্বিতীয় ঘটনাটি সিরাজ সিকদারের বিয়ের। তখন তিনি পড়েন থার্ড ইয়ারে। উনাদের বাড়িতে রওশন আরা নামের পনের-ষোল বছরের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়া কাজ করতেন। তাঁকে সেই কঠোর পরিশ্রম থেকে মুক্তি দিতে সিরাজ সিকদার বিয়ে করেন। এভাবেই তিনি বাস্তব জীবনে কমিউনিস্ট মূল্যবোধের প্রয়োগ শুরু করেন। ১৯৭৫ সালের ১লা জানুয়ারি চট্টগ্রামে গ্রেফতার হবার পর সিরাজ সিকদারকে অতি দ্রুত ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক হেফাজতেই তাঁর ওপর চালানো হয় অত্যাচার। বাংলাদেশে বিনা বিচারে বন্দি অবস্থায় 'ক্রসফায়ারে' নিহত প্রথম ব্যক্তি সিরাজ সিকদার। মাত্র ৩০ বছর দুই মাস ছয়দিন বেঁচেছিলেন। এটুকু সময়ের মধ্যেই তিনি সরকারের কাছে হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন 'মোস্ট ওয়ান্টেড'। বিপ্লব আর সন্ত্রাস মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। রাষ্ট্র যাদের সন্ত্রাসী বলে, তাঁরা দাবি করেন তাঁরা বিপ্লবী। সূর্য সেন থেকে সিরাজ সিকদার - এই পরিক্রমায় আছে হাজারো তরুণ। মানুষ কীভাবে তাঁদের মূল্যায়ন করবে? এটা নির্ভর করে যিনি দেখছেন তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির উপর।