হাইকমিশনার সমর সেনকে জিম্মি করার জন্য জাসদ-সৃষ্ট বিপ্লবী গণবাহিনীর ছয়জন তরুণ পঁচাত্তরের ২৬ নভেম্বর ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে অভিযান চালান। এটি ব্যর্থ হয়, নিহত হন চার তরুণ। ইতিহাসের টালমাটাল এই পর্বের রোমাঞ্চকর বিবরণ আছে এ বইয়ে। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে কয়েক স্বপ্নবান তরুণের জীবনের গল্প।
বইয়ের বিবরণ
১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর সকালে ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে বেধে যায় তুলকালাম। জাসদের তৈরি বিপ্লবী গণবাহিনীর একটি দল হাইকমিশনার সমর সেনকে জিম্মি করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে। পাল্টা আক্রমণে ঘটনাস্থলেই নিহত হন চারজন। দুজন আহত অবস্থায় ধরা পড়েন। কেন এই অভিযান? কীভাবে হলো এর আয়োজন? দেশে-বিদেশে কেমন হলো এর প্রতিক্রিয়া। এ নিয়ে অনেক দিন ধরেই আছে গুঞ্জন, বিভ্রান্তি ও বিক্ষিপ্ত আলোচনা। সাক্ষাৎকার ও নানান সূত্র ঘেঁটে ইতিহাসের এই টালমাটাল পর্বের একটি ছবি তুলে ধরেছেন অনুসন্ধানী গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে এই অভিনব, রোমাঞ্চকর ও বিপজ্জনক স্বপ্নযাত্রার অভিযাত্রীদের জীবনের গল্প।
- শিরোনাম অপারেশন ভারতীয় হাইকমিশন
- লেখক মহিউদ্দিন আহমদ
- প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
মহিউদ্দিন আহমদ
জন্ম ১৯৫২, ঢাকায়। পড়াশোনা গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। ১৯৭০ সালের ডাকসু নির্বাচনে মুহসীন হল ছাত্র সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিএলএফের সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দৈনিক গণকণ্ঠ-এ কাজ করেছেন প্রতিবেদক ও সহকারী সম্পাদক হিসেবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সুংকোংহে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মাস্টার্স ইন এনজিও স্টাডিজ’ কোর্সের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও অধ্যাপক। তাঁর লেখা ও সম্পাদনায় দেশ ও বিদেশ থেকে বেরিয়েছে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা অনেক বই। প্রথমা প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে ‘অপারেশন ভারতীয় হাইকমিশন’, ‘প্রতিনায়ক’, ‘জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’, ‘এক–এগারো’, ‘বাঙালির জাপান আবিষ্কার’, ‘বিএনপি: সময়-অসময়’, ‘বিএনপি : সময়-অসময়’, ‘আওয়ামী লীগ: উত্থানপর্ব ১৯৪৮-১৯৭০’, ‘এই দেশে একদিন যুদ্ধ হয়েছিল’, ‘আওয়ামী লীগ : যুদ্ধদিনের কথা ১৯৭১’। প্রথম আলোয় কলাম লেখেন।
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
Shaikh Mahmood
২১ Feb, ২০২৩ - ৫:১৪ PM
১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেনকে জিম্মি করার জন্য জাসদের বিপ্লবী গণবাহিনী হামলা চালায়। এই হামলায় ৬ সদস্যদের দল অংশ নেয়। পাল্টা হামলায় ৪ জন হামলাকারী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। দুইজন আহত অবস্থায় ধরা পড়েন। কেন এই হামলা, কিসের জন্য এই হামলা, হামলা পরবর্তী প্রতিক্রিয়া এইসব নিয়ে লেখা হয়েছে এই বই। এই বই লেখার সময় লেখকের কাছে দুইটি অপশন ছিল। এক. পুরো ঘটনা গল্প বা উপন্যাসের আকারে তুলে ধরা। দুই. প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান, যেসব তথ্য তিনি সংগ্রহ করেছেন তা হুবুহু তুলে ধরা। তিনি দ্বিতীয়টি বেছে নিয়েছেন। সবুজ, বেলাল, মাসুদ, বাহার, বাচ্চু, হারুন এই ছয়জন হামলায় অংশ নেয়। বেলাল ও সবুজ বেঁচে যায়। বাকিরা স্পট ডেড। এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে তারা অনেকদিন ধরে রেকি করেছিল ঢাকার অন্য একটি দূতাবাসে হামলা করার জন্য। শেষ মুহূর্তে কেন তাদের পরিকল্পনা বদলা করতে হলো, কার নির্দেশে ভারতীয় হামকমিশনারকে টার্গেট করা হলো তা পরিষ্কার না। লেখকও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাননি। আবার এত বড় ঘটনার পর ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কেন কোন মামলা করা হলো না তা প্রশ্ন জাগায়। এই ব্যর্থ হামলা নিয়ে জাসদের অভ্যন্তরেও অস্বস্তি দেখা দেয়। জাসদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাও এই হামলার পরিকল্পনার কথা আগে থেকে জানতেন না। অনেকে জাসদের তৎকালীন সিটি কমাণ্ডার আনোয়ার হোসেনকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করে। উনি নিজেও দায় স্বীকার করেন ও তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এই বইটি যখন আমি পড়ছিলাম তখন আমি ভাবছিলাম তৎকালীন জাসদের গণবাহিনী আর হালের জঙ্গিদের কর্মকাণ্ডের মাঝে পার্থক্য কি? বিশেষ করে আমার হলি আর্টিজান হামলার কথা মনে পড়ছিল। এই দুই দলের কাজকর্ম তো একই রকম মনে হয়। আদর্শ ভিন্ন কিন্তু কর্মপদ্ধতি একই! বইয়ে বিশেষ করে ভালো লেগেছে আয়েশা পারুলের স্মৃতিচারণ। উনি এমনভাবে লেখককে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন যা পড়ে মনে হয়েছে তার জীবনের গল্পগুলো যেনো চোখের সামনে ভাসছে। বইটিতে ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী এক অস্থির সময়ের গল্প খুঁজে পাই।