৩২৬.২৫ টাকা ২৫% ছাড় ৪৩৫.০০ টাকা

এক  চাঁদনি থেকে নসিকে দিয়ে একটা শর্ট কিনে নিয়েছিলুম। তখনকার দিনে বিচক্ষণ বাঙালির জন্য ইয়োরোপিয়ন থার্ড নামক একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান ভারতের সর্বত্র আনাগোনা করত। হাওড়া স্টেশনে সেই থার্ডে উঠতে যেতেই এক ফিরিঙ্গি হেঁকে বললে, ‘এটা ইয়োরোপিয়নদের জন্য।’ আমি গাঁক গাঁক করে বললুম, ইয়োরোপিয়ন তো কেউ নেই। চল, তোমাতে-আমাতে ফাকা গাড়িটা কাজে লাগাই।’ এক তুলনাত্মক ভাষাতত্ত্বের বইয়ে পড়েছিলুম, বাংলা শব্দের অন্ত্যদেশে অনুস্বার যোগ করিলে সংস্কৃত হয়; ইংরেজি শব্দের প্রাদেশে জোর দিয়ে কথা বললে সায়েবি ইংরেজি হয়।’ অর্থাৎ পয়লা সিলেবলে অ্যাকসেন্ট দেওয়া খারাপ রান্নায় লঙ্কা ঠেসে দেওয়ার মতো— সব পাপ ঢাকা পড়ে যায়। সোজা বাংলায় এরি নাম গাঁক গাঁক করে ইংরেজি বলা। ফিরিঙ্গি তালতলার নেটিব, কাজেই আমার ইংরেজি শুনে ভারি খুশি হয়ে জিনিসপত্র গোছাতে সাহায্য করল। কুলিকে ধমক দেবার ভার ওরি কাঁধে ছেড়ে দিলুম। ওদের বাপখুড়ো, মাসিপিসি রেলে কাজ করে- কুলি শায়েস্তায় ওরা ওয়াকিফহাল। কিন্তু এদিকে আমার ভ্রমণের উৎসাহ ক্রমেই চুবসে আসছিল। এতদিন পাসপোর্ট জামাকাপড় যোগাড় করতে ব্যস্ত ছিলুম, অন্য কিছু ভাববার ফুরসত পাইনি। গাড়ি ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথম যে ভাবনা আমার মনে উদয় হল সেটা অত্যন্ত কাপুরুষজনোচিত— মনে হল, আমি একা। ফিরিঙ্গিটি লোক ভালো। আমাকে গুম হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বলল, ‘এত মনমরা হলে কেন? গোয়িঙ ফার?’ দেখলুম বিলিতি কায়দা জানে। ‘হোয়ার আর ইউ গোয়িঙ?’ বলল না। আমি যেটুকু বিলিতি ভদ্রস্থতা শিখেছি তার চোদ্দ আনা এক পাদরি সায়েবের কাছ থেকে। সায়েব বুঝিয়ে বলেছিলেন যে, ‘গোয়িঙ ফার?’ বললে বাধে না, কারণ উত্তর দেবার ইচ্ছা না থাকলে ইয়েস’ ‘নো’ যা-খুশি বলতে পার— দুটোর যে কোনও একটাতেই উত্তর দেওয়া হয়ে যায়, আর ইচ্ছে থাকলে তো কথাই নেই। কিন্তু ‘হোয়ার আর ইউ গোয়িঙ' যেন ইলিসিয়াম রো’র প্রশ্ন ফাঁকি দেবার জো নেই। তাই তাতে বাইবেল অশুদ্ধ হয়ে যায়।

পছন্দের তালিকায় রাখুন

বইয়ের বিবরণ

আলোর উৎস কিংবা ডিভাইসের কারণে বইয়ের প্রকৃত রং কিংবা পরিধি ভিন্ন হতে পারে।

এই লেখকের আরও বই
এই বিষয়ে আরও বই
আলোচনা ও রেটিং
৫(২)
  • (২)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
  • (০)
আলোচনা/মন্তব্য লিখুন :

আলোচনা/মন্তব্যের জন্য লগ ইন করুন

User

২৮ Feb, ২০২৩ - ১০:৫০ PM

মহাভারতের শল্যপর্বে কৌরবদের বিনাশ শেষে যুধিষ্ঠির জলমগ্ন দুর্যোধনকে হুঙ্কার দিয়ে বলল, আমাদের পঞ্চভ্রাতার মধ্য থেকে যে কাউকে বেঁছে নিয়ে যুদ্ধে আহবান করো। যদি বিজয়ী হও রাজ্য তোমার। স্বমিভানী দুর্যোধন ভীমকেই বেঁচে নিলেন এবং সমান প্রতিদ্বন্দিতা দিয়েও পরাজিত ও নিহত হলেন। তবে যদি সেখানে দুর্যোধন জানাতেন আমার বদলি একজন যোদ্ধা মাতুল দেশীয় আবদুর রহমান ভীমের মুখোমুখি হবে তবে মহাভারতের ইতিহাস খানিকটা বদলেও যেতে পারতো। অন্তত মুজতবা আলীর রচিত ভ্রমণ সংক্রান্ত দেশে বিদেশে গ্রন্থখানিতে আবদুর রহমানের বর্ণনা অনেকটা তেমনই এসেছে। সুদূর আফগানিস্তান থেকে সৈয়দ মুজতবা আলীর জন্য শিক্ষক হিসাবে যোগ দেবার জন্য সেদেশের সরকার কর্তৃক আমন্ত্রণ এলো। তখন লেখক বয়স মাত্র ২৩ বছর। তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন। ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ সাল অবধি 'কাবুল কৃষি কলেজে' ফারসি এবং ইংরেজি ভাষার শিক্ষক হিসেবে তিনি সেখানে কর্মরত ছিলেন। দেশে বিদেশে মূলত এই তিন বছর জুড়ে খানিকটা আফগানিস্তান আর অনেকটা কাবুলের বর্ণনা। কখনো সে বর্ণনায় এসেছে হেরিটেজের কথা, কখনো ইতিহাসের, আবার কখনো সামাজিক কাঠামোর আবার কখনো বন্ধুত্বের। বর্তমান সময়ে আমার মত যাদের বাসায় এসি নেই তারা জ্যেষ্ঠের দাবদাহের ভেতর বসে যদি সৈয়দ সাহেবের পেশোয়ার থেকে খাইবার গিরিপথ পাড়ি দেবার বর্ণনা পড়েন তবে আশ্বস্ত করে বলতে পারি বরফ পড়ছে অনুভূতি না দিলেও ভাগ্যিস বলে নিজের ভাগ্যকে সাধুবাদ জানাবেন। আগেই বলেছি মুজতবা আলী কিন্তু নিছক ভ্রমণের বই লিখেননি। আজ প্রায় ৯০ বছরের বেশি সময় পরেও আফগানিস্তানের এই অস্থিতিশীল যুদ্ধবাজ চেহারাটা বুঝতে হলে দেশে বিদেশে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। সেই সময়ের আফগান রাজা ছিলেন আমাউল্লা খান মাত্র কয়েক বছর আগে ১৯১৯ সালে ব্রিটিশদের হারিয়ে প্রথমবারের মত আফগানিস্তানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দেন। কানাঘুষা শোনা যায় এই যুদ্ধ ব্রিটিশরা অতোটা মন দিয়ে লড়েনি (অবশ্য লড়লেও সুবিধা করতে পারতো না)। আর যুদ্ধ শেষ হতেই বেশ আগ্রহ নিয়ে আফগানিস্তানকে স্বীকৃত দিয়ে দেয়। কারণ ব্রিটিশদের ঠিক করে দেয়া ব্রিটিশ ইন্ডিয়া (বর্তমান পাকিস্তান) এবং আফগানিস্তানের মাঝে সীমানা ছিল ডুরাল্ড লাইন। আর এই লাইনের মাধ্যমে ব্রিটিশরা খাইবারের বিরাট অংশ (পশতুন সংখ্যাগরিষ্ঠ) ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছিল যা ছিল ঐতিহাসিকভাবে আফগানিস্তানের অংশ। সৈয়দ মুজতবা আলী আমানউল্লা খানের রাজত্ব দুই বছরের কিছু বেশি সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছিল। তার মাঝে এই রাজার অনেক উদ্ভট এবং বাস্তবতা বিবর্জিত সংস্কার কার্যক্রম দেখে লেখক বিস্মিত এবং বিরক্ত দুটোই হয়েছিলেন। তবে প্রশংসাও করতে কার্পণ্য করেননি উপযুক্ত কাজের জন্য। এর ভেতর আমি বইয়ের বাইরে থেকে যোগ করছি সেটা হলো আমাউল্লা খান ছিলেন প্রথম কোন শাসক যিনি একাধিক নয় মাত্র একজন নারীকে স্ত্রী গ্রহণ করেছিলেন। দেশে বিদেশে বইয়ের শুরুতেই আছে আড্ডা। ট্রেনে বসে পাঠানি আড্ডা। পরেও আছে আড্ডার কথা। পাঠান, পশতুন, ইন্ডিয়ান, ব্রিটিশ, রাশিয়ান, ফরাসি কত রকম, কত রঙের মানুষের কথা। আবার আছে হরেক রকম বরফের বর্ণনা। পড়তে পড়তে চোখ বন্ধ করে কল্পনা করে নিতে হয় মাঝে মাঝে। মুজতবা আলীর বইয়ের একটা সমস্যা আছে। পিছনে লোহার ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে কেউ আর সামনে তরতর করে এগোতে গেলে পড়বে মাথা চাটি। যেতে হবে ধীরে পাথে। চারপাশে সব সৌন্দর্যে, সব চেহারায় চোখ বুলিয়ে। যদি গাছের নীচের একটু জমে থাকার বরফ চোখ এড়ালো তো আবার পড়বে চাটি। এই বইটা আমাকে ডাক্তার সাদমান হাসান উপহার দিয়েছিল আজ থেকে চার বছর আগে ২রা নভেম্বর, ২০১৬ সালে। এর ভেতর অন্তত বার পঞ্চাশেক ভেবেছি নিয়ে পড়ব। কিন্তু কিভাবে যেন ফসকে গেছে প্রতিবার। অবশেষে পড়লাম। ১৩ দিন ধরে ৩ বছর সৈয়দ সাহেবের সাথে কাবুল রইলাম। কখনো মন ভরলো কখনো মন ভাঙলো কিন্তু হিসাবে খাতায় শেষে রয়ে গেলে অমূল্য স্মৃতি। পানশিরের আবদুর রহমান আমি আপনাকে পেলে বলতাম, গদাযুদ্ধে ভীম আপনার কাছে পরাজিত হত কিনা জানি না তবে হৃদয় আর ভালোবাসার যুদ্ধে ভীমকে আপনি হারানো অন্তত একশটিবার।

Nabonita Pramanik

০৩ Feb, ২০২৩ - ১:৫৮ AM