দারিদ্র্য জাদুঘরে যাবে কি না, দারিদ্র্যের প্রকৃতি ও উপসর্গের পরিবর্তন এবং দারিদ্র্য নিরসনের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই বইয়ে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে দারিদ্র্য নিয়ে চারটি জনপ্রিয় বিতর্ক বিশেষভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে। বিতর্কগুলো হলো ড. ইউনূস ও ক্ষুদ্রঋণ, ফজলে হাসান আবেদ ও বেসরকারি সংস্থা, আখতার হামিদ খান ও কুমিল্লা মডেল এবং দারিদ্র্য নিরসনে ইসলামী ব্যাংকের ভূমিকা। সাধারণ পাঠকের জন্য সহজ ভাষায় অর্থনীতির জটিল প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করেছেন জনপ্রিয় অর্থনীতিবিদ আকবর আলি খান।
বইয়ের বিবরণ
দারিদ্র্য নিয়ে সুসংবাদ রয়েছে, আবার দুঃসংবাদও রয়েছে। সুসংবাদ হলো ১৯৯০ সালে বিশ্বে ৫৫.১ শতাংশ মানুষ সহনীয় দারিদ্র্যরেখার নিচে ছিল; ২০১৫ সালে এই হার ২৬.৩ শতাংশে নেমে আসে। দুঃসংবাদ হলো ২০১৫ সালে পৃথিবীতে ১৯৩.৪ কোটি দরিদ্র ছিল। ১৯০০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ১৬৫ কোটি; ১৮০০ সালে ছিল ১০০ কোটি। সম্পূর্ণ দারিদ্র্য নিরসন এখনো অনেক দূরে। যাঁরা আশাবাদী, তাঁদের প্রত্যাশা হলো বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য নিমূর্ল হয়ে যাবে; দারিদ্রে্যর নিদর্শন শুধু বেঁচে থাকবে জাদুঘরে। যাঁরা আশাবাদী নন, তাঁরা মনে করেন যে শুধু বর্তমান অর্জনের ভিত্তিতে দারিদ্র্য নিরসনের চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা যাবে না। দারিদ্র্য নিরসনকে অতীতের প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে এবং ভবিষ্যতের দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখতে হবে। তাই এই বইয়ে দারিদ্রে্যর পরিমাপ ও সংজ্ঞা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। দারিদ্রে্যর সংজ্ঞার পরিবর্তনও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যারা ক্ষুধার্ত শুধু তারাই দরিদ্র নয়, আজকে যারা বেকার, তারাও গরিব। ধনবৈষম্যের ত্রিভুজের সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ মানুষও দরিদ্র। বইটি লেখা হয়েছে সাধারণ পাঠকের জন্য, দারিদ্র্য নিরসনের জন্য যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের জন্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে দারিদ্র্য নিয়ে যাঁরা পড়ছেন, তাঁদের জন্য। ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ, ফজলে হাসান আবেদের বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, আখতার হামিদ খানের কুমিল্লা মডেল এবং দারিদ্র্য নিরসনে ইসলামী ব্যাংকের ভূমিকার মতো বিতর্কিত বিষয়গুলো বক্তানিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করা হয়েছে।
- শিরোনাম দারিদ্র্যের অর্থনীতি: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
- লেখক আকবর আলি খান
- প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন
- আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৯৪৩৬৪০৯
- প্রকাশের সাল ২০২০
- মুদ্রণ 1st Published
- পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪৬৫
- দেশ বাংলাদেশ
- ভাষা বাংলা
আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।
আকবর আলি খান
জন্ম ১৯৪৪ সালে। ইতিহাসে অনার্স ও এমএ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ও পিএইচডি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন: পাকিস্তানি জান্তা তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থসচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ছিলেন, উপদেষ্টা ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। অর্থনীতি বিষয়ে তাঁর দুটি পাঠকপ্রিয় গ্রন্থ পরার্থপরতার অর্থনীতি এবং আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি। তাঁর Discovery of Bangladesh I Some Aspects of Peasant Behavior in Bengal বই দুটি দেশে-বিদেশে প্রশংসিত। তাঁর আরও দুটি উল্লেখযোগ্য বই Gresham’s Law Syndrome and Beyond I Friendly Fires, Humpty Dumpty Disorder and Other Essays। জীবনানন্দ বিষয়ে লিখেছেন চাবিকাঠির খোঁজে। তাঁর বাংলা রচনা সম্পর্কে কলকাতার দেশ পত্রিকার মন্তব্য, ‘এই লেখক লিখতে জানেন।’
আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন
MD.TOWFIQUL ISLAM
২৬ Feb, ২০২৩ - ৯:৩৬ AM
ইতিহাসবিদ হাওয়ার্ড জিন বলেছেন "গরিবের কান্না সবসময় ন্যায্য নয় কিন্তু তুমি যদি তা শুনতে না পাও তাহলে তুমি ন্যায্যতা কি তা বুঝতে পারবেনা।" বাংলাদেশে গত এক দশকে নানা বিষয়ে অসংখ্য গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে যদিও মানে কিংবা প্রভাবে সে সংখ্যা খুবই নগণ্য।তবে ভবিষ্যৎ আলোচনায় যে বইটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গবেষণার পাথেয় হয়ে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস ,সেই বইটি হল আকবর আলি খান রচিত "দারিদ্র্যের অর্থনীতি অতীত ,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ "। অর্থনীতির আলোচনায় দারিদ্র্য ,বৈষম্য সবসময় গুরুত্বপূর্ণ।অভিজিৎ বন্দ্যোপ্যাধায় ও এস্থার দুফলো "পুওর ইকোনমিকস " লিখে সম্প্রতি নোবেল পুরষ্কার অর্জন করেন। বাংলাদেশও দারিদ্র্য নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে কিন্তু বিষয়ের ব্যাপকতা ও গভীরতায় বইটি বাকিসব বইকে ছাড়িয়ে যায়। আকবর আলি খানের পাঠকেরা জানেন কিভাবে তিনি অর্থনীতির বিষয়কে আনন্দের আর মজার ছলে উপস্থাপন করেন ।আলোচ্য বইটি তার সহজাত বৈঠকি আলাপ ঘরনার থেকে আলাদা এবং বলা যায় পান্ডিত্যে গভীরতায় সবচেয়ে সিরিয়াস। তাই বলে কি তা অপাঠ্য বা জটিল হয়ে পড়ে? না বরং উল্টোটাই ঘটে।বইতে দারিদ্র্যকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা পাঠকের ভাবনার গভীরে চলে যায় খুব সহজে । আকবর আলি খান দারিদ্র্য এবং এর সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে তার ইতিহাস খুঁজে বের করেন। সেক্ষেত্রে তিনি তার সিগনেচার ভঙ্গিতে সাহিত্য আর প্রাচীন গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের ভেতর থেকে তথ্য নিয়ে পাঠকে রসময় করে তোলেন। এছাড়া তিনি দারিদ্র্যকে বর্তমান কাঠামোর ছায়ায় বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য এবং তার স্বরূপ আলোচনা করে বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি তুলে ধরেন।তবে বইটি অনন্য হয়ে উঠে যখন তিনি দারিদ্র্য মোকাবেলার নানা বৈশ্বিক ও দেশীয় প্রবণতা তুলে ধরে তার সমস্যা ও উত্তরণ নিয়ে কথা বলেন।বিশ্বব্যাংক ও তাদের এমডিজি-এসডিজি যেমন আলোচনা করেন অপরদিকে রাষ্ট্রের নানাবিধ সামাজিক কর্মকান্ড হয়ে এনজিও এবং ইসলামি ব্যবস্থায় সুদ ও ব্যাংকিক নিয়েও আলোকপাত করেন। তাই বর্তমান বইটি হয়ে উঠে লেখকের শ্রেষ্ঠ এবং বাংলাদেশের দারিদ্র্য গবেষণার একটা মাইলফলক গ্রন্থ। #প্রথমাডটকমকথাপ্রকাশবইরিভিউপ্রতিযোগিতা